ফাইনাল থ্রিলারটা জিতলে না হয় আফ্রিকান সিংহ বলা যেত! আদতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের ‘চোকারই’ থেকে গেল। তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে ১৭ বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। হেনরিক ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫২ রানের ঝড়েও যাদের আত্মবিশ্বাস টলেনি। বার্বাডোজ শেষ পর্যন্ত সেই সাহসী দলটার গলাতেই বিজয়ের মালা পরিয়েছে।
শনিবার (২৯ জুন) বার্বাডোজে আগে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ৭ উইকেটে ১৭৬ রান। জবাবে ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে থামে প্রোটিয়ারা। ১৬ ওভার পর্যন্ত ফাইনাল তাদের মুঠোয় ছিল। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ক্লাসেনকে আউট করেন হার্দিক পান্ডিয়া। তখনও ডেভিড মিলার উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকা হেসে খেলে জিতবে মনে করে যারা বসে ছিলেন, তাদের জন্য অন্য হিসাব কষে রেখেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ১৭তম ওভারে ডাকেন বুমরাহকে। চতুর্থ বলে মার্কো ইয়ানসেনের ডিফেন্স ভেঙে দেন তিনি।
ব্লকবাস্টার বুমরাহর দাপটে ম্যাচে ফেরে ভারত। চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা। তবু আশা ছিল মিলার ছিলেন তাই। ভারত কোন অবস্থা থেকে ফাইনাল জিতেছে, তার সেরা প্রতীকী উদাহরণ হতে পারে মিলারের আউট হওয়া ক্যাচটি। কয়েক ইঞ্চির জন্য যা ছক্কা হয়নি। হার্দিকের বলে বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড মিলারের ক্যাচ দুর্দান্তভাবে ধরেন সূর্যকুমার যাদব।
ভারত ৭ রানে জিতে ২০০৭ সালের পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১১ সালে শেষবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। এরপর তারা ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে হেরেছে। বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে। ঘরের মাঠে সর্বশেষ ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ভারত। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা। এবার আর তাকে নিরাশ হতে হয়নি। দলকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করেছেন।
বার্বাডোজে টস জিতে ভারত আগে ব্যাটিং নিয়েছিল। প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরে বিরাট কোহলি ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেন। দ্বিতীয় ওভারে দুটি বাউন্ডারি মেরে আউট হন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ততক্ষণে ১.৪ ওভারে ২৩ রান তুলে নেয় ভারত। উইকেটে আসেন ঋষভ পান্ত। কোনো রান না করেই কেশব মহারাজের প্রথম ওভারের শেষ বলে আউট হন তিনি। সূর্যকুমার যাদব নেমেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কাগিসো রাবাদার বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন তিনি। ৪ বলে ৩ রান করেন। ভারত ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। সেখান থেকে অক্ষর প্যাটেল আর কোহলি ৭২ রানের জুটি গড়ে দলকে চাপমুক্ত করেন।
বার্বাডোজের উইকেট যে ব্যাটার এবং বোলার উভয়ের জন্যই সহায়ক, তা এই জুটি দেখে বোঝা যাচ্ছিল। ফাইনালের আগে বার্বাডোজের পিচ প্রস্তুতকারক উইনস্টোন রেইড বলেন, ‘ফাইনালের পিচ থেকে শুধু ব্যাটাররা নন, সাহায্য পাবেন বোলাররাও। ১৭ বছর ধরে আমি এই মাঠের পিচ প্রস্তুত করছি। ২০০৭ সাল থেকে এখানে আছি আমি। ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়েছে এখানকার পিচ। জানুয়ারি মাস থেকে প্রস্তুতি চলছে। জুনে বৃষ্টি হয়। সেটা মাথায় রেখেই পিচে কম জল দেওয়া হয়েছে। এখন তাই দারুণ একটা পিচ তৈরি হয়েছে।’
বার্বাডোজের উইকেট যেমন পেসার এবং স্পিনারদের সাহায্য করেছে, তেমনি ব্যাটারদেরও সহায় হয়েছে। বড় উদাহরণ কোহলি ও আনরিখ নরখিয়া। ৪ ওভারে ২৬ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। কোহলি করেন ৫৯ বলে ৭৬ রান।
২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৫৮ বলে ৭৭ রান করে হেরেছিলেন কোহলি। এবার তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। বোঝা গেল ক্রিকেট সব সময় কেড়ে নেয় না, ফিরিয়েও দেয়।
শনিবার শেষের দিকে মারলেও তার স্ট্রাইক রেট ১২৮.৮১ এর ওপরে ওঠেনি। ইনিংসে ৬ বাউন্ডারি আর দুটি ছক্কা মারেন কোহলি। অক্ষর ৩১ বলে ৪৭ করে নিজের ভুলে রানআউট হন। যথেষ্ট সময় থাকতেও ক্রিজে ঢুকতে পারেননি। দায়িত্বজ্ঞানহীন ক্রিকেটই বলতে হবে। কোহলি শট খেলে পেছনে উইকেটরক্ষকের দিকে তাকিয়ে পিচের মাঝে চলে আসেন। অক্ষরের দিকে খেয়াল করেননি তিনি। কল ছিল অক্ষরেরই। ডি ককের সরাসরি থ্রু লাগে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে। পরে শিভম দুবে ১৬ বলে ২৭ রান করেন। তার ছোট্ট ইনিংসের কারণেই ১৭৬ রানের স্কোর গড়ে ভারত। সেই রান তাড়া করতে নেমে কুইন্টন ডি কক (৩৯), ট্রিসটান স্টাবুস (৩১) ও ক্লাসেন ঝড়ে প্রোটিয়ারা প্রায় জিতেই গিয়েছিল। কিন্তু চিরকালীন চোকাররা নিয়তির বাধা কাটাতে পারেনি। চোকার হয়েই বিদায় নিয়েছে।
মন্তব্য করুন