চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৩ ওভার পর বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। বল করেন মাত্র ৮ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য দশ ওভারের আগেই বল হাতে নিয়েছিলেন তিনি। ৬৪ ওভারের মধ্যে ১৩ ওভার করেন তিনি।
দুই ইনিংস মিলিয়ে সাকিবের চেয়ে দ্বিগুণ ওভার বোলিং করেছেন আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতেই সামনে উঠে এসেছে সাকিবের আঙুলের চোট বিতর্ক। ভারতের সাবেক স্পিনার ও বর্তমানে চেন্নাই টেস্টের ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিকের দাবি, সাকিবের বাঁ হাতের স্পিনিং ফিঙ্গারে অস্ত্রোপচার হয়েছে। সে অংশ ফুলে থাকায় অস্বস্তিতে আছেন সাকিব!
তবে টিম ম্যানেজমেন্ট বলছে ভিন্ন কথা। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প জানিয়েছেন, এমন কিছুই না। শতভাগ ফিট না হলে খেলে কীভাবে—পাল্টা প্রশ্ন তোলেন হেম্প। এর আগে সাকিবের আঙুলের অপারেশন নিয়ে কথা বলেন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীও।
সম্প্রতি সাকিবের চোট হয়েছে বলে কোনো খবরই শোনা যায়নি। এমনকি বিসিবির মেডিকেল বিভাগও বিষয়টি অবগত নয়। কেননা, কদিন আগেও পাকিস্তানের মাটিতে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন সাকিব। এরপর কাউন্টিতে করেছিলেন দলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ওভার।
সারের হয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬৪ ওভার বোলিং করে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অথচ চেন্নাইতে কেন বাঁহাতি এই স্পিনারকে ব্যবহার করছেন না নাজমুল হোসেন শান্ত! এমন ভাবনা থেকেই নাকি তৃতীয় দিন খেলার শুরুতে সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ভারতের মুরালি কার্তিক।
পরে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সে কথা বলেন কার্তিক, ‘তাকে (সাকিব) আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী কারণে সে কম বোলিং করছে...সে আমাকে যা বলেছে, তা একজন স্পিনার হিসেবে আমি অনুধাবন করতে পারছি।’
পরের কথাগুলো শুনে চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। মুরালি দাবি করেন, ‘তার (সাকিব) বাঁ হাতের স্পিনিং ফিঙ্গারে একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেটি এখন ফুলে গেছে, শক্ত হয়ে আছে। ওই আঙুলে সে বলের অনুভূতিটাও পাচ্ছে না। স্পিনার হিসেবে বলের অনুভূতিটা দরকার। এ ছাড়া তার কাঁধেও অস্বস্তি আছে।’
কিছুক্ষণ পর ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে কার্তিকের এই কথাটাকে সামনে এনে টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করান বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টেস্ট ওপেনার তামিম ইকবাল।
চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ থেকে ধারাভাষ্য দেওয়াদের মধ্যে তামিম একজন। সাকিবের চোট আছে শোনার পর তিনি বলেন, ‘মুরালি কার্তিক বলে গেছে, আঙুলের সমস্যার কারণে সাকিব বল গ্রিপ করতে পারছে না। যদি তা-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশ চারজন ফ্রন্টলাইন বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অবশ্যই জানানো উচিত, তারা এই ইনজুরির কথাটা আগে থেকেই জানত কি না।’
তামিমের এমন প্রশ্ন তোলাটা অযৌক্তিক না। এত বড় ঘটনা হলে নিশ্চয়ই জবাব দিতে হবে ম্যানেজমেন্টকেই। তবে দিনের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ব্যাটিং কোচ হেম্প বলেছেন, ‘মুরালি তো আমাদের টিমের কেউ না। দুই দিন আগে সে ৭০ ওভার বল করে আসছে (কাউন্টিতে), ইনজুরি থাকলে এটা কি সম্ভব? আজকে (গতকাল) সে বোলিং করছে, ফিল্ডিং করছে, ব্যাটিং করছে, সব করতেছে। শতভাগ ফিট না হলে খেলে কোথায় থেকে? তার কোনো সমস্যা নেই।’
হেম্পের ভাষ্যমতে শতভাগ ফিট থেকেই খেলছেন সাকিব। এ দিকে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে একটি গণমাধ্যমে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘সাকিবের আঙুলের অস্ত্রোপচার হয়েছিল অনেক আগে, সেই ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের পর। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি। তবে সাকিবের আঙুলে একটা চিড় ধরা পড়েছিল গত বিশ্বকাপের (২০২৩) সময়ে। এরপর তো ওর আঙুলে কোনো সমস্যা হয়নি।’
মন্তব্য করুন