অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি আরও দুই ছাত্র প্রতিনিধিকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের সফরে চীন গেছেন। ওই দলে ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিনও রয়েছেন। সেখান থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ স্ট্যাটাস দেন।
তিনি নাহিদের উদ্দেশ্যে লেখেন, জনাব নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নতুন পথচলায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি তার নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক দল গঠিত হবে তারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর অটল থাকবে।
নাসির উদ্দিন লেখেন, নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা যাতে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক চেতনা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা এবং গোপন তৎপরতার রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে।
তিনি আরও লেখেন, নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করার অব্যবহিত পরেই দলের দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনায় এটা সুস্পষ্ট যে, দল গঠনের জন্য বিগত দিনগুলোতে যে প্রক্রিয়া চলেছে, নাহিদ ইসলাম সরকারে থেকেও সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দল গঠন প্রক্রিয়ার কিছু না জেনেই হঠাৎ করে দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিবেন, এমন যুক্তি অবিশ্বাস্য।
ছাত্রদলের সেক্রেটারি বলেন, নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলেও সরকার নিরপেক্ষ থাকবে না। আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম ডিফ্যাক্টো নতুন দলের নেতা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা নতুন দলের হয়েই করবেন। বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া অসম্ভব। সরকারকে নিরপেক্ষ করতে হলে সব ছাত্র-প্রতিনিধিকে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারের সঙ্গে বিশেষ সখ্য পরিহার করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। এই দলের নেতৃত্ব দেবেন নাহিদ ইসলাম। সে কারণে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন পদত্যাগ করেই তিনি নতুন দলে যোগ দেবেন। আজকে তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সে পথ অনেকটা সুগম হলো।
নাহিদ ইসলামের জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায়। তার ডাকনাম ‘ফাহিম’। নাহিদের বাবা শিক্ষক। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ইতোমধ্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাহিদের ছোট এক ভাই রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত।
জুলাই মাসেও নাহিদ ততটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। কিন্তু জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তাকে অপহরণ করা হলে দেশব্যাপী তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে তাকে দু’বার আটক করা হয়। এ সময় তিনি অকথ্য নির্যাতনেরও শিকার হন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
মন্তব্য করুন