সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারার নামে একটি ফেসবুক পেজে যৌন উত্তেজক ওষুধের একটি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘Valentine is not our culture. #SayNoToValentine #SayNoToValentineDay’.
পোস্টে অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি ডা. তাসনিম জারা প্রচার করছেন।
তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছে, এই পেজের মালিক ডা. তাসনিম জারা নন এবং তিনি এসব ওষুধ বিক্রি করেন না।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি ডা. তাসনিম জারা প্রচার করেননি বরং, তার নামে চালু থাকা ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হয়েছে; যা পরে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ডা. তাসনিম জারার ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিতে সর্বশেষ এক মাসে হওয়া সকল পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত বিজ্ঞাপনটি পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত বিজ্ঞাপনটি ডা. তাসনিম জারার ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হওয়ার পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তা ছাড়া প্রচারিত বিজ্ঞাপনটির স্ক্রিনশটে তাসনিম জারার যে প্রোফাইল ছবিটি দেখা যায়, তার সঙ্গে তাসনিম জারার ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ছবির পার্থক্য দেখা যায়। প্রচারিত বিজ্ঞাপনের প্রোফাইল ছবিতে থাকা ছবিটি তাসনিম জারা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের প্রোফাইল ছবি হিসেবে ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতেই পরিবর্তন করেছিলেন।
তবে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, তাসনিম জারার নামে ওই ফেসবুক পেজে ভেরিফায়েড টিক চিহ্ন নেই। এ থেকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তাসনিম জারার নামে আলোচিত বিজ্ঞাপন প্রচার করা ওই পেজটি ভিন্ন কোনো ফেসবুজ পেজ।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা ফেসবুক পেজ খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। প্রোফাইল ছবিতে ডা. তাসনিম জারার ছবি ও ডা. তাসনিম জারার নামে ওই ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এর ফলোয়ার সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ১০০। অন্যদিকে তাসনিম জারার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। এ ছাড়া তাসনিম জারার ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট দুটিই ভেরিফায়েড টিক চিহ্ন সংবলিত হলেও ওই ফেসবুক পেজে ভেরিফায়েড টিক চিহ্ন নেই।
তা ছাড়া ওই ফেসবুক পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ২০ জুনে পাইলস হেলথ কেয়ার নামে তৈরি করা হয়েছিল; যা পরে গত ৩ ফেব্রুয়ারিতে নাম পরিবর্তন করে পেজটির নাম ডা. তাসনিম জারা করেছে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডা. তাসনিম জারার নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত বিজ্ঞাপনটি ডা. তাসনিম জারার বিজ্ঞাপন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ ছাড়া এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ডা. তাসনিম জারার নামে আগে প্রচারিত এরূপ আরেকটি বিজ্ঞাপনের বিষয়ে ‘ডা. তাসনিম জারা অফিশিয়াল গ্রুপ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে সাহিদুল ইসলাম খোকন নামের একজন জিজ্ঞাসা করেন। উক্ত গ্রুপ পোস্টে ডা. তাসনিম জারা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মন্তব্য করেন, ‘এরা প্রতারণা করছে। এদের থেকে সাবধান থাকবেন।’
সুতরাং, ডা. তাসনিম জারার নামে পরিচালিত ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে আমেরিকান ফর্মুলায় যৌন উত্তেজক ওষুধের বিজ্ঞাপনকে ডা. তাসনিম জারা কর্তৃক প্রচারিত আসল বিজ্ঞাপন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
মন্তব্য করুন