বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা ও নিঃস্বার্থতা—এই দুই দিকেই উজ্জ্বল এক নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ‘সিরিজ সেরা’ পুরস্কার জিতেছেন এই অলরাউন্ডার। তবে এই অর্জনকে ব্যক্তিগত নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৃহত্তর প্রয়োজনে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সিরিজ সেরার পুরস্কারের অর্থ তিনি দান করবেন আন্দোলনে নিহত এক রিকশাচালকের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন মিরাজ। প্রথম টেস্টে ব্যাটে-বলে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। ফিফটি করার পাশাপাশি ৪ উইকেট শিকার করেন। দ্বিতীয় টেস্টে তার ৭৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস ও ৫ উইকেট দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। টাইগাররা সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় এবং পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ দেয়।
সিরিজ সেরা নির্বাচিত হওয়ার পর মিরাজ বলেন, ‘দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার জিততে পেরে খুবই খুশি। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সবসময় কঠিন, তবে আমি শুধু স্ট্রাইক রোটেট করার চেষ্টা করেছি এবং মুশফিক ভাই ও লিটনের সঙ্গে ব্যাটিং উপভোগ করেছি।’
এই সিরিজে মিরাজের ব্যাটিং এবং বোলিং পারফরম্যান্স উভয়ই চোখে পড়ার মতো। সিরিজে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রান করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। নিজের বোলিং পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘পাঁচ উইকেট পেয়ে খুব খুশি। ভবিষ্যতে আরও ভালো বল করার চেষ্টা করব।’
তিনি আরও বলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে না থাকায় কিছুটা সময় দেশে কাটানোর সুযোগ হয়েছিল এবং সেই সময়টায় বিসিবি ম্যানেজমেন্টের সমর্থন তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করেছে। টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিরাজ বলেন, ‘দল আমার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট, তারা সবসময় আমাকে সমর্থন করে। এটি আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলোর একটি।’
এরপর অবশ্য বাংলায় তিনি যা বলেন তা সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছে ‘এই সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়ে আমি গর্বিত। তবে দেশের সাম্প্রতিক সংকটময় পরিস্থিতি আমাকে ভাবিয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক রিকশাচালক আহত হয়ে পরে মারা গেছেন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই পুরস্কারের অর্থ তার পরিবারের জন্য দান করব, যাতে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়।’
মিরাজের এই উদারতা তার খেলোয়াড়ি জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও মহৎ একজন মানুষ হিসেবে তুলে ধরছে। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে মানবিক কাজ করার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মিরাজ তার দেশের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। দলের পারফরম্যান্সে যেমন তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন, তেমনি সমাজের প্রয়োজনেও এগিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মিরাজের এই ভূমিকা শুধু দলকে নয়, পুরো জাতিকে গর্বিত করেছে।
মন্তব্য করুন