চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ আয়োজন নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে আইসিসি একটি জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। পাকিস্তানে আয়োজন হতে যাওয়া এই আসরে ভারত দল পাঠাতে অস্বীকৃতি জানালে পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠে। সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন বিতর্কে এক প্যানেলিস্ট প্রস্তাব দেন যে, ভারত অংশ না নিলে শ্রীলঙ্কাকে টুর্নামেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অপর একজন প্যানেলিস্ট পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটের বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য ভারত অপরিহার্য, কারণ ভারতের সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠানও এই টুর্নামেন্টের মূল অর্থায়ন করছে।’
১৯৯৬ সালের পর থেকে পাকিস্তান আর কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি। নিরাপত্তাজনিত কারণে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবার সেই ভাবমূর্তি বদলাতে চায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সফল আয়োজন করে দেশটির উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুতি প্রদর্শন করতে চায় পিসিবি। কিন্তু ভারত ছাড়া এই আয়োজন সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ইতিমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়েছে যে, রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে তারা পাকিস্তানে কোনো দল পাঠাবে না। এই অবস্থায় পিসিবির সামনে হাইব্রিড মডেল মেনে নেওয়ার একটি বিকল্প ছিল, যেখানে পাকিস্তান আয়োজক থাকলেও ভারতের ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করা হতো। কিন্তু পিসিবি এই মডেলকেও প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই সংকট নিরসনের জন্য আইসিসি এবং পিসিবির সামনে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। সম্ভাব্য তিনটি বিকল্প নিম্নরূপ:
১. পিসিবি যদি হাইব্রিড মডেল মেনে নেয়, তবে পাকিস্তানে দশটি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
২. চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সরিয়ে অন্য কোনো দেশে আয়োজন করা হলে পিসিবি টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।
৩. পুরো টুর্নামেন্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হতে পারে।
এই বিকল্পগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি গ্রহণের অর্থ পিসিবির জন্য বড় আর্থিক ক্ষতি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজক হিসেবে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হারানোর পাশাপাশি, টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ালে পিসিবির ওপর আইসিসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আইসিসির বার্ষিক অর্থায়ন থেকেও বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পিসিবির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের জন্য পিসিবি ইতোমধ্যে করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরের স্টেডিয়ামগুলো উন্নত করতে যে বিনিয়োগ করেছে, সেই অবকাঠামোগত উন্নয়নও অনিশ্চয়তায় পড়বে।
এদিকে, পাকিস্তানের সরকার স্পষ্টভাবে পিসিবিকে হাইব্রিড মডেল গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে পিসিবি সম্প্রতি আইসিসির কাছে বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আরও স্পষ্টতা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। পিসিবির অভিযোগ, বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে। তাদের দাবি, গত দুই বছরে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সহ বড় দলগুলো পাকিস্তান সফর করেছে। সুতরাং, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
পিসিবির মুখপাত্র সামি-উল-হাসান বলেন, ‘বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আইসিসির কাছে আমরা কিছু প্রশ্ন তুলেছি, বিশেষত কেন নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ আগে প্রকাশ করা হয়নি।’
উল্লেখ্য, আইসিসি সম্প্রতি লাহোরে অনুষ্ঠেয় ১০০ দিনের কাউন্টডাউন ইভেন্টও বাতিল করেছে, যা পুরো পরিস্থিতিকে আরও বিশৃঙ্খল করেছে।
এই দ্বন্দ্বে আইসিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সর্বজনবিদিত যে, বিসিসিআই ভারত সরকারের নির্দেশনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও আগে থেকেই জানিয়েছিলেন, ভারত পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেবে না। তবে আইসিসির জন্য এখন একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, যাতে টুর্নামেন্টের আয়োজনও হয় এবং অংশগ্রহণকারীদের স্বার্থও রক্ষা পায়।
মন্তব্য করুন