বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে পরিচিত আলিম দার ঘোষণা দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের চলমান ঘরোয়া মৌসুমের শেষে তিনি সব ধরনের আম্পায়ারিং থেকে অবসর নিবেন। প্রায় ২৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন এই কিংবদন্তি আম্পায়ার।
৫৬ বছর বয়সী দার এর আগেই ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আইসিসির এলিট প্যানেল থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, তবে আন্তর্জাতিক প্যানেলের অংশ হিসেবে তিনি এখনো ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। পাকিস্তানের ২০২৪-২৫ মৌসুমে বেশ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ থাকলেও, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দার আরেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়াও, মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫-এ তার বিদায়ী ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তার ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে, দারকে বিশ্বের সেরা আম্পায়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা তিনবার তিনি আইসিসির 'ডেভিড শেপার্ড ট্রফি ফর আম্পায়ার অফ দ্য ইয়ার' পুরস্কার জয় করেন। ২০০০-এর দশকের শুরুতে, আইসিসির এলিট প্যানেলে স্থান পাওয়া প্রথম পাকিস্তানি আম্পায়ার হিসেবে তিনি ইতিহাস গড়েন। ২০০২ সালে গঠিত এই প্যানেলে যোগ দিয়ে, দার তার দীর্ঘ ও সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়েন। তিনি চারটি বিশ্বকাপ ফাইনাল সহ রেকর্ড ১৪৫টি টেস্ট এবং ২২২টি ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন, যা তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা আম্পায়ার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তার ক্যারিয়ার নিয়ে দার বলেন, ‘আম্পায়ারিং প্রায় ২৫ বছর ধরে আমার জীবন। এই সময়ে আমি এই প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কিছু আইকনিক ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি, যা আমি চিরকাল মনে রাখব। সর্বদা খেলাধুলায় সেরা মান বজায় রাখার চেষ্টা করেছি, এবং বিশ্বের কিছু সেরা ম্যাচ অফিসিয়ালের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য সম্মানের বিষয়।’
আম্পায়ারিংয়ের পাশাপাশি দার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার দাতব্য কাজেও বেশ মনোযোগ দিয়েছেন। আলিম দার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। অবসরের পর তিনি তার এই সমাজসেবামূলক কাজগুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমার দাতব্য কাজ এবং সামাজিক প্রকল্পগুলোর প্রতি পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার। আমার হাসপাতালের প্রকল্প এবং অন্যান্য উদ্যোগগুলো আমার হৃদয়ের খুব কাছের, যা এখন পুরোপুরি আমার মনোযোগ দাবি করছে।’
আলিম দার তার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের আগে একজন লেগ স্পিনার হিসেবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১৭টি প্রথম শ্রেণির এবং ১৮টি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৯৮-৯৯ কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে তিনি প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণির আম্পায়ারিংয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে, দার নতুন প্রজন্মের ম্যাচ অফিসিয়ালদের পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিয়ে তাদের উন্নত করতে চান।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে, দারকে ক্রিকেটপ্রেমীরা সর্বদা তার অসাধারণ অবদান এবং অফ-ফিল্ড কর্মকাণ্ডের জন্য মনে রাখবে।
মন্তব্য করুন