দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী গায়টন ম্যাকেঞ্জি দেশটির জাতীয় ক্রিকেট দলকে আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে না খেলার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতি এক শক্তিশালী বার্তা দেবে।
এক বিবৃতিতে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আমি নৈতিকভাবে মনে করি, আফগান নারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য আমাদের একটি কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সাধারণত ক্রীড়াক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয় না, তবে আফগানিস্তানের বিষয়ে এটি একেবারেই দ্বৈত নীতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজ দেশের ইতিহাসে আমরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আজ যদি নারীদের প্রতি অন্য কোথাও একই অবিচার হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করা আমার পক্ষে নৈতিকভাবে অসম্ভব।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী পিটার হেইন ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (সিএসএ) প্রধান নির্বাহী ফোলেতসি মোসেকিকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লেখেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি ম্যাভেরিক-এ প্রকাশিত হয়।
চিঠিতে হেইন বলেন, ‘আফগান নারীদের খেলাধুলা থেকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের মৌলিক মানবাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, কাজের সুযোগ হারিয়েছে, এমনকি স্বাস্থ্যসেবারও অধিকার নেই। তারা এখন সৌন্দর্যকেন্দ্র, স্টেডিয়াম, পার্ক, এবং জিমেও প্রবেশ করতে পারে না। দক্ষিণ আফ্রিকা কি আফগান নারীদের হয়ে আইসিসির কাছে আওয়াজ তুলবে?’
ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে ‘নিন্দনীয়’ মনে করে এবং নারীদের ক্রিকেটের জন্য সমান সুযোগ চায়। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যেহেতু আইসিসির একটি টুর্নামেন্ট, তাই তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাটির নীতিমালার অধীনেই থাকবে।
সিএসএ-এর প্রেসিডেন্ট রিহান রিচার্ডস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আইসিসির সব সদস্যের সম্মিলিত অবস্থান গ্রহণ করা আরও কার্যকর হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আইসিসি ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় অব্যাহত থাকব, যাতে আফগানিস্তানে নারীদের ক্রিকেটের উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান এসএ২০ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া আফগান ক্রিকেটার রশিদ খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন লিগে খেলার সুযোগ পাওয়ায় আফগান ক্রিকেট এগিয়েছে। আমরা ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলাম, যা এক দশক আগে কেউ ভাবতেও পারত না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের নিজস্ব বড় কোনো লিগ নেই। কিন্তু বিভিন্ন দেশের লিগে খেলে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এর মাধ্যমেই আফগান ক্রিকেট উন্নতি করছে।’
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ১৬০ জন রাজনীতিবিদ যার মধ্যে জেরেমি করবিন ও নাইজেল ফারাজ—ইংল্যান্ডকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে না খেলার নীতি অনুসরণ করলেও আইসিসির টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা ২৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে ২১ ফেব্রুয়ারি করাচিতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ক্রীড়ামন্ত্রীর আহ্বানে তারা আদৌ অবস্থান পরিবর্তন করে কিনা।
মন্তব্য করুন