স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাশরাফীর হিংস্র চরিত্র দেখার আগে ভক্ত ছিলাম : সারোয়ার

সারোয়ার গোলাম চৌধুরী (বাঁয়ে) ও মাশরাফী। ছবি : সংগৃহীত
সারোয়ার গোলাম চৌধুরী (বাঁয়ে) ও মাশরাফী। ছবি : সংগৃহীত

দিন দিন প্রকট হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব। জোর করে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা কিনে নেওয়ার অভিযোগে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে মামলা করেন সারোয়ার গোলাম চৌধুরী।

গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্লবী থানায় এ মামলাটি করেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাবেক মালিক। পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামলার এজহারে উল্লেখিত কারণগুলোকে অবান্তর বলে পোস্ট দেয় সিলেট স্ট্রাইকার। একই সঙ্গে মালিকানায় নাম না থাকায় মাশরাফীর নাম জড়ানোকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করা হয়।

এবার এর জবাব দিলেন মামলার বাদী সারোয়ার গোলাম চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন। সেই পোস্টে মাশরাফীর অফিসে তাকে কীভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা লিখে নেওয়া হয় তার বর্ণনা দেন সারোয়ার গোলাম চৌধুরী।

পোস্টের শুরুতে তিনি লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আপনারা অনেকেই হয়তো আমাকে চিনবেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের মাধ্যমে। ২০২৩ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সে নিজেদের প্রথম সিজনেই ফাইনাল খেলে, রানার্সআপ হয়। মাঠের সফলতা ছিল অসাধারণ, কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল আমাদের দেশি খেলোয়াড়দের চমৎকার পারফরম্যান্স।’

২০২৪ সালে ৭ দলের মধ্যে ৬ নম্বরে থেকে আসর শেষ করে সিলেট। এর ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, ‘মাঠে খেলা ভালোই হয়েছিল, তাই না? সফল একটা সিজন গড়েছিলাম আমরা। সেই সিজনে আমি ছিলাম দলের চেয়ারম্যান; স্বপ্ন বড় হচ্ছিল, স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কিন্তু ২০২৪ সালের বিপিএলের আগে হঠাৎ করেই এক অপ্রত্যাশিত বাধার মুখোমুখি হই। মাঠের সফলতা সত্ত্বেও আমি পরের সিজনে দলের সঙ্গে থাকতে পারিনি, তারা আমাকে থাকতে দেয় নাই। এবং সিলেট ৭ দলের মধ্যে ৬ নম্বর পজিশনে থেকে বিপিএলটা শেষ করে। আর সিলেট যে আগের সিজনের মতো উজ্জীবিত ছিল না, এমনটা দর্শকরাই মনে করেছেন এবং প্রফেশনালিজমের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।’

পোস্টের এ পর্যায়ে মাশরাফীর সঙ্গে কীভাবে তার পরিচয় হয় তা তুলে ধরেন, ‘আমি মূলত আমেরিকায় ব্যবসা করি, এছাড়াও আমি নিউইয়র্কভিত্তিক ক্রিকেট লিগ এনওয়াইবিসিএলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং দীর্ঘ ৫ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে আমার হেলাল বিন ইউসুফের সঙ্গে পরিচয়। আর তার মাধ্যমেই আমার মাশরাফীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়।’

কীভাবে তার কাছ থেকে সিলেট স্ট্রাইকার্সে মালিকানা লিখে নেওয়া হয় তার বর্ণনায় সারোয়ার লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, মাশরাফী বাংলাদেশ দলে আমার অন্যতম প্রিয় একজন খেলোয়াড় ছিলেন। আর সেই প্রিয় খেলোয়াড় যখন নিজেই আমাকে বিপিএলে দল নেওয়ার আহ্বান করলেন, তখন আমি সানন্দে, বিশ্বাসের সঙ্গে তা গ্রহণ করলাম। কিন্তু তখনো আমি জানতাম না যে এক পর্যায়ে গিয়ে, যাকে আমি এতটা পছন্দ করতাম সেই মাশরাফীর রাজনৈতিক অফিসে, তার এবং যার মাধ্যমে এখানে আশা সেই হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্রের উপস্থিতিতে অবরুদ্ধ করে এবং অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না- যাকে এতটা ভালোবাসতাম, সে মানুষই এমনভাবে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে! এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতা।’

এতদিন কেন চুপ ছিলেন তার ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, ‘মাশরাফী এতদিন বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। ক্রিকেটার হিসেবে তার অবশ্যই অনেক জনপ্রিয়তা ছিল/আছে। আমি নিজেও উনার এই অজানা হিংস্র চরিত্র দেখার আগে অনেক বড় ফ্যান ছিলাম এবং আমি জানি তখন হয়তো কেউ অভিযোগ করলে আমারও বিশ্বাস করতে কঠিন হতো।’

নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছাড়েন বলেও জানান তিনি, ‘আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল মাশরাফীকে নতুনভাবে দেখা। তিনি শুধু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়কই নন, তিনি তখন সরকার দলীয় এমপি এবং সেই সরকার ছিল স্বৈরাচারী। এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই আমি আমার এবং আমার পরিবার-পরিজনের যারা অনেকেই বাংলাদেশেই বসবাস করেন তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছু করতে পারিনি। বিশেষ করে আমাকে যখন অবরুদ্ধ করে হুমকি দেওয়া হলো এবং সে সময় সরকারের প্রভাবশালী কারও বিরোধিতা করলে গুম হওয়া খুব অবাস্তব আশঙ্কা ছিল না। তাই হুমকি আমাকে সিরিয়াসভাবেই নিতে হয়েছে।’

ন্যায়বিচারের আশায় আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন বলে পোস্টের শেষাংশে লিখেছেন সারোয়ার গোলাম চৌধুরী, ‘এখন সময় বদলেছে, ছাত্রদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সফলতার পর দেশ নতুন আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এখন আমি ন্যায়বিচার পাবার ব্যাপারে আশাবাদী। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ একদিন সব বাধা অতিক্রম করবে।’

আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের হুমকি একবার সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবে নিরাপত্তার চিন্তা রয়েই যায়। কিন্তু মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমি আইনি লড়াইয়ে নেমেছি এবং লড়াই চালিয়ে যাব, আমি শিগগিরই একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কারভাবে তুলে ধরব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদা না দেওয়ায় কারখানা মালিককে শ্বাসরোধে হত্যা

মেছো বিড়াল হত্যার অপরাধে আসামি গ্রেপ্তার

অটোরিকশাকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে : ডিএমপি কমিশনার

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতার অনুষ্ঠানে অতিথি ছাত্রলীগ নেতা

গাইবান্ধায় জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত ৩০

শ্রাবণী এখন শ্রাবণ

ঘুরতে গিয়ে নদীতে ডুবে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের

জুমার দিনে মসজিদে আগুন দিল ইসরায়েলিরা

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

আরেকটি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল কাল

১০

বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না : ড. ইউনূস

১১

ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য বিভ্রান্তিকর-অতিরঞ্জিত : প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক

১২

দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ

১৩

ইটিভি-সিজেএফবি সংগীত-সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান / সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, ফাহিম আহমেদ এবং জয়া আহসান 

১৪

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৯৭৯ মামলা 

১৫

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ডিসি কর্তৃক গালাগালের প্রতিবাদে মানববন্ধন

১৬

রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম কমাতে আলটিমেটাম

১৭

‘জনশক্তি’ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি : জাতীয় নাগরিক কমিটি

১৮

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড আর নিরাপদ নয়’ : ইয়েমেন

১৯

লন্ডনে বড় মেয়ের বাসায় রয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

২০
X