বাংলাদেশের ক্রিকেট কিংবদন্তি সাকিব আল হাসান দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে চেয়েছিলেন তবে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের এই আশাটা পূরণ হচ্ছে না। তার নিরাপত্তার কারণেই আপাতত দেশে ফিরতে পারছেন না তিনি। যদিও বিদায়ী টেস্ট ম্যাচের জন্য তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল, তবে এখন তা অনিশ্চিত বলে নিজেই জানিয়েছেন সাকিব।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, ‘দেশে ফেরার কথা ছিল… কিন্তু এখন হয়তো ফিরতে পারব না সিকিউরিটি ইস্যুর জন্য, আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যই…’
তার এই বক্তব্যে হয়তো শব্দটি থাকলেও অতি নাটকীয় কিছু না হলে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সাকিব সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এখন সিদ্ধান্ত চূড়ান্তই বলতে পারেন।’
এটি বোঝায়, দেশের মাটিতে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার তার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে না। আর যদি কোনো বড় পরিবর্তন না আসে, তাহলে ভারতের বিপক্ষে কানপুরে খেলা ম্যাচটিই হতে যাচ্ছে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া শুরুতে সাকিব আল হাসানকে তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছিলেন। সাকিব পরে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে দুঃখপ্রকাশ করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন, যার পরেই বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়া উপদেষ্টার অবস্থানের কিছুটা নরম পরিবর্তন দেখা যায়।
সম্প্রতি ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, সাকিবের দেশে ফেরা বা পরবর্তীতে দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা দেখছেন না তিনি। এছাড়াও দেশের মাঠে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। এই ধারাবাহিকতায়, মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের জন্য ঘোষিত ১৫ জনের দলে ৩৭ বছর বয়সী সাকিবকে রাখা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়।
গত কয়েকদিন ধরে সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম এলাকায় প্রতিবাদী কর্মসূচি চলছে। তার দেশে ফেরা ঠেকাতে মিছিল, স্লোগান এবং নানা ধরনের প্রতিবাদ দেখা গেছে। স্টেডিয়ামের দেয়ালে গ্রাফিতি এবং স্লোগান লেখা হয়েছে, এবং সাকিবের ভক্ত ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। এমনকি বুধবার সাকিবের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
ফেসবুকে একটি ইভেন্টের মাধ্যমে সাকিবের দেশে ফেরার বিরোধিতা করা হয় এবং বৃহস্পতিবার বিসিবিতে স্মারকলিপি দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব আন্দোলন ও প্রতিবাদ সাকিবের দেশে ফেরাকে কঠিন করে তুলেছে। বিসিবির সূত্র অনুযায়ী, এসব কর্মসূচি ও নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে সাকিবকে আপাতত দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ঢাকায় অবস্থান করছে এবং মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছে। এই সময়ে স্টেডিয়ামের আশেপাশে প্রতিবাদ হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, যা দক্ষিণ আফ্রিকা দলের জন্যও উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ কারণেই সাকিবের দেশে ফেরা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এখন আইসিসির সভায় অংশ নিতে দুবাইয়ে আছেন এবং এই প্রসঙ্গে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাকিব আল হাসান সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে রুবেল হত্যা মামলায় নাম উঠে আসে। এ মামলায় ১৫৬ জন আসামির মধ্যে সাকিব ২৮ নম্বর আসামি।
যদি সাকিব শেষ পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচ খেলতে না পারেন, তবে তার ক্যারিয়ার থেমে যাবে ৭১ টেস্টে। তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাওয়ার পরিকল্পনা আগেই ঘোষণা করেছেন। তবে এর মধ্যে দেশের মাটিতে কোনো ওয়ানডে নেই বাংলাদেশের। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ এবং ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আরেকটি সিরিজ রয়েছে। দেখা এখন এটাই, দেশের বাইরে থেকে সাকিবকে খেলার অনুমতি বিসিবি দেয় কিনা।
এছাড়াও, ডিসেম্বরের শেষে বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়ে খেলার পরিকল্পনা ছিল সাকিবের, যা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মন্তব্য করুন