টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল হিসেবে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে ব্যাটারদের ছন্দহীনতা ও ম্যানেজমেন্টের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে টুর্নামেন্টের সেমিতে খেলার সুযোগ নষ্ট করেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের ঘাটতি ও টিম ম্যানেজমেন্টের ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন চারপাশে আলোচনা-সমালোচনা; ঠিক তখনই সামনে এসে গেছে সহঅধিনায়ক তাসকিন আহমেদের ঘুমকাণ্ড। এতে করে টুর্নামেন্টে পুরো দলের ব্যর্থতাও আড়ালের দিকে চলে যাচ্ছে। আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে তাসকিনের ঘুমকাণ্ড। অবশ্য এটা নতুন নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন ঘটনা সম্প্রতি আরও বেশ কয়েকটি পাওয়া যাবে। এই যেমন গত নভেম্বরে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে নাসুম আহমেদের চড়কাণ্ড!
বড় স্বপ্ন নিয়ে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ৯ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল। কোনোরকমে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ বাঁচিয়ে রাখাকেই শেষপর্যন্ত যে টুর্নামেন্টের সাফল্য ধরা হয়। এমন ব্যর্থ টুর্নামেন্টের পর যখন দলের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই সামনে এসেছিল স্পিনার নাসুমের চড়কাণ্ড।
সংবাদমাধ্যমগুলোতে বোর্ড পরিচালকদের সূত্র ব্যবহার করে সেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। এতে করে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে স্মরণকালের মধ্যে বাজে ব্যর্থতার শিকার হয়েছিল; সেসব আড়ালে হারিয়ে গেছে। বিসিবির পক্ষ থেকে ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঢাকা, সিলেট মিলিয়ে কোচ, নির্বাচক ও খেলোয়াড়দের একাধিক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এরপর গত ৯ মার্চ বোর্ড সভায় সে রিপোর্টও জমা হয়েছিল। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন রিপোর্ট তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘রিপোর্টে কিচ্ছু নেই।’
যদিও বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। পরে সেসব নিয়ে না কি কাজও শুরু করেছিল বোর্ড। বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়তো পরের কোনো ওয়ানডে টুর্নামেন্টের আগে দেখাও যাবে না।
তাসকিনের ঘুমকাণ্ডও অনেকটা সেরকম। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তুলনামূলক কন্ডিশনের দোহাই দিয়ে বেঁচে গিয়েছিল ব্যাটাররা। চার ম্যাচের ৩টিতে দলকে জিতিয়েছিলেন বোলাররাই। সুপার এইটে উঠে ব্যাটিংয়ের আসল চিত্র দেখা যায়। কিছুটা ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইও করতে পারলেন না শান্তরা।
তারপরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৬ রানের চ্যালেঞ্জ ১২.১ থেকে ১২.৫ ওভারের মধ্যে পেরিয়ে গেলে সেমিতে ওঠে যেতেন তারা। অথচ সেই ম্যাচটাও বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হারতে হয়েছিল। এরপরই দলের নিবেদন নিয়ে যখন আবার প্রশ্ন উঠল, তখন ৩ উইকেট হারানোর পর সেমির আশা ছেড়ে দেওয়ার দলগত সিদ্ধান্তের কথা বলে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শান্তরা। ঠিক তখনই আবারও বোর্ডের সূত্র জানাল, ভারত ম্যাচে ঘুমের জন্য মাঠে যেতে দেরি করেছিলেন তাসকিন।
এরপর সেটা নিয়ে কম জল ঘোলা হচ্ছে না। বোর্ড সভায়ও উঠেছিল সেসব কথা। যদিও এবারও সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘আমি রাবিদকে (বিশ্বকাপে দলের ম্যানেজার) ফোন করেছিলাম ভারত ম্যাচে তাসকিনকে একাদশে না দেখে। রাবিদ আমাকে জানাল, তাসকিন টিম বাস মিস করেছে। তবে ও এখন (তখন) মাঠে। আমি পুরো বিষয়টার আর খোঁজ নিইনি। অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে হয়তো নিতে পারতাম বা তাসকিনের সঙ্গেও কথা বলতে পারতাম। কিন্তু এই কাজে যারা সংশ্লিষ্ট, আমি তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায়। দেখি রিপোর্টে কী আছে।’
অর্থাৎ কোচ ও টিম ম্যানেজারের রিপোর্ট দেখে বিস্তারিত বুঝতে চান বোর্ড সভাপতি। কিন্তু নাসুমের পর এখন তাসকিন…এরপর কে? পারফরম্যান্স আড়ালে যেতে এটাই তো যথেষ্ট হচ্ছে! তাই তো প্রশ্নটাও উঠছে!
মন্তব্য করুন