সম্প্রতি জান্নাতুন সাফরা নামের একটি শিশুর চিকিৎসার জন্য ১০ থেকে ১১ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহের আবেদন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু শিশুটির আসল নাম মারিয়াম শাকিল আহমেদ (Mariyam Shakeel Ahmed) এবং সে একজন ভারতীয়। এমন সত্যতা উঠে আসে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে।
সংস্থাটি জানায়, ‘Ketto’ নামক একটি ভারতীয় তহবিল সংগ্রহকারী ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়, শিশুটি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে মারা যায়। কিন্তু এই মৃত ভারতীয় শিশুকে বাংলাদেশি দাবি করে আর্থিক প্রতারণা করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ভাইরাল হওয়া এই ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, ‘মোছা. জান্নাতুন সাফরা নামের শিশুটি চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সে রংপুর মেডিকেল এ ক্যান্সার বিভাগে ভর্তি আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ার চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা। এর জন্য ১০ থেকে ১১ লক্ষ টাকার প্রয়োজন।’ ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত বিকাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্টের একটি নম্বরে ফ্যাক্টওয়াচ যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ভাইরাল এই পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠান ‘Ketto’ এর ওয়েবসাইটে একটি আবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ‘Please help me save my daughter from the clutches of deadly bone cancer’ শিরোনামের এই আবেদনে ব্যবহৃত শিশুর ছবির সঙ্গে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত শিশুর ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়। আবেদনটি থেকে জানা যায়, শিশুটির নাম মারিয়াম শাকিল আহমেদ (Mariyam Shakeel Ahmed) যার মায়ের নাম খাতিজা (Khatiza)। মারিয়ামের বাবার নাম উল্লেখ না করে কেবল বলা হয়েছে তিনি একজন অটোচালক।
আবেদনটিতে যুক্ত করা বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাপত্র এবং খাতিজার বিবৃতি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মারিয়াম একজন ভারতীয়। সে হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। মরিয়মকে সুস্থ করার জন্য জরুরি অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি কেমোথেরাপির জন্য ৫১ হাজার ৭২৪ মার্কিন ডলার প্রয়োজন ছিল। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট মরিয়ামকে মুম্বাইয়ের যশলোক হাসপাতালে (Jaslok Hospital) ভর্তি করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ‘Ketto’ নামের এই ওয়েবসাইটে যেই রোগীর জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়, তার ব্যাপারে আপডেট দেওয়া হয়। মরিয়ামের চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহের আবেদনটিতে দুই বছর আগে খাতিজা তার মেয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেট দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন মরিয়াম মারা গেছে।
অর্থাৎ, মৃত শিশুটির নাম এবং জাতীয়তা বদলে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এর আগে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে এমন কিছু আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণামূলক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন