প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের প্রথমদিন সারা দেশে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে সরকার। তবে নতুন পাঠ্যবই মানেই যেন ভুল আর বির্তক— বিষয়টি যেন চিরায়িত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি অধ্যায় নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব এক অনুষ্ঠানে চলতি সিলেবাসে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে তাদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে তিনি এ পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেন।
এ ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল তর্ক-বিতর্ক। অনেকেই তার পক্ষ নিয়েছেন, আবার অনেকেই তার বিরোধিতাও করেছেন। এখানেই সমালোচনাকারীরা থেমে থাকেনি; আসিফ মাহতাবের ব্যক্তিজীবন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ট্রল। সেখানে তার অতীতের কিছু ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব ও সাংবাদিক আশরাফুল আলম খোকন মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (বরখাস্ত) আসিফ মাহতাব, একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে হোক কিংবা অজ্ঞতার কারণেই হোক, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হয়তো, তিনি এটাকে ধর্মীয় ইস্যুও বানাতে চেয়েছিলেন। এই সব কিছুই তার অপরাধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন, তার ব্যক্তিগত চরিত্র উন্মোচন করতে গিয়ে আমরাও কিছু অপরাধ করছি। সে বিভিন্ন সময় তার ক্লাসমেট, স্বজন এবং বান্ধবীদের সাথে কিছু ছবি তুলেছেন। আমাদের অনেকেই সেইসব ছবি ব্যবহার করে তাকে ট্রল করছি। এটা কোনোমতেই উচিত না।’
আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘এতে, ওই ভদ্র মহিলাদের সম্মানহানি হচ্ছে, তাদের ব্যক্তি অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তারাতো কোনো দোষ করেননি। যারা ছবি ব্যবহার করছেন তাদের উচিত ওই সব ভদ্রলোক ও মহিলাদের অন্ততঃ মুখ মণ্ডল ঢেকে দেওয়া। তবে, অন্যদের ছবি ব্যবহার না করাই উত্তম।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
মূলত সপ্তম শ্রেণির এই পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিবন্ধকতা থাকলে সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও সেখানে তাদের বেড়ে ওঠা, সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এই অধ্যায়টি গত বছরও ছিল, সেখানে যতটুকু সংশোধন করা দরকার তা এবার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে হিজড়াদের স্বীকৃতি দেওয়ায় তাদের সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই পাঠ্যবইয়ে এটি আনা হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।
মন্তব্য করুন