আদিবাসী থেকে জাতীয় দল—বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। তবে সে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন অনেকেই। তাদের মতোই একজন অনিক দেব বর্মণ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন। এবার স্বপ্নটা আরও উঁচুতে নিতে চেয়ে চান শ্রীমঙ্গলে বেড়ে ওঠা অনিক।
হবিগঞ্জের বাহুবল থানার কালিগুচিয়া গ্রামের সন্তান অনিক। গ্রামে ক্রিকেট খেলার মাঠ নেই; কিন্তু টেলিভিশনে ক্রিকেট দেখেই এই খেলার প্রতি ভালোবাসার শুরু তার। পাকিস্তানের শোয়েব আখতার, অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি কিংবা বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ—তিনজনকে দেখে আরও বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি। নিজেও একজন পেস বোলার।
পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে ক্রিকেট বলে খেলার শুরু তার। এরপর একটি একাডেমিতেও নাম লেখান তিনি। সেভাবেই তার ক্রিকেটের পথে এগিয়ে চলা। সে গল্পটা অনিকের মুখেই শুনুন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি শহরে চলে এলাম; খেলার জন্য, শ্রীমঙ্গলে। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতাম। একটা ছোটখাটো একাডেমি ছিল। সেখানেই ক্রিকেট বলে প্র্যাকটিস করতাম। তারপর মৌলভীবাজার জেলায় অনূর্ধ্ব-১৬ ট্রায়াল দিলাম। স্কোয়াডে সুযোগ পাইনি।’
তারপরও থেমে যাননি অনিক। স্বপ্ন, পরিশ্রম, ইচ্ছার জোরে নিজেকে এগিয়ে নেন তিনি। সুযোগ মেলে মৌলভীবাজারের স্কুল ক্রিকেটে। পরের ধাপ নিয়ে অনিক বলেন, ‘২০২১ সালে আবার মৌলভীবাজারে স্কুল ক্রিকেট খেলি। ভালো বোলিং করি, উইকেট পাই। তখন আমার স্যাররা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নাম দিতে বলেন। আমি নাম দিলাম। তারপর হবিগঞ্জ জেলার হয়ে খেলি। সেখানে ভালো খেলে বিভাগীয় দলে সুযোগ পাই। তারপর ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে খেলি। মোটামুটি ভালো বোলিং করি। তারপর…(এখানে)।’
এতদূর আসার পথটা মসৃণ ছিল না তার। অনেক বাধা-বিপত্তিও ছিল। অন্য সবার মতো তার বাবা-মাও শুরুতে ছেলের ক্রিকেট খেলাকে ভালোভাবে দেখতেন না। অনিকের মতে, ‘আমার পরিবার তো শুরুতে সমর্থন দিত না। তখন আমি পালিয়ে খেলতাম। আমাকে বাসার লোকজন এসে নিয়ে যেত (মাঠ থেকে)। বাবা নিষেধ করতেন। বলতেন, ‘খেলে কী করব।’ তবু আমি পালিয়ে খেলতাম।’
তবে জেলা দলে সুযোগ পাওয়ার পর প্রেক্ষাপটে আসে পরিবর্তন। এখন অনিকের খেলাধুলার খোঁজখবরও রাখেন তারা। একসময় বুট জুতা কিনে না দিলেও এখন সবকিছুই ব্যবস্থা করেন তার বাবা। পরিবারের সাপোর্ট আর নিজের স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন অনিক।
মন্তব্য করুন