সম্প্রতি এক আহত নারীর দুটি ছবি যুক্ত করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৌদ্ধ নারীকে নির্যাতন করছে বলে একটি দাবি এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হয়েছে। ভয়েস অব বাংলাদেশ হিন্দুস নামের এক্স আইডিতে গত ১২ জানুয়ারি এ দাবি-সংবলিত একটি পোস্ট করা হয়।
তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোনো নারীকে নির্যাতন কিংবা অপহরণ শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বলে রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিম বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানতে পারে, একই ছবি গত বছরের আগস্টেও প্রচার হয়েছে। সে সময়ের কিছু পোস্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক অপরিচিত গারো মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে শীর্ষক দাবির উল্লেখ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীকে নির্যাতন কিংবা অপহরণ শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাজেক ঘুরতে যাওয়া ওই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপদে স্থানে নেয় সেনাবাহিনী। এ ছাড়া ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং এটি গত বছরের আগস্টের ঘটনা।
প্রাথমিকভাবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে একজন আহত নারীকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তার পাশে এলাকার নারী ও শিশুদের উপস্থিতি রয়েছে। সেনাবাহিনীকে ভিডিওতে আহত নারীকে দৃশ্যত উদ্ধার করে গাড়িতে তুলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা সেনাবাহিনীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই নারীর সঙ্গে একই টি-শার্ট পরিহিত কয়েকজন বাঙালি যুবককে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার গত বছরের (২০২৪) আগস্টের বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পায়, যেগুলোতে ওই ঘটনার একটি ভিডিও প্রচার করে সেনাবাহিনী অপরিচিত গারো মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। অনুসন্ধানে ঘটনাটি গত বছরের ১৬ আগস্ট ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার ঢাকা থেকে আসা সাতজন বন্ধুর সঙ্গে এই নারীও পর্যটক সাজেক ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। পথে মাচালং ব্রিজপাড়া এলাকায় কয়েকজন দুর্বৃত্তকারী তাদের গাড়ি গতিরোধ করে। এ সময় গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে ওই নারীকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাবাহিনী টহল দলের উপস্থিত দেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় একজন দুর্বৃত্তকে সেনাবাহিনী আটক করে।এ সময় ওই এলাকায় উপস্থিত প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন গ্রামবাসী সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘেরাও করে। তারা অপহরণকারী দুর্বৃত্তকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং উদ্ধারকৃত পর্যটককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়।
এ সময় গ্রামবাসী অপহরণে বাধাপ্রদানকারী আরও চারজন পর্যটককে মারধর করে। উত্তেজিত গ্রামবাসীর বাধা প্রদান সত্ত্বেও সেনাবাহিনী অপহরণ চেষ্টার শিকার পর্যটককে নিকটস্থ ক্যাম্পে নিরাপদে নিয়ে যেতে সমর্থ হয় এবং আহত পর্যটকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। অতঃপর সেই পর্যটককে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ কর্তৃক ওই পর্যটককে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অর্থাৎ রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, একজন প্রত্যক্ষ দর্শনার্থীর বক্তব্য সব মিলে দ্বিতীয় বর্ণনাটির সত্যতা প্রতীয়মান হয়।
সুতরাং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বৌদ্ধ বা গারো নারীকে নির্যাতন ও অপহরণের দাবিটি মিথ্যা।
মন্তব্য করুন