ভারত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০৭ সালে। সেই টুর্নামেন্ট প্রজন্ম বদলের সাক্ষী হয়ে আছে। সে বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে খেলতে গিয়েছিল ভারত। কোচ ছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল। অধিনায়ক বদলের বিতর্ক, কোচের ভূমিকা, সিনিয়রদের ক্ষোভ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পা রাখে ভারত। এরপর বাংলাদেশের কাছে হারের অভিঘাতে প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়ে দ্রাবিড়ের দল। যে দলে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্র শেবাগ, সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো ক্রিকেটার।
বিপর্যয়ের পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে প্রায় নতুন দল পাঠিয়েছিল ভারত। অধিনায়ক করা হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশ্বকাপ জিতে ফিরেছিলেন। ২০০৭ সালের ধোনির দলটা এখন টি-টোয়েন্টিতে ভারতের প্রজন্ম বদলের সাক্ষী হয়ে আছে।
ঠিক ১৭ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। শিরোপা হাতে নেওয়ার পরই টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজা। বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটের তিন স্তম্ভ। অধিনায়ক রোহিত বলেন, ‘এটাই ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। এর পরে আমি আর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলব না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এর থেকে ভালো মুহূর্ত আর হতে পারে না। এই ফরম্যাটেই ভারতীয় দলে আমার অভিষেক হয়েছিল। যেদিন থেকে টি-টোয়েন্টি খেলেছি, উপভোগ করেছি। আমি বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে জিততে পেরেছি, তার জন্য খুশি।’
অধিনায়ক সরাসরি প্রজন্ম বদলের কথা না বললেও কোহলি কিন্তু বলেছেন, ‘এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল। ঠিক যেটা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, সেটাই করেছি। আমরা বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। জোর করে কোনো পরিস্থিতি তৈরি করার থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। সবাই জানত এর পরে কী হতে চলেছে। এটাই সময় নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার। অসাধারণ সব ক্রিকেটার রয়েছে দলে। ওরাই দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দলকে আরও উঁচুতে তুলবে।’
রোহিত কোহলিদের জায়গা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন শুভমান গিল এবং যশস্বী জয়সওয়ালের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার। জাতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন তারা। নিজেদের জাতও চিনিয়েছেন। অপেক্ষা করছেন সঞ্জু স্যামস্যানও। ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজাও।
এমনকি কোচ হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেছেন রাহুল দ্রাবিড়ও। বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘দুই বছরের একটা যাত্রা শেষ হলো এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। একটা ভারসাম্যযুক্ত দল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। খেলোয়াড়দের মধ্যে নির্দিষ্ট মানের দক্ষতা চেয়েছিলাম। প্রয়োজনীয় কিছু ক্রিকেটারকে চেয়েছিলাম। ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই দলে আলোচনা শুরু হয়েছিল, কীভাবে বিশ্বকাপ জেতা যায়। আমরা কিন্তু এই বিশ্বকাপের জন্য পরিশ্রম করিনি। গত দুই বছরের পরিশ্রমের ফল এই বিশ্বকাপ।’
ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর নিজের ক্রিকেট দর্শনে খেলাতে চেয়েছিলেন রোহিতদের। যেখানে টিম শেষ কথা। তারকানির্ভরতাকে দলের ওপর উঠতে দেননি কখনো। অনুচ্চার ভঙ্গিতে কাজ করেছেন। ফলও পেলেন। আজ থেকে তিনি কোচ হিসেবে অতীত। কিন্তু দ্রাবিড়ের লিগ্যাসি চিরকালীন হয়ে থেকে যাবে।
হয়তো অচিরেই ভারত নতুন কোচ নিয়োগ করবে। গৌতম গম্ভীরের নামও শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে এখন কালের যাত্রার ধ্বনি শোনা যায়। টি-টোয়েন্টি দলে প্রজন্ম বদলের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
রোববার (৩০ জুন) ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে অবসরের ঘোষণা দিয়ে জাদেজা চমৎকার লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। গর্বিত ঘোড়া যেমন মাথা উঁচু করে চলে, আমিও তেমন দেশের হয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো সেটা টেস্ট এবং এক দিনের ক্রিকেটে করার চেষ্টা করব। আমার স্বপ্ন ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। তা সত্যি হয়েছে।’
রোহিত, কোহলি, জাদেজা এবং কোচ দ্রাবিড় সত্যিকার অর্থেই গর্বিত ঘোড়ার মতো মাথা উঁচু করে বিদায় বললেন। গিল, জয়সওয়ালরাও পতাকা বহনের জন্য ব্ল্যাক স্ট্যালিওন ঘোড়ার মতো মাথা উঁচু করেই এসে গেছেন। এক প্রজন্মের বিদায়ের পথ ধরে নতুন প্রজন্মের উঠে আসায় ভারতীয় ক্রিকেটে শোনা যাচ্ছে কালের যাত্রার ধ্বনি।
মন্তব্য করুন