সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে মোজোর ২ লিটারের একটি বোতলের ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হচ্ছে, ৮০ টাকার মোজো ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে? ফিলিস্তিনে তো প্রতি বোতল থেকে মাত্র ১ টাকা যাচ্ছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ-সংক্রান্ত পোস্টগুলোয় লেখা হয়েছে, ‘Mojo কি তাহলে আবেগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে? ৮০ টাকার Mojo ১০০ টাকা হয়ে গেল কিভাবে? ফিলিস্তিনে যায় তো মাত্র ১ টাকা বোতলপ্রতি। প্রোডাকশন বাড়লে তো দাম কমার কথা কিন্তু প্রোডাকশন বাড়ার সাথে সাথে দাম বাড়ার কারণ কি? যে বাংলাদেশি Coca-Cola বয়কট করেছে সে বাংলাদেশি কিন্তু Mojo ও বয়কট করতে পারবে সুতরাং আবেগকে হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা না করে, বিনয়ের সাথে ব্যবসা করেন।’
তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়নি বরং মোজোর এই দাম সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে বেড়েছে। তখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মোজোর উৎপাদনকারী মূল প্রতিষ্ঠান আকিজ ভেঞ্চারের ওয়েবসাইটে গত বছরের (২০২৩) ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, গত বছরের (২০২৩) ২৪ নভেম্বর ঢাকার হাতিরঝিলে আয়োজিত ‘To Gaza From Dhaka’ নামে একটি ফান্ডরেইজিং কনসার্টে মোজো ‘Mojo Support Palestine’ নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরুর ঘোষণা দেয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মোজোর প্রতি বোতলের আয় থেকে এক টাকা ফিলিস্তিনের সহায়তায় পাঠানো হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনই মোজোর ফেসবুক পেজেও বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে সমজাতীয় এক দাবির প্রসঙ্গে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আদনান শফিক রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছিলেন, তারা ৪ ডিসেম্বর থেকে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরেও মোজোর ২ লিটারের বোতল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সে সময় এ বিষয়ে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ প্রসঙ্গে আদনান শফিক বলেন, মোজো সর্বশেষ দাম বাড়িয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। কারণ ছিল ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যান্য উপাদানের (বিশেষ করে চিনির) মূল্যবৃদ্ধির কারণে। ঠিক সেই সময় জুলাইয়ে মোজো ১ লিটার ৬০ টাকা এবং ২ লিটার ১০০ টাকা বাজারজাত করে।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোজো ডোনেশন ক্যাম্পিং শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে।
এদিকে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ৮০ টাকায় ২ লিটার মোজো কেনা যাচ্ছিল। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছর মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম আর পরিবর্তন করা হয়নি।
প্রচারিত এই দাবিকে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছেন আদনান শফিক।
পুরোনো ব্যাচের পণ্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৮০ টাকার কেনা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আদনান শফিক জানান, মোজোর প্রতিটা বোতলের মেয়াদ থাকে চার থেকে পাঁচ মাস। তাই এটি সম্ভব নয়।
এ ছাড়া আগে ফিলিস্তিন নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ৫০০ মিলি বোতলের দাম বেড়েছে দাবি করা হলে সে বিষয়টি নিয়েও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
আগের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মূল্যছাড় কিংবা কো-ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য থেকে কিছুটা কম দামে মোজো পাওয়া যেতে পারে।
সুতরাং ফিলিস্তিনের বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরুর পর মোজোর ২ লিটার বোতলের দাম ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মন্তব্য করুন