গত বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জুলাই মাসে এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটে। এই গণআন্দোলন পরে ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিতি পায়।
সম্প্রতি ঢাবির বর্তমান উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একটি ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি গত জুলাই আন্দোলনে দিকনির্দেশনার ফোনালাপ।
তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মামুন আহমেদের আলোচিত ফোনালাপটি ২০২৪ সালের নয়, বরং এই অডিও ২০১৮ সালের।
আলোচিত ফোনকলের বিষয়ে অনুসন্ধানে, জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ‘কোটাব্যবস্থা নিয়ে ঢাবি শিক্ষককে যা বললেন তারেক রহমান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, ‘২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন চলাকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোটাব্যবস্থা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেছিলেন।’ এই কথোপকথনের বিষয়টি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কাছে স্বীকার করেছেন অধ্যাপক মামুন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল ২০১৮) সন্ধ্যার পর তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’
পাশাপাশি ওই প্রতিবেদনে তারেক রহমানের সঙ্গে অধ্যাপক মামুন আহমেদের সম্পূর্ণ ফোনালাপ তুলে ধরা হয়, যার সঙ্গে আলোচিত ফোনালাপের হুবহু মিল দেখা যায়।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ‘Bangla Voice24’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এ ফোনকলের অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। যার সঙ্গেও আলোচিত ফোনালাপের মিল পাওয়া যায়।
একই দিন যমুনা টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ফোনালাপের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি সমমনা কোনো শিক্ষককে আন্দোলনে সমর্থন দিতে বলেন, তাতে অন্যায়ের কিছু নেই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একই বিষয়ে বলেন, ‘একটি যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যকে তারেক রহমান ফোন দিতেই পারেন। এই ফোনালাপ স্বাভাবিক ঘটনা।’
অর্থাৎ আলোচিত ফোনালাপটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম দফার সঙ্গে সম্পর্কিত।
সুতরাং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন নিয়ে ড. মামুন আহমেদ ও তারেক রহমানের পুরোনো ফোনালাপ ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
মন্তব্য করুন