বিশ্বকাপের ফাইনালে নামার আগে কোহলি মাত্র ৭৫ রান করেছিলেন। বার্বাডোজে শনিবার (২৯ জুন) ৫৯ বলে করেন ৭৬ রান। তিনি যে বড় ম্যাচের প্লেয়ার, তা বোঝা গেছে। কোহলি ইনিংসটা না খেললে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারত দেড়শ পার করতে পারত কি না সন্দেহ আছে। আর ফাইনালে ভারতের রান দেড়শ না হলে জাসপ্রিত বুমরাহ আর হার্দিক পান্ডিয়া ম্যাচে ভারতকে ফেরানোর সুযোগই পেতেন না। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন কোহলি।
ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সঞ্চালক হার্শা ভোগলের প্রশ্নের উত্তরে কোহলি বলেন, বিশ্বকাপ ফাইনালই শেষ ম্যাচ। এবার তিনি পরের প্রজন্মকে জায়গা ছেড়ে দিতে চান। তিনি বলেন, ‘এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল। ঠিক যেটা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, সেটাই করেছি। মাঝে মাঝে এটা মনে হয় যে আপনি হয়তো রান পাচ্ছেন না। তার পরই একটা বড় রান চলে আসে। আসলে আমার কাছে ব্যাপারটা ছিল হয় এখন, না হলে কখনো নয়।’
এরপরই কোহলি পরিষ্কার করে বলেন, তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন। শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন সঞ্চালক ভোগলে। চোখের জল মুছে কোহলি বলেন,‘এটাই ভারতীয় দলের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। আমরা বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। জোর করে কোনো পরিস্থিতি তৈরি করার থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। সবাই জানত এর পরে কী হতে চলেছে। এটাই সময় নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার। অসাধারণ সব ক্রিকেটার রয়েছে দলে। ওরাই দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দলকে আরও উঁচুতে তুলবে।’
কোহলির মতো অন্য অর্থে গতকালের ফাইনাল শেষ ম্যাচ হয়ে থাকবে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ক্যারিয়ারেও। ফাইনালের আগে তিনি অভিশাপমুক্তি চেয়েছিলেন। এই বার্বাডোজে ১১৮ রান তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট হেরেছিল শচীন টেন্ডুলকারের ভারত। সেই দলে ছিলেন দ্রাবিড়। তা ছাড়া ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা কে ভুলতে পারবে। সেই বিশ্বকাপে ভারত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশের কাছে হেরে। বিপর্যয়কর সেই পারফরম্যান্সের সময় দলের অধিনায়ক ছিলেন দ্রাবিড়। সেসব স্মৃতি মনে ছিল বলেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে নামার আগে ছেলেদের বলেন, ‘গত নভেম্বরে আহমেদাবাদের ফাইনালেও দল দারুণ তৈরি ছিল। প্রত্যেক বিভাগে লড়াই করেছে, তবে ওইদিন প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছিল। এমনটা হতেই পারে। তবে আশা করি, কাপ-ভাগ্য আমাদের সহায়তা করবে। আহমেদাবাদে কী হয়েছিল, তা আর মনে রাখার প্রয়োজন নেই। শনিবার একটা নতুন দিন শুরু হবে। নতুন উদ্যম নিয়েই আমাদের খেলতে হবে।’
তার দল নতুন উদ্যমে খেলেই সফল হয়েছে। কোচ হিসেবে এটাই ছিল দ্রাবিড়ের শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। এরপর নতুন কোনো কোচ আসবে। দ্রাবিড় বিশ্বকাপ জিতিয়ে বিদায় নিলেন কোহলির মতোই। টি-টোয়েন্টিতে ১২৫টি ম্যাচ খেলেছেন কোহলি ৪৮.৬৯ গড়ে ৪১৮৮ রান করেছেন। একটি সেঞ্চুরি করেন গত বছর এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ৩৮টি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। ১৭ বছর পর দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে কোহলি বলেন, ‘এত বছর ধরে একটা বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি। রোহিতের মতো ক্রিকেটারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ৯টা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। আমার সেখানে ছয়টা। রোহিত এই ট্রফির যোগ্য। এই মুহূর্তে আবেগ ধরে রাখা আমার কাছে কঠিন।’
কাঁদছিলেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তিনি বলেন, ‘খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সাফল্য আসছিল না। আমার কাছে এটা আরও বিশেষ মুহূর্ত। কারণ, গত ছয় মাসে আমার সঙ্গে অনেক কিছু হয়েছে। চুপ করে ছিলাম। একটাও কথা বলিনি। জানতাম, যদি পরিশ্রম করে যাই, তা হলে একদিন জবাব দেওয়ার সুযোগ পাব। জানতাম, একদিন এই দিনটা আসবে। আমাদের বিশ্বাস ছিল। পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। শেষ পাঁচ ওভারের জন্য বুমরাহ ও বাকি বোলারদের ধন্যবাদ। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি বলে ১০০ শতাংশ দিয়েছি। সব সময় চাপ সামলাতে ভালোবাসি। এই ম্যাচেও চাপের মধ্যে থেকে জিতেছি।’
মন্তব্য করুন