বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি আদেশ জারির মাধ্যমে সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কন্টেন্ট প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে সম্প্রতি কতিপয় ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে, ওই আদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা নিয়ে কন্টেন্ট প্রকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা বিষয়ে পাকিস্তানকে দায়ী করা ও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ পাকিস্তানি নেতাদের সমালোচনা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালের সব নথি ও ভিডিও ফুটেজ ধ্বংস করতে বলা হয়েছে।
তবে তথ্যে সত্যতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ঘটনা সঠিক নয়।
সংস্থাটির অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান কর্তৃক সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কন্টেন্ট প্রচার নিষিদ্ধের সংবাদটি সঠিক নয় বরং, বাংলাদেশ বেতারের সব কেন্দ্র/ইউনিটের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজগুলো থেকে সরকারি নীতিমালাবহির্ভূত সব ধরনের ছবি, তথ্য এবং কন্টেন্ট অপসারণের নির্দেশে একটি অফিস আদেশের তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ বেতারের ওয়েবসাইটে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি অফিস আদেশের নোটিশ খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকের পক্ষে অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম কর্তৃক গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বেতারের সব কেন্দ্র/ইউনিটের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজগুলো পর্যালোচনা করে সরকারি নীতিমালাবহির্ভূত সব ধরনের ছবি, তথ্য এবং কন্টেন্ট অপসারণপূর্বক ২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টার মধ্যে সদর দপ্তরের প্রশাসন শাখাকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এই অফিস আদেশ পর্যালোচনা করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিংবা পাকিস্তান প্রসঙ্গে কোনো তথ্য বা আদেশের উল্লেখ করা হয়নি।
এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের একটি ফেসবুক পেজ থেকেও এ বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছে। ওই পোস্টে ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. ইউনূস কর্তৃক রেডিও ও টেলিভিশনে সেন্সরশিপ আরোপের ভিত্তিহীন দাবির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টাকে নিশ্চিত করেছে যে তারা বর্তমান গণমাধ্যমের ওপর কোনো ধরনের সেন্সরশিপ আরোপ করেনি এবং এর কোনো উদ্দেশ্যও নেই।
মন্ত্রণালয় তাকে আরও জানিয়েছে যে তারা শেখ হাসিনার শাসনামলের কিছু বিতর্কিত বিষয়বস্তু তাদের আর্কাইভ থেকে সরিয়ে ফেলেছে এবং সহিংসতা উসকে দিতে পারে গণমাধ্যম থাকা এমন বিষয়বস্তু অপসারণে তাদের যথাযথ ও আইনি দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।
সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান কর্তৃক সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কন্টেন্ট প্রচার নিষিদ্ধ দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মন্তব্য করুন