শেষ ওভারে ২৬ রান! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বর্ণযুগেও এমন চ্যালেঞ্জ জয় করা প্রায় অসম্ভব মনে হয়। তবে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান প্রমাণ করে দিলেন, ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে রংপুরের জয় নিশ্চিত করতে শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা ও তিনটি চারের সাহায্যে ৩০ রান তুলে নিলেন নুরুল। তার এই অসাধারণ ইনিংসে ভর করেই রংপুর ৩ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে বিপিএলে টানা ৬ ম্যাচ জিতে নিল।
১৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শেষ ওভারে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। স্ট্রাইকে ছিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান। বরিশালের পেসার কাইল মায়ার্সের করা সেই ওভারটি যেনো এক নাটকীয় রূপ নেয়। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের গতি পাল্টে দেন নুরুল। এরপর একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রংপুরকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হাসান জানালেন, শেষ ওভারে ম্যাচ জেতানোর আত্মবিশ্বাস তার শুরু থেকেই ছিল, ‘আগের ওভারে খুশদিল দুটি ছক্কা মেরেছিল, সে বলছিল ম্যাচটা সম্ভব। কামরুল ইসলাম রাব্বিও এসে বলেছিল, তুমিই শেষ বলগুলো খেলো। আমারও মনে হয়েছিল, ইনশাআল্লাহ ব্যাটে-বলে হলে জেতা সম্ভব। প্রথম বলেই ছক্কা মারতে পারার পর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।’
শেষ মুহূর্তে ম্যাচ বের করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা নুরুল হাসানের নতুন নয়। তবে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তার স্মৃতিতে এখনো গেঁথে আছে। অ্যাডিলেডে সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৬ ওভারে ১৫১ রানের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। শেষ ওভারে ২০ রান প্রয়োজন ছিল, নুরুল অপরাজিত ২৫ রান করলেও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যায় মাত্র ৫ রানে।
সেই স্মৃতি আজও তার মনে জাগ্রত, ‘ম্যাচ জেতানোর পরও ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচের কথা মনে পড়ছিল। এক ওভারে ২০ রান দরকার ছিল, আমি মনে হয় ১৫-১৬ রান করেছিলাম, কিন্তু দলকে জেতাতে পারিনি। আজ সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
শেষ বলে দুই রান প্রয়োজন থাকলেও বড় শট খেলার পরিকল্পনাই করেছিলেন নুরুল। তার ভাষায়, ‘আমি চাইনি এক-দুই রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করতে, আমি নিশ্চিত ছিলাম যদি বল জায়গায় আসে, তাহলে ওভার বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করব।’
এটাই কি তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস? নুরুল হাসান হেসে বললেন, ‘আমি যেখানে ব্যাট করি, সবাই খুব দ্রুত ভুলে যায়! অবশ্যই দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু দলকে জেতাতে পেরেছি, এটা সেরা ইনিংসগুলোর একটি।’
নুরুল হাসানের অবিশ্বাস্য ইনিংস শুধু রংপুর রাইডার্সকেই জয় এনে দেয়নি, বরং তার নিজের অতৃপ্তির কিছুটা হলেও ঘোচন করেছে। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জেতানো সম্ভব হয়নি, কিন্তু এবার তিনি শেষ বল পর্যন্ত থেকে দলকে জয় উপহার দিয়েছেন। বিপিএলের এই ম্যাচটি তাই শুধু রংপুর রাইডার্সের জন্য নয়, নুরুল হাসানের ক্যারিয়ারের জন্যও এক বিশেষ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন