মুজাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ডিআইইউতে ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের নেপথ্যে কী?

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ এবং সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনা তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে আলোচনা।

১০ শিক্ষার্থীকে কেন বহিষ্কার করা হলো তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কিছু শিক্ষার্থী সাংবাদিক সমিতি নামে একটি সমিতি চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যার কোনো স্বীকৃতি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভিযোগ, উক্ত সাংবাদিক সমিতি ইউনিভার্সিটির অনুমতি না নিয়ে ক্যাম্পাসে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে গত ৯ মার্চ একটি সাধারণ সভার আয়োজন করে। এ ছাড়া, ১০ মার্চ ২০২৪-২৫ সালের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার্থী হয়রানির মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংগঠনের সদস্যরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণেই তারা বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার ডিআইইউর সাংবাদিকদের সংগঠন “সাংবাদিক সমিতি” বন্ধের পাঁয়তারা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রায় এক মাস আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের কেউ মুখ খুললেই আপমান, বহিষ্কার আর পরীক্ষায় দেখে নেবার হুমকি দেওয়া হয়৷

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থীরা আরও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়ে প্রকাশ পায় সম্প্রতি একটি গণমাধ্যম প্রতিবেদনে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে টাকা দিয়ে রেজাল্ট বিক্রি করারও বেশকিছু তথ্য প্রমাণ (টাকা লেনদেনের স্কিনশট) সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূলত ছাত্রীকে যৌন হয়রানি এবং টাকা দিয়ে রেজাল্ট বিক্রির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণেই ১০ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। (ছাত্রীকে যৌন হয়রানি এবং টাকা দিয়ে রেজাল্ট বিক্রির এসব তথ্য প্রমাণ কালবেলার হাতেও এসেছে)

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, তাদের কাউকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের কলম ও কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যেই ডিআইইউর এমন বহিষ্কারাদেশ বলে মন্তব্য করছেন তারা। তারা বলছেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কোনো তদন্ত কমিটি নেই এমনকি কোনো শোকজও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে সরাসরি আমাদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ ছাড়া এভাবে বহিষ্কার কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, গত চার বছর ধরে তারা ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন তারা। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিকদের বহিষ্কারের মতো এমন গর্হিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন এবং রেজিস্ট্রার আবু তারেককে একাধিকবার কল করলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন রক্ষা এবং ক্যাম্পাসে বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে এসব সংগঠনের বিবৃতিতে।

সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ (ডিইউজে) প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। শর্তহীনভাবে এসব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা৷ তারা বলছেন, সাংবাদিক সমিতির মতো একটি পেশাজীবী সংগঠন তৈরির কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও নজিরবিহীন।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিক সমিতির বন্ধের নির্দেশ এবং শিক্ষার্থী বহিষ্কারের মধ্যদিয়ে ডিআইইউ প্রশাসন ক্যাম্পাসকে চূড়ান্তভাবে সাংবাদিকশূন্য করে অন্যায়-অপকর্মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

তারা আরও বলেন, দেশের অন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে প্রশাসন কর্তৃক সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হলেও ডিআইইউ কর্তৃপক্ষের ধৃষ্টতাপূর্ণ এমন আচরণ অত্যন্ত আপত্তিকর ও অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনের কাছে দাবি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা ১০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দেওয়া অন্যায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করবেন এবং সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় কঠোরতম কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না ডিইউজের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পাচ্ছেন সিএমপি কমিশনার

তিন দলের সঙ্গে বৈঠক বিএনপির

ভারত চাইলেই পাকিস্তানকে কারবালা বানাতে পারবে না

লাইসেন্স পেল স্টারলিংক

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

‘ভারতের দিকে ১৩০ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তাক করা আছে’

মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল, যুবদল নেতা বহিষ্কার

অনিয়মে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : রাজউক চেয়ারম্যান

বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা বিশ্বকাপ ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের দুই কোটি শিখ, হুঙ্কার

১০

শাহজালালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পাবেন হজযাত্রীরা

১১

লামিয়ার ধর্ষণকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি গণতন্ত্রী পার্টির

১২

গাজীপুরে মাটি কাটার দায়ে ১০ জন কারাগারে

১৩

প্রেমিকা অন্তঃসত্ত্বার খবর শুনে পালালেন শিমুল

১৪

সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনুষ্ঠিত হলো ক্যারিয়ার বুস্টিং প্রোগ্রাম 

১৫

যুবদল নেতা শামীম হত্যা / সাবেক এমপি জাফর কারাগারে

১৬

আদালত পাড়ায় আনিসুল হককে আইনজীবীদের চড়-থাপ্পড়

১৭

যুদ্ধ নিয়ে বড় ঘোষণা পুতিনের

১৮

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন

১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

২০
X