ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সহযোগিতায় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডর্প) সম্প্রতি পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (ওয়াশ) খাতে উচ্চ বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তাবিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করেছে।
ইউআইইউর ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি (আইডিএসএস) আয়োজিত দুই-দিনব্যপী ৭ম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসডি) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অংশ হিসেবে সেমিনারটি ২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ইউআইইউ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়।
"এসডিজিতে পানি, স্যানিটেশন এবং জলবায়ু পরিবর্তন: বর্তমান অবস্থা এবং বাজেট প্রেক্ষিত" শীর্ষক মূল উপস্থাপনায় ডর্প-এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান তুলে ধরেন যে ওয়াশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াই একে অপরের সাথে জড়িত এবং এই খাতগুলোতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
“বাংলাদেশজুড়ে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। উপরন্তু, দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩১% নিরাপদ স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত।" তিনি সাম্প্রতিক গবেষণাসমূহ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন এবং আরও যোগ করেন যে, সকল অংশীজনের লক্ষ্য হওয়া উচিত সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা।
তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকার যদিও এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করেছে, ট্রিকল-ডাউন প্রভাব এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিচ্ছে। ‘সুশীল সমাজের তদারকি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে, ইউনিয়ন পরিষদে ওয়াশ প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) বাজেটে ওয়াশের অংশ বাড়ছে। এই ইতিবাচক ফলের প্রধান কারণ হলো স্থানীয় সুশীল সমাজ এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় প্রকল্পের অধীনে ওই ইউনিয়নগুলিতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে,” তিনি বলেন।
তিনি স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চ বরাদ্দ এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসহ সকল অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানান।
উপস্থাপনাটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার দিকেও আলোকপাত করে।
“ডর্প প্রকল্প আওতাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদগুলিতে জলবায়ু বাজেট কম ছিল, ২০২২-২৩ সালে মাত্র ৩.৫৩% যা ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে ৫.৭% হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ইউনিয়ন প্রতি মাথাপিছু জলবায়ু বাজেট ছিল ৪৪৭ টাকা। এটি জাতীয় গড় থেকে প্রকল্প ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল (২০২৩-২৪ সালে মাত্র ৬২ টাকা),” তিনি ডর্প-এর প্রাপ্ত তথ্যগুলো তুলে ধরেন এবং উন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডর্প স্থানীয় পর্যায়ের স্পট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ব্যয়ের মান উন্নত করার জন্য স্টেকহোল্ডার এবং নাগরিক সংস্থাগুলির সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিচ্ছে এবং এই বাধাগুলি মোকাবিলায় এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসাবে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলির সাথে সমন্বয় প্রয়োজন বলে সংস্থাটি মনে করে।
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, “আমাদের ওয়াশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক ঘাটতি চিহ্নিত করতে হবে এবং তহবিল বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে হবে।
ডক্টর আতাহারুল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব গেল্ফ, সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এবং ক্যাথারিয়েন টেরভিসচা ভ্যান শেল্টিংগা, সিনিয়র গবেষক, ওয়াজেনিনজেন ইউনিভার্সিটি এটি পরিচালনা করেন।
সেমিনারে শিক্ষার্থী, গবেষক ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ সক্রিয়ভাবে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। অন্যদের মধ্যে আমীর খসরু, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি, ওয়াশ বাজেট ট্র্যাকিং,ডর্প; সিলভানা ইসরাত, প্রকল্প সমন্বয়কারী, ডর্প; এবং খাদিজা আহমেদ, ডেপুটি ডিরেক্টর, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, ডর্প উপস্থিত ছিলেন।
৭ম আইসিএসডি সম্মেলন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ শুরু হয়েছিল ৷ এই বছরে সম্মেলনের লক্ষ্য হলো একটি গবেষণাভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যাতে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলি অর্জনের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং গবেষণা কার্যক্রমগুলিকে অংশীজনদের অবহিত করা যায় ৷ এবারের সম্মেলনে ৬টি ভিন্ন থিমের অধীনে মোট ১০২টি গবেষণাপত্র দাখিল হয় এবং ৮২টি উপস্থাপনার জন্য নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার দেশগুলো যেমন ভারত, জাপান, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদির গবেষকবৃন্দ এ বছর অংশ নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন