বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুই আসরে খেলেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। প্রথমবার রানার্স আপ হলেও দ্বিতীয়বার ষষ্ঠ হয় তারা। আরও একটি আসর সন্নিকটে। এমন সময় ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্ব।
সোমবার রাজধানীর পল্লবী থানায় জোর করে মালিকানা লিখে নেওয়ার অভিযোগে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে মামলা করেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাবেক মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী।
মামলার এজহারে বলা হয় মাশরাফীর কার্যালয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা লিখে নেন হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র নামের আরেক মালিক। এ ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ও ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্ব কেনার টাকা বাকি রাখার অভিযোগ তোলেন সারোয়ার।
নিজেদের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে এক দীর্ঘ এক পোস্টে মাশরাফীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। ব্যাখ্যা জানানো হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানায় নেই মাশরাফীর নাম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টের শুরুতে বলা হয়, ‘সিলেট স্ট্রাইকার্সের এক শতাংশের মালিকানাও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার কখনো ছিল না। এখনো নেই। জোর করে মালিকানা লিখে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানার যে কাগজপত্র বিসিবির কাছে আছে, সেখানেও মাশরাফির নাম নেই।’
ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আরও লিখেছে, ‘বিপিএলের প্রথম আসরে অংশ নিয়েই সাড়া জাগিয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাশরাফির নেতৃত্বে আমরা রানার্স আপ হয়েছিলাম। মাঠের ভেতরে-বাইরে আমাদের পেশাদারিত্ব, সিলেট সর্বস্তরের মানুষ থেকে শুরু করে সারা দেশের সমর্থকদের সম্পৃক্ত করতে পারা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আমাদের উপস্থাপনা, সবকিছুই ছিল দারুণ প্রশংসিত। তার পরও দ্বিতীয় মৌসুমে আমাদের দল গঠন প্রক্রিয়ায় কেন ধস নামে?’
পরের অংশ বলা হয়, ‘শুরুতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ৬০ শতাংশের মালিকানা ছিল সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর। সহস্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে সক্রিয় হয়ে তিনি কাজ করছিলেন। কিন্তু যখন ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচের পালা আসে, ক্রমে তাকে পিছু হটতে দেখা যায়। অনেক ক্রিকেটার ও ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন সদস্যের পারিশ্রমিক, পরিচালন খরচ ও আরও বিভিন্ন খাতে তার অংশের কয়েক কোটি টাকা বাকি রেখেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ তিনি নেননি।’
পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘শেষ পর্যন্ত পাওনা টাকা শোধ করতে না পেরে গত বছরের আগস্টে তিনি নিজ থেকেই অন্যান্য স্বত্বাধিকারীর ওপর মালিকানা ছেড়ে দেন। বিসিবিকেও তিনি ই-মেইল দিয়ে নিজের সরে যাওয়ার কথা জানান।’
স্ট্যাটাসের শেষ অংশে সিলেট লিখেছে, ‘এখন সাম্প্রতিক পালাবদলের পর দেশ যখন নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে, তখন পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছে। তাই সিলেট স্ট্রাইকার্সের ভক্ত-সমর্থক ও দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরলাম। আইনি ব্যাপার আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মাশরাফীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলার এজহারে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর কাছ থেকে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মাদার প্রতিষ্ঠান ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানা কেড়ে নেওয়া হয়। মাশরাফীর কার্যালয়ে বসে হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র নামে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সহ-মালিক সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে ছিলেন।
আরও বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির এক কর্মকর্তা (যার নাম মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) সারোয়ারকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই স্বাক্ষর নিতে শুরু করেন। এমনকি তার পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছিল। এ সময় তিনি যেন কারও সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বলেন সে হুমকিও শুভ্র দিয়েছিলেন।
মামলাটিতে মাশরাফী ছাড়াও হেলাল বিন ইউসুফ শুভ্র, মো. ইমাম হাসান, অজ্ঞাত (রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির এক কর্মকর্তা), কেএম রাসেল, বাবলু ও অজ্ঞাতসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন