কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলনে ৯ দফায় শিবিরের ভূমিকা কী ছিল, জানালেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের

আন্দোলনে ৯ দফায় শিবিরের ভূমিকা
আব্দুল কাদের। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ৯ দফায় ছাত্রশিবিরের কী ভূমিকা ছিল ছিল, সেটি পরিষ্কার করেছেন সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘নয় দফা দেওয়ার সময় শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সেক্রেটারির সাথে ঘণ্টা দুয়েকের মতো আলাপ-আলোচনা হয়, অনেক বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফাইনাল করা হয় এবং ওই দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সব সাংবাদিককে আমি ম্যাসেজ করে, ফোন দিয়ে ৯ দফা পৌঁছে দিছি। আমার কাছে ক্যাম্পাসের সব সাংবাদিকের নম্বর ছিল, সবার কাছে পৌঁছে দিছি।’

তিনি লেখেন, ‘ইন্টারনেট ডাউন করে দেওয়ার কারণে সিম থেকেও ম্যাসেজ ডেলিভারি হতো না, এক দফা এক দফা করে পাঠিয়েছি, ফোন দিয়ে আমি মুখে দফাগুলো বলেছি, সাংবাদিকরা লিখে নিছেন, রেকর্ড করে নিছেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নম্বর আমার কাছে ছিল না, ওরা আমাকে নম্বর পাঠিয়েছে, আমি এক এক করে সবাইকে ম্যাসেজ দিছি। তারপর ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি, এটা যে আমি আব্দুল কাদের। তখন স্বাভাবিকভাবেই চাপ ছিল, আর সাংবাদিকরা তো কনফার্ম না হওয়া ছাড়া কোনোকিছু ছাপাবে না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া নম্বর অন করতাম, সবাইকে কর্মসূচি পাঠাতাম, এইভাবে চলতে থাকত রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এটা শুরুর দিকের কথা। কর্মসূচি আলাপ আলোচনা করেই ঠিক হতো। সাদিক ভাই আমাকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের কন্টাক্ট নম্বর দিত, তাদেরকে আমি ফোন দিয়ে রিকুয়েস্ট করতাম, নয় দফাটা আমার পক্ষ থেকে যাচ্ছে, আমি আব্দুল কাদের, আপনারা এটা নিয়ে একটু লেখেন...’

আব্দুল কাদের লেখেন, ‘ক্যাম্পাসসহ সকল মিডিয়া প্রতিনিধিরা জানে নয় দফার বিস্তারিত। প্রচারের ক্ষেত্রে শিবিরের অবশ্যই অবদান আছে, সেটা অস্বীকার করি নাই। কিন্তু এইভাবে পুরা ইতিহাস পরিবর্তনের নোংরা খেলায় শিবির মাতল কেন? আবু সাঈদসহ পাঁচজন শহীদ হওয়ার পর ১৬ জুলাই রাতে আমরা অনলাইন মিটিং করে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সামনের পরিকল্পনা ঠিক করি, একই সঙ্গে সরকারের সংলাপের আহবানের প্রেক্ষিতে কিছু দাবিদাওয়া ঠিক করি। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সেগুলা ফরমালি উপস্থাপন করা হয়নি। যখনই সিনিয়র কারও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, পরিস্থিতি বেগতিক, শিবিরের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, আমি আমাদের পূর্বের সেই রাতের দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে ফরমালি কিছু দাবি দিতে সম্মত হই। শিবির প্রথম দফা দাবি দিয়েছিল, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি ওই পরিস্থিতি এবং সময়ের আলোকে সেটাকে সুইটেবল মনে করি নাই, এইভাবে সরাসরি ছাত্রদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের দাবি ওই সময়ে উঠা সমীচীন মনে হয়নি আমার কাছে। কিন্তু শিবির নিজেদের অবস্থানে অনড়। একইভাবে আমিও। পরবর্তী আলাপ আলোচনা শেষে পরিবর্তিত রূপ আসে। শিবির ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দিয়েছিল, আমি শক্তভাবে অপোজ করছি, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কাদের লাভ, সেটা তো আমি জানি। তারা এই দাবিতেও গোঁ ধরে ছিলেন। পরে আমার শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আসে। এই দুইটাই তো মেইন। বাকি দাবিগুলা কমন দাবি ছিল সবার, অনলাইনেও মানুষজন লেখালেখি করেছিল এমন দাবি নিয়ে।’

