অবৈধ উপায়ে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবির শিকার হয়ে মারা যাওয়া ২৩ জনকে লিবিয়ায় দাফন করা হয়েছে। লিবিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, নিহতরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।
শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার ফেসবুক লাইভে এসব তথ্য জানান।
লিবিয়া রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে খায়রুল বাসার বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ৫৬ জন অভিবাসী নিয়ে একটি নৌকা সাগরপথে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। খুব সম্ভবত সেদিনই রাতেই নৌকাটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়। গত ২৮, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি এই তিনদিন লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে ব্রেগা নামক এলাকায় নিহতদের লাশগুলো ভেসে আসতে থাকে। ২৮ জানুয়ারি ৭ জন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি দু’জন ও ৩১ জানুয়ারি আরও তিনজন, মোট ২৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত লাশগুলো লিবিয়ার আজ-দাবিয়া শহরে দাফন করা হয়েছে। এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং লিবিয়া রেড ক্রিসেন্ট আমাদের জানিয়েছে এসব লাশ ডিকমপোস্ট হয়ে গিয়েছিল। লাশগুলো সংরক্ষণ করার কোনো উপায় ছিল না। তারা আমাদের জানিয়েছে, লাশগুলোর অবয়ব দেখে মনে হয়েছে নিহত ব্যক্তিরা বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, তাদের কাছে কোনো এনআইডি বা পাসপোর্ট ছিল না। এ কারণে লাশগুলোকে বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা লাশগুলোকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ৫৬ জনের মধ্যে ২৩ জনের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। দুইজনকে খুবই মুহূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাদেরও পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্য যে ৩১ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন, তাদেরও কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার যে অদম্য আগ্রহ কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। ২০২৩ সালের জুনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেড় বছরে লিবিয়ার জেলখানা, ডিটেনশন সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে প্রায় ৪ হাজার ২০০ বাংলাদেশিকে আইওএমর (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) সহায়তায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ফেরত আসা ব্যক্তিদের অনুরোধ করা হয়েছে, তারা অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে যে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন, সেসব অভিজ্ঞতা নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদেরও জানাতে হবে। যাতে তাদের ভাগ্যে এমনটা না হয়। আর যে দালালদের কারণে তারা প্রতারণার শিকার হলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কতজন এ অনুরোধ রেখেছে, তা জানি না। অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার মিছিল জারি রয়েছে। অন্তত চার-পাঁচটি ফ্লাইটে ত্রিপোলি ও মিসরাতাসহ লিবিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠাতে চার-পাঁচটি ফ্লাইট লাগবে, এমন সংখ্যক লোকের তালিকা এখন আছে। এই মিছিল কমে শেষ হবে আমি জানি না।
এ সময় রাষ্ট্রদূত অবৈধ উপায়ে মানব পাচারে যেসব মাফিয়া ও দালাল চক্র জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেন।
মন্তব্য করুন