অমর একুশে বইমেলা জমজমাট হয়ে উঠেছে। বইপ্রেমীরা এরই মধ্যে মেলায় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই কেনা শুরু করেছেন। বিভিন্ন স্টলে বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশের স্টলে দেখা গেল একটু বেশিই ভিড়। কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের নতুন ৪ উপন্যাসসহ ১২০টি বইয়ের অধিকাংশই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। মেলায় আসা বিভিন্ন বয়স ও নানা শ্রেণির পাঠককে মোশতাক আহমেদের নতুন-পুরোনো বইগুলো কিনতে দেখা গেছে।
মেলায় বাবার সাথে আসা সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া পাঠক সিয়াম আহমেদ জানায়, রহস্য উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক উপন্যাস ভালো লাগে তার। সেজন্য মোশতাক আহমেদের একাধিক উপন্যাস কিনেছে সে। এর আগেও মোশতাক আহমেদের একাধিক উপন্যাস পড়েছে বলে জানায় এই শিক্ষার্থী।
সিয়াম আহমেদের বাবা জানান, এখন মোবাইলের যুগ। এর নানা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বাচ্চারা যেন ডিভাইস থেকে দূরে থাকে সেজন্য নানাভাবে তাদের বই পড়তে উৎসাহিত করা দরকার। আমার সন্তানকে আমি সেটাই করছি। মেলার শুরুর দিকেই তাকে নিয়ে বই কিনতে চলে এসেছি। নির্ধারিত সময়ে উপন্যাস পড়ে শেষ করতে পারলে তাকে পুরস্কার দিব বলে জানিয়েছি। তার পছন্দ রহস্য উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক উপন্যাস। সেজন্য একাধিক বই কিনেছি। মোশতাক আহমেদের সিরিজগুলো তার খুবই প্রিয়। এজন্য মেলায় ঢুকে প্রথমদিকেই তার বই কেনার জন্য নিয়ে আসতে হয়েছে।
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল একাধিক নারী পাঠকের কাছেও। স্টল ঘুরে দেখা গেল, তারা নিজেরা বই কিনছেন এবং কেউ কেউ সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসে মোশতাক আহমেদের বিভিন্ন বই কিনেছেন। নতুন বইয়ের পাশাপাশি পুরোনো বই কিনতেও দেখা যায় তাদের।
অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন জানান, মোশতাক আহমেদের উপন্যাসগুলো তুমুল জনপ্রিয়। এজন্য আমাদের স্টলে অধিকাংশ বই বহুমাত্রিক লেখক মোশতাক আহমেদের। পাঠকের কাছে তার উপন্যাসের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে সব উপন্যাস একসঙ্গে জড়ো করে রাখা হয়েছে। মেলায় শুরুর দিকে তার বইয়ের পাঠকচাহিদায় আমরা সন্তুষ্ট। সামনের দিকে এ চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করি।
তিনি জানান, অনিন্দ্য প্রকাশ হতে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় নব্বইটি এবং মেলা উপলক্ষে ত্রিশটির অধিক উপন্যাস পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। এছাড়া এবারের মেলায় কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের নতুন চারটি উপন্যাস এসেছে। প্যারাসাইকোলজি উপন্যাসটির নাম- হারানো জোছনার সুর। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন দ্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড, ভৌতিক মৃত্যুবাড়ি এবং শিশিলিন গোয়েন্দা সিরিজের রূপার সিন্দুক।
কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদ জানান, এবারের বইমেলায় সবমিলিয়ে আমার ১২০টি বই বিক্রি হচ্ছে। বইমেলায় পাঠক উপস্থিতি ও তাদের প্রতিক্রিয়ায় আমি সন্তুষ্ট। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন দেশের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়া। ভালো অনুবাদকের অভাবে কাজটা করতে পারছি না। আশা করি, এটিও করতে পারব।
উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যে মোশতাক আহমেদ বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করছেন। কারণ তার লেখালেখি শুধু কোনো একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি যেমন সামাজিক ও ভৌতিক উপন্যাস লিখছেন, তেমনই লিখছেন গোয়েন্দা ও সায়েন্স ফিকশন। নতুন ধারার প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস রচনায়ও তিনি সমাদৃত হচ্ছেন সর্বত্র। মোশতাক আহমেদ ২০১৮ সালে বাংলা একেডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
মন্তব্য করুন