তিনি লেখেন, ‘আগস্টের কিছুদিন পরে ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক ভাই আমাকে গভীর রাতে অনেকবার ফোন দিল, দেখা করতেই হবে। ভোর রাতের দিকে দেখা করলাম ভিসি চত্বরে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ হলো, একটাই কথা তার-তাদের সম্পর্কে আমি যেনো কিছু লিখি। তারা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও এক্সেস পাচ্ছে না। আমি না লিখলে হবে না। আমি লিখলাম, ইতিহাসের কাছে আমি দায়বদ্ধ থাকতে চাই না, কারও অবদানকে অস্বীকার করলে আমি ইহকাল এবং পরকালে দায়ী থাকব। যেহেতু আমি অনেক কিছু জানি, অনেক কিছুর অংশ ছিলাম, আল্লাহ সুযোগ করে দিছে। জাগতিক পাওয়া না পাওয়া ঊর্ধ্বে গিয়ে অনেকে ‘না’ করা সত্ত্বেও লিখলাম। আমার লেখার পরে শিবিরের আলাপ সামনে আসে। শিবির বিভিন্ন জায়গায় দর কষাকষির সুযোগ পায়। কিন্তু বিনিময়ে শিবির কী করল? আমাকে কখন কোথায় নাস্তা খাওয়াইছে, কখন গেঞ্জি কিনে দিছে সেটা প্রচার করতে লাগল। নয় দফা নিয়ে তারা পুরা ইতিহাস-ই চেঞ্জ করে দিল!’

আব্দুল কাদের আরও লেখেন, ‘শেখ হাসিনার পতন না হলে আমি আব্দুল কাদেরের কল্লা যাইতো, শিবিরের সাদিক-ফরহাদসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডার দাবিদারদের কিছুই হতো না। কারণ, তারা তো সবাই অদৃশ্য, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের-ই হইতো না, ইভেন ফেসবুকেও একটা অক্ষর লিখে নাই। বলি হলে আমি হইতাম। হাসিনা তিনজনকে পদ্মায় ডেকে নিয়ে ৮ দফা দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার ছক পুরোপুরি ফাইনাল করে ফেলছিল, সেই পরিস্থিতি নয় দফা দিয়ে হাসিনার পুরো গেম প্ল্যান ভেঙে দিলাম। আসিফ ভাই দুবার ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাইছে, ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে ফোন দিছে, বারবার করে হুঁশিয়ার করে দিছে, সাবধানে থাকতে, আমাকে পাইলেই মেরে ফেলবে। জীবন বাজি রেখে সাত-পাঁচ না ভেবে আন্দোলনের ক্রুশিয়াল মোমেন্টে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম আর এখন এসব দেখা লাগতেছে!’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমিত্ব ভাব পরিত্যাগ করতে হবে : চরমোনাই পীর

আগে স্থানীয়, সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন চান জামায়াত আমির

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসে ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড অ্যাডমিশন ফেয়ার

অসামাজিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬

ইসরায়েলি কারাগারে ৪৫ বছর, কে এই নায়েল বারঘুতি

সিএ কর্মকর্তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো, মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ২

মুশফিকুল ফজল আনসারির প্রসংসা করে মার্কিন কূটনীতিকের এক্স বার্তা

পাঠ্যপুস্তকে আল মাহমুদের লেখা পুনর্বহালের দাবি

জামায়াত নেত্রী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম

যুদ্ধবিরতির পর মুক্তি পাচ্ছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দি

১০

যশোর বিএনপির সভাপতি সাবু, সম্পাদক খোকন

১১

জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে গৃহবধূ নিহত

১২

আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাদের ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা তরুণী

১৩

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত মানবাধিকার কমিশনকে দেওয়ার সুপারিশ

১৪

সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা / ধরাছোঁয়ার বাইরে বেশিরভাগ আসামি

১৫

আমি শেখ হাসিনার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি : বাবুল

১৬

বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা আইনের বাস্তবায়ন চান আজহারি

১৭

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষক দলের কমিটি বিলুপ্ত

১৮

বইমেলায় গল্প সংকলন ‘ফিসফিসানি’র মোড়ক উন্মোচন

১৯

হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজল বই, কমলো দর্শনার্থী

২০
X