বাংলাদেশ বাজেভাবে এক একটা সিরিজ হারে, আর চারদিকে গেল গেল রব ওঠে। জিতলে উল্টোটাও হয়। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর যেমন হয়েছিল। চারদিকে প্রশংসার বন্যা। পরে ভারত সফরেই বন্যার পানি উধাও। এমন হার হারলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা, মনে হলো এর চেয়ে বাজেভাবে হারা কোনো পেশাদার টিমের পক্ষে সম্ভব নয়।
আর তখন প্রশ্নটা মনে আসে। বাংলাদেশ আদৌ টিম তো? টিম হলে তো তার পেশাদারিত্ব থাকে। টিমম্যানরা থাকেন, যারা হারের আগেই হেরে ভূত হয়ে যান না। অন্তত যে কোনো পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যান। এটা-ওটা বলে অজুহাতের পেছনে মুখ লুকাতে চান না।
যে কোনো সিরিজ হারের পরই যথারীতি বাংলাদেশ দল অজুহাত খোঁজে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের পরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। শান্তর অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা মেহেদী হাসান মিরাজ সিরিজ হারের পর শিশিরের প্রসঙ্গ তুললেন।
কী বলেছেন শুনুন, ‘আগের দুই ম্যাচে আমরা দেখেছি, উইকেটে স্পিন ধরছিল পরে। এজন্য আমরা টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছি। তবে উইকেট পরেও ভালো ছিল, ভালোভাবেই ব্যাট করা যাচ্ছিল এবং রাতে শিশিরও পড়েছিল। বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল। তবে অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা ভালো খেলেছে, বিশেষ করে গুরবাজ ও ওমারজাই সত্যিই ভালো খেলেছে। মাঝের ওভারগুলোয় আমরা উইকেট নিতে পারিনি। উইকেট নিতে পারলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।’
উইকেট নিতে পারলে যে ঘুরে দাঁড়াত বাংলাদেশ, সেটা পাগলেও বোঝে। প্রশ্ন হলো উইকেট নিতে পারেননি কেন? পেশাদার টিমে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। স্ট্রাইক বোলাররা সে কাজটা করেন। ফিল্ডাররা সাহায্য করেন। টিম গেম এমনই হয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেখা গেছে বোলার অনেক চেষ্টা করে ব্যাটারকে হয়তো ক্যাচ তুলতে বাধ্য করলেন; কিন্তু ফিল্ডার ড্রপ করলেন। একবার নয়, কয়েকবার এমন দৃশ্য দেখে গেছে। টিম গেমে যা অকল্পনীয়।
এবার ব্যাটারদের দিকে তাকান, দেখবেন টিমম্যান নেই। অন্তত বাজে শট খেলা দেখলে মনে হয় না যে, কমিটমেন্ট নিয়ে খেলতে এসেছেন।
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানদের ২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯২ রানে। শেষ ৮ উইকেট তারা হারিয়েছিল মাত্র ২৩ রানে। ২ উইকেটে ১২০ থেকে ১৪৩ রানে অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ২৫২ রান তুলে বাংলাদেশ জিতে যায় ৬৮ রানে।
এরপর সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সোমবার টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে এবং যথারীতি ব্যাটিং বিপর্যয় দিয়ে শুরু হয়। ৭২ রান তুলতে ৪ উইকেট হাওয়া। মাহমুদউল্লাহর ৯৮ আর মিরাজের ৬৬ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ তোলে ২৪৪ রান, যা রাহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরি আর আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের অপরাজিত ৭০ রানে ভর করে অনায়াসে পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান। সিরিজ জেতে ২-১-এ। ক্লিনিক্যাল রান চেজ বলতে যা বোঝায় আফগানরা তা-ই করেছে।
অন্যদিকে তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ। মিডল অর্ডার নড়বড়ে। ব্যাটাররা সেট হয়ে উইকেট ছুড়ে দিচ্ছেন। টিম গেমে এর চেয়ে দৃষ্টিকটু জিনিস আর দ্বিতীয়টি নেই।
সরি, খেলা দেখে তো বাংলাদেশকে টিম মনে হয় না। এদের কাছে তাই টিম গেমের আশা করাও বাতুলতা। টিমে ১১ জন টিমম্যান থাকতে হয়। যারা কাঁধে কাঁধ হাতে হাত রেখে লড়াই করে। সব ম্যাচ হয়তো জেতে না। তবে হারটা মর্যাদার হয়। আমাদের দলে টিমম্যানের বড় অভাব।
মন্তব্য করুন