মাত্র একদিন পরই টেস্টে ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটে সবচেয়ে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে নার্ভাস থাকবে পৃথিবীর যে কোনো দেশের কোচ। তবে বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তার শিষ্যদের নিয়ে বেশ আশাবাদী।
লঙ্কান এই কোচ বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় তাদের আসন্ন ভারত সিরিজের আগে দলকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে। সিরিজের আগে এক বক্তব্যে হাথুরুসিংহে বলেন, এ জয় শুধু ফলাফলের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশ যেভাবে ধৈর্য ও সংকট মোকাবিলা করেছে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সে জয় আমাদের এই সিরিজে অনেক আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। আমরা দুই টেস্টেই পিছিয়ে ছিলাম, কিন্তু বিভিন্ন খেলোয়াড় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অবদান রেখেছিল। সে পারফরম্যান্স থেকে আমরা অনেক বিশ্বাস পেয়েছি,’ বলেন হাথুরুসিংহে।
এছাড়াও বাংলাদেশের বর্তমান স্কোয়াডকে তিনি দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ‘আমাদের দলটি খুবই ভারসাম্যপূর্ণ। আমাদের ভালো পেস বোলার আছে, পাশাপাশি একটি অভিজ্ঞ স্পিন আক্রমণও রয়েছে। ব্যাটিংয়ে আমাদের গভীরতাও ভালো। আমাদের দুই স্পিনারের টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে এবং দুই উইকেটরক্ষকও মূল ব্যাটার। এ কারণে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, এই সিরিজে আমরা শক্ত প্রতিযোগিতা উপহার দিতে পারব,’ যোগ করেন তিনি।
বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ভারতের বিরুদ্ধে খেলা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হলেও হাথুরুসিংহে এ লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চান। মানসিক প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাপ আসলে একটি প্রিভিলেজ (বিশেষ সুবিধা)। এটি আমাদের বিশ্বাস দেয় এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও। আমরা আমাদের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন, তবে সেরা দলের বিরুদ্ধে খেলা আমাদের নিজেদের অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যের একটি বড় কারণ তাদের পেস আক্রমণ এবং হাথুরুসিংহে বিশেষভাবে উদীয়মান পেসার নাহিদ রানার প্রশংসা করেছেন। ১৪৫ কিমি/ঘণ্টার বেশি গতিতে নিয়মিত বল করার ক্ষমতা বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দিয়েছে।
‘নাহিদ তার গতির মাধ্যমে ভয়ের ফ্যাক্টর নিয়ে আসে। যখন ১৫০ কিমি/ঘণ্টায় বল আসে, তখন ব্যাটারের প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়কে চ্যালেঞ্জ করে। তার ক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে এমন গতিতে বল করা আমাদের জন্য বড় একটি সুবিধা,’ মন্তব্য করেন হাথুরুসিংহে।
প্রধান কোচ পূর্ববর্তী কোচিং স্টাফ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিনিয়োগের প্রশংসা করেছেন যারা পেসারদের উন্নয়নে সহায়তা করেছে। ‘এই উন্নতি একদিনে ঘটেনি। বোর্ড ফাস্ট বোলিং প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করেছে, এমনকি দেশীয় ক্রিকেটে পেসবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়মও পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন আমরা পেস আক্রমণে যে গভীরতা দেখতে পাচ্ছি, তা সত্যিই সন্তোষজনক।’
টেস্ট ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে কম ব্যবহৃত হলেও, আসন্ন ভারত সিরিজে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হাথুরুসিংহে। সারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে নয়টি উইকেট নেওয়ার পর সাকিবের ফর্ম ফিরে আসার আশা করছেন তিনি।
‘সাকিব খুব ভালো অবস্থায় আছে এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। তার অলরাউন্ড ক্ষমতা আমাদের দলে ভারসাম্য আনতে সহায়ক, তার অভিজ্ঞতা আমাদের দলে অনেক কিছু নিয়ে আসে,’ হাথুরুসিংহে বলেন।
হাথুরুসিংহে আরও উল্লেখ করেন যে, মেহেদী হাসান মিরাজ ভবিষ্যতে সাকিবের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ‘মিরাজ গত পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত ক্রিকেটার। সাকিব বিদায় নেওয়ার পর সে দায়িত্ব নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তার ব্যাটিং উন্নতি করেছে এবং তার বোলিং সবসময়ই তার প্রধান শক্তি,’ হাথুরুসিংহে শেষ করেন।
ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে যদিও ভারতের কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তবে হাথুরুসিংহে ও তার বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, যাদের চোখে রয়েছে বিশ্বসেরাদের বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরার প্রস্তুতিও।
মন্তব্য করুন