ওয়ানডে ক্রিকেটে মোটামুটি মানের দল হলেও বাংলাদেশকে কখনোই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে ভালো দল বলা যাবে না। তবে এবার এই টি-টোয়েন্টিতেই দুর্দান্ত খেলা দেখাল লিটন দাসের দল। ক্যারিবীয়দের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর এবার স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, যা ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে জাকের আলীর দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ১৮৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে মাত্র ১০৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ফলে ৮০ রানের বিশাল জয়ে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবীয়দের প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।
১৯০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলেই ব্রান্ডন কিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাসকিন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি। উল্লেখ্য, সিরিজের সব ম্যাচেই কিংকে শিকার করেছেন তাসকিন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের প্রথম ওভারের মাঝেই নামে বৃষ্টি। তবে খেলা বন্ধ থাকে মাত্র ২০ মিনিট। খেলা পুনরায় শুরু হলে দ্বিতীয় ওভারেই আক্রমণে আসেন স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান। প্রথম ওভারেই তিনি উইকেট তুলে নেন। জাস্টিন গ্রিভস ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়তে হয়। এতে ৭ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা।
নিকোলাস পুরাণ ও জনসন চার্লস জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও মেহেদির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে কুপোকাত হন পুরাণ। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি, করেন ১০ বলে ১৫ রান। এরপর রোস্টন চেইসও ব্যর্থ; হাসান মাহমুদের বলে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন।
অপরপ্রান্তে টিকে থাকা চার্লসের ইনিংস শেষ হয় রান আউটের শিকার হয়ে। ১৮ বলে ২৩ রান করেন তিনি। দলীয় ৫০ রান পূর্ণ হওয়ার আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
এরপর রোভম্যান পাওয়েল ও গুড়াকেশ মতি ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। কেবল রোমারিও শেফার্ড লড়াই করার চেষ্টা করেন। তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩টি উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সেরা পারফরমার। তাসকিন আহমেদ ও মেহেদি হাসান দুটি করে উইকেট পেয়েছেন। এছাড়া তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ঝড়ো। ওপেনিংয়ে পারভেজ হোসেন ইমন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। লিটন দাসের সঙ্গী হয়ে প্রথম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন ইমন। তবে লিটন ১৪ রান করে আউট হলে ভাঙে জুটি। ইমনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ২১ বলে ৩৯ রান করে আউট হন।
তিনে নেমে তানজিদ তামিম ৯ রান করেই ফিরে যান। ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল ব্যাকফুটে চলে যায়। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের আলী হাল ধরেন। মিরাজ ২৩ বলে ২৯ রান করে আউট হন।
শেষদিকে জাকের আলী ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন। ৪১ বলে ৭২ রান করে তিনি অপরাজিত থাকেন, মারেন ৩টি চার ও ৬টি ছক্কা। তাকে সঙ্গ দেন তানজিম সাকিব, যিনি ১২ বলে ১৭ রান করেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং জাকেরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহজেই হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা।
মন্তব্য করুন