‘আরে ট্রফি নেওয়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই’—ফাইনালের আগেই কথাটি বলেছিলেন রংপুর অধিনায়ক আকবর আলি। নিজের কথাই যেন রাখলেন তিনি। জাতীয় লিগের ফাইনালে দারুণ ছন্দে থাকা ঢাকা মেট্রোকে উড়িয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছেন তারা। শিরোপা জিতে ট্রফি নিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ‘সিউ’ সেলিব্রেশন করেছেন আকবররা। অধিনায়ক হিসেবে আকবর কি খুব ভাগ্যবান! ফাইনালে উঠলেই শিরোপাও জেতা হয়ে যায় তার! অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই সেরকমটা দেখাচ্ছেন তিনি। আকবর মনে করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, সাহসীদের ক্ষেত্রে ভাগ্য সহায়ক হয়।’
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় রংপুর। বোলারদের তোপের সামনে পড়ে ১৬.৩ ওভারে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে যায় ঢাকা মেট্রো। ৫২ বল বাকি রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় রংপুর। ৪ ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেটে ফাইনালসেরা হন মকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। ৯ ম্যাচে ১৯ উইকেটে টুর্নামেন্টসেরা বোলার হন রংপুরের পেস অলরাউন্ডার আলাউদ্দিন বাবু। ১০ ম্যাচে ৩১৬ রানে সেরা ব্যাটার হন ঢাকা মেট্রোর অধিনায়ক মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১০ ইনিংসে ১৩ উইকেট ও ব্যাটিংয়ে ১৬৪ স্ট্রাইকরেটে ১৫.৩৮ গড়ে ১২৩ রান করে টুর্নামেন্টসেরা হন ঢাকা মেট্রোর আবু হায়দার রনি।
শিরোপা জয় খুব সহজে হয়নি। এর পেছনে অনেক পরিশ্রম ও পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে রংপুর অধিনায়ক বলেন, ‘না! আসলে সহজ না। কঠোর পরিশ্রম আছে, পরিকল্পনা আছে। আমার কাছে মনে হয় সবথেকে বড় কথা হলো খেলোয়াড়রা মাঠের মধ্যে যেভাবে বাস্তবায়ন (পরিকল্পনা) করেছে; আমি একা কিছু করিনি—গ্রুপ হয়ে আমরা করেছি।’
শিরোপা জেতার পথটা রংপুরের জন্য মসৃণ করে দিয়েছে পেসাররা। মুকিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন বাবু, চৌধুরি রিজওয়ানদের তোপে দাঁড়াতে পারিনি ঢাকা মেট্রোর ব্যাটাররা। টুর্নামেন্টসেরা ব্যাটার নাঈম শেখও ফেরেন কোনো রান না করেই। পুরো দলের সর্বোচ্চ ১৪ রান সেটাও আসে শামসুর রহমান শুভর ব্যাটে। ৯ জনই ছুঁতে পারেনি দুই অঙ্ক। পেসারদের এমন তাণ্ডবকে আকবর বললেন জমিয়ে রাখা, ‘আমরা মনে হয়, পেস বোলাররা আমাদের পুরো টুর্নামেন্টেই খুব ভালো বোলিং করেছে। অসাধারণ পারফর্ম করেছে। কিন্তু আমার মনে হয় ফাইনাল ম্যাচের জন্য তারা সেরাটা রেখে দিয়েছিল। উইকেট থেকে যে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল, তারা ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমি বলব যে পেস বোলারদের জন্য আদর্শ উইকেট ছিল।’
অধিনায়ক হিসেবে আকবর ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও সাফল্য দেখালেন। দলের হয়ে পুরো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান স্কোরারও ছিলেন তিনি। নেতৃত্বের এত চাপ নিয়েও কীভাবে এমন ছন্দ ধরে রেখেছিলেন সেটা আকবর থেকেই শুনুন, ‘ক্যাপ্টেন্সি একটা আলাদা দায়িত্ব। আমি আগে ব্যাটার, পরে কিপার—এরপর অধিনায়ক।’
নেতৃত্বের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বাসিত নন আকবর। আরও উন্নতিতে চোখ তার, ‘এর মধ্যেও উন্নতির জায়গা আছে। যেগুলোই জিতেছি, আমরা বলব না শতভাগ দিতে পেরেছি। আরও উন্নতি করতে হবে।’
জাতীয় লিগের শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে দারুণ মৌসুম কাটালেন আকবররা। এবার তাদের সামনে প্রস্তুতির চোখ বিপিএলে। খুব বেশি বিশ্রামের সুযোগও পাচ্ছেন না তারা।
মন্তব্য করুন