জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খানের নতুন বিয়ের খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদিন ধরে হইচই-শোরগোল পড়ে গেছে। তাদের নিয়ে ফেসবুকে ভক্ত-সমালোচকরা দিচ্ছেন নানা মতামত। তারা তাহসান-রোজা-মিথিলা౼ কে জিতল, কে হারল, এমন তুলনামূলক আলোচনা করেও মাতিয়ে রাখছেন মুহূর্ত।
তবে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মতে, মিথিলা ও রোজা দুজনই জিতেছেন। দুই নারীই নারীবিদ্বেষী সমাজের তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) এক ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে তাহসান ও রোজার বিয়ে নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তসলিমা নাসরিন।
স্ট্যাটাসে তসলিমা লিখেছেন, ‘ফেসবুক ছেয়ে গেছে “তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে” রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান?’
‘আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সি হয়েও একটা ