টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর শুরু হয়েছিল ২ জুন। দক্ষিণ আফ্রিকার ট্র্যাজেডি আর ভারতের অপরাজিত শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হল শনিবার (২৯ জুন)। মাঝের ২৭ দিন নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া।
গুনে গুনে তিন হ্যাটট্রিক দেখেছে এবারের বিশ্বকাপ। কোনো সেঞ্চুরির দেখা মেলেনি। উইকেট নিয়ে বিতর্ক লেগেই ছিল। এর মাঝেই আমেরিকান ড্রিম বিস্ময় জাগিয়েছে। তেমনই মুগ্ধ করেছে আফগান বীরত্ব।
তবে আমাদের চোখে সব কিছু ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। যদিও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বড় মতো দল। তবু নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যর্থতায় পোড়াচ্ছে অনেক বেশি।
বাংলাদেশের ব্যর্থতা: বাংলাদেশ এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ডি গ্রুপ থেকে। তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে উঠেছিল। গ্রুপ পর্বে হেরেছিল শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
লঙ্কা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডসকে হারায় শান্তরা। সুপার এইটে কোনো জয় পায়নি। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারে। এর পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেমির স্বপ্ন যখন নিবু নিবু, তখন আফগানিস্তান অঘটন ঘটিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে।
যদিও ১২.২ ওভারে ১১৫ রান তুলে সেই সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ ম্যাচেও পরাজিত হয়ে দেশে ফেরেন শান্তরা। বিমানবন্দরে নেমে তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘গত দশ বছরে ব্যাটারদের এমন বাজে ফর্ম দেখিনি।’
আমেরিকান ড্রিম: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নবাগত আমেরিকা এবার সুপার এইট খেলেছে। তারা পাকিস্তানের মতো টেস্টখেলুড়ে দেশকে হারিয়ে বিস্ময় তৈরি করেছে। শুরু করেছিল কানাডাকে হারিয়ে।
আয়ারল্যান্ডের ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ফলে দুই ম্যাচ জিতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে ওঠে আমেরিকা। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নবাগত দেশের এমন সাফল্য ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আমেরিকায় ক্রিকেট প্রসারেও তাদের সাফল্য কাজে লাগবে। তবে সুপার এইটে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি। তিনটি ম্যাচে হেরে বিদায় নেয় সহ-আয়োজকরা।
আফগান বীরত্ব: টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান যে শক্তিশালী দল, তা সবাই এক কথায় স্বীকার করবেন। দুনিয়ার বিখ্যাত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলোতে খেলেন আফগান ক্রিকেটাররা।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে তাই দলটির কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। কিন্তু সব সময় প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মেলে না। এবার মিলেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল আফগানিস্তান চমক দিয়ে।
নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৭৫ রানে অলআউট করে দারুণ জয় পায় আফগানরা। পাপুয়া নিউগিনি ও উগান্ডাকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠে। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান শুধু স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরেছিল। সুপার এইটেও দুর্দান্ত খেলে রশিদ খানরা।
ভারতের কাছে হারলেও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমক দেয় তারা। শেষে বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও নিশ্চিত করে। তবে সেমিফাইনালে মান অনুযায়ী খেলতে পারেনি রশিদ খানের দল।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হয়ে তাদের রূপকথা থেমে যায়। কিন্তু বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তাদের ব্যর্থতা সত্ত্বেও সফল মিশন শেষে করে বীরের বেশে দেশে ফেরে আফগানরা।
উইকেট নিয়ে বিতর্ক: নিউইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন উইকেট ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে। যেখানে ব্যাট করা প্রায় অসাধ্য ছিল। উইকেটের আচরণ দেখে আইসিসি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
তারা বিবৃতিতে বলে, ‘আমরা যেমন আশা করেছিলাম, পিচগুলো ধারাবাহিকভাবে তেমন আচরণ করছে না। পিচের উন্নতির জন্য বিশ্বমানের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ বলেন, ‘এমন বিরক্তিকর ক্রিকেট দেখিয়ে লাভ কী? আমেরিকার মানুষেরা খেলা দেখে আনন্দ না পেলে কী করে ক্রিকেট ও দেশে জনপ্রিয় হবে?’
ক্ষুব্ধ ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিচ নিয়ে লেখেন, ‘ক্রিকেটের বিপণনের প্রচেষ্টা দুর্দান্ত। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিউইয়র্কের নিম্নমানের পিচে খেলতে বাধ্য করাটা মেনে নেওয়া যায় না।’
সেই বিতর্ক ওয়েস্ট ইন্ডিজেও থেমে থাকেনি। বিশেষ করে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট নিয়েও বিতর্ক বাধে।
প্যাট কামিন্স আর জর্ডানের হ্যাটট্রিক: একজন বোলারের ক্যারিয়ারে একটা মাত্র হ্যাটট্রিক পাওয়ায় যেখানে দুর্লভ, সেখানে পরপর ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিক করেছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার প্যাট কামিন্স।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। যদিও নিজেই টের পাননি যে হ্যাটট্রিক করেছেন। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও তিনি হ্যাটট্রিক করেন। যদিও সেই ম্যাচে হেরে সুপার এইট থেকে বিদায় নেয় অজিরা।
আফগান ইনিংসের শেষের দিকে পরপর তিন বলে উইকেট নেন কামিন্স। এবারও দুই ওভার মিলিয়ে কীর্তি গড়েন তিনি। হ্যাটট্রিক হওয়ায় ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকম্যান হিসেবে নাম লেখান অস্ট্রেলিয়ান পেসার।
১৮তম ওভারের শেষ বলে রশিদ খানকে আউট করেন কামিন্স। ১৯তম ওভারে আবার বল করতে এসে প্রথম দুই বলেই তিনি করিম জানাত ও গুলবাদিন নাইবের উইকেট নেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার নজির নেই আর কারও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্ডান হ্যাটট্রিক করেন আমেরিকার বিপক্ষে।
মন্তব্য করুন