কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ধানমন্ডিতে গুলিতে নিহত হন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেলে কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ। ফারহান ফাইয়াজের জন্মদিনে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে শেয়ার করেন তার মা। এবার সেই আবেগঘন পোস্টটি শেয়ার করেছেন মেক্সিকোয় নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
সোমবার (২৪ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে ওই পোস্টটি শেয়ার করেন তিনি।
পোস্টের ক্যাপশনে স্মৃতিচারণা করে মুশফিকুল ফজল আনসারী লিখেছেন, ফেসবুক থেকে তুলে শেয়ার করলাম, সেই চিঠিটি! নাড়িছেঁড়া বুকের মানিক হারা মায়েদের আর্তনাদ বৃথা যেতে পারে না। আমাদের অসতর্কতা, অবহেলা, কিংবা পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব যেন হায়েনাদের সুযোগ না করে দেয়। বিদ্বেষ আর জিঘাংসার বিষ যেন আমাদের বাতাসকে ভারী না করে তোলে। গুজবের ডালপালাকে বিদীর্ণ করে আসুন পথ চলি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে—বিশ্বসভায় নতুন পরিচয়ে, বিজয়ীর বেশে, আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত হয়ে।
কালবেলা পাঠকদের জন্য মুশফিকুল ফজল আনসারীর দেওয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
ফেসবুক থেকে তুলে শেয়ার করলাম, সেই চিঠিটি! নাড়িছেঁড়া বুকের মানিক হারা মায়েদের আর্তনাদ বৃথা যেতে পারে না। আমাদের অসতর্কতা, অবহেলা, কিংবা পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব যেন হায়েনাদের সুযোগ না করে দেয়। বিদ্বেষ আর জিঘাংসার বিষ যেন আমাদের বাতাসকে ভারী না করে তোলে। গুজবের ডালপালাকে বিদীর্ণ করে আসুন পথ চলি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে—বিশ্বসভায় নতুন পরিচয়ে, বিজয়ীর বেশে, আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত হয়ে।
ছেলের ১৮তম জন্মদিনে মায়ের সেই চিঠি…
প্রিয় ফাইয়াজ,
আব্বা আমার - আমার কলিজা বাচ্চা,আমার চাঁদের টুকরা। কেমন আছো আব্বা? পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে আজকে তোমার জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। কত কত স্মৃতি আমাদের। আব্বা আমি জানি তুমি খুব ভালো আছো। আমি তোমার জন্য কান্না করলেই মাহা আমাকে বলে ‘মা, ভাইয়া তো শহীদ, ভাইয়া কত ভালো আছে! তুমি কাঁদো কেন?’
জানো বাবা, সেদিন বাজার করতে গিয়ে যেই চকোলেটের শেল্ফ-এর সামনে দিয়ে যাচ্ছি- আমি দেখতে পেলাম ঠিক তুমি দাঁড়িয়ে, আর ক্যাডবেরির একটা বড় সিল্ক-এর প্যাকেট আমাকে দেখিয়ে বলেছ মুনাম্মা নেই এটা? বাবা আমি আর চকোলেট কিনি না, মাহা মাইরীন ও আর আবদার করে না।
সেইদিন মাইরীন মাহাকে বলছে 'জানো মাহা-মা আর কখনও বিরিয়ানি রাঁধবে না। ভাইয়া যে নাই, তাই।' সত্যিই তো বাবা, আমি কী করে রান্না করব বলো? তোমাকেই তো খাওয়াতে পারব না!
আব্বা, আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না? আমি যে কেমন আছি জানি না বাবা- শুধু আমার কিছু ভালো লাগে না। শুধু মনে হয় অনেক দূরে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে যেতে পারতাম-। যেখানে কেউ নাই! চুপচাপ।
আমি যখন স্কুলে যাই বা অন্য কাজে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ক্রস করতে হয়, জানো বাবা আমি পুরোটা রাস্তা চোখ বন্ধ করে থাকি। সিটি হসপিটালের সামনে দিয়ে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাখি। মনে হয় কেন আমাকে এসব পথে চলতে হচ্ছে। ধানমন্ডি ২৭টা এখন সবচেয়ে বিভীষিকাময় আমার জন্য।
আচ্ছা বাবা এই যে তোমার জন্মদিন, রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ, পহেলা বৈশাখ আসবে.. আমি কী করব বলো তো? আমাদের না একসাথে শপিং এ যাওয়ার কথা! তারপর শপিং শেষে পিৎজা আর কফি খেয়ে রিকশা চড়ে গল্প করতে করতে বাসায় ফেরার কথা!
আমি সারাটা দিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি, তুমি যে কত কত উপদেশ দাও আমাকে! কত বড় হয়ে গেছো তুমি আব্বা! জানো বাবা তোমার জন্য যখন দোয়া করি, তখন আমি একটু স্বার্থপর হয়ে যাই। আমি আল্লাহকে বলি, আল্লাহ ফাইয়াজ কি বুঝতে পারছে, ওর জন্য আমি কত কষ্টে আছি? ওকে প্লিজ একটু বলে দিয়েন যে তোমার মুনাম্মা ভালো নাই। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তোমার মুনাম্মার জন্য কঠিন শাস্তি হয়ে যাচ্ছে। আবার মনে হয়, এটা শুনলে হয়তো তোমার মন খারাপ হবে! তখন আবার কথা বদলে ফেলি। শুধু চাই তুমি ভালো থাকো।
তুমি ইনশাআল্লাহ অনেক অনেক ভালো আছো। কারণ, যত মানুষ তোমার জন্য কেঁদেছে আর যত লোক তোমার জন্য দোয়া করছে- তুমি নিশ্চয়ই জানতে পারছো। মাতৃভূমির ক্রান্তিলগ্নে যেই ছেলে বীরের মতো প্রাণ দেয়, তাকে কেউ ভালো না বেসে পারে বাবা? সমস্ত পৃথিবী তোমাকে এখন চেনে, আব্বা।
অনেক ভালোবাসি বাবা, অনেক দোয়া রইল। শুভ জন্মদিন বাবা। তোমার মুনাম্মা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মন্তব্য করুন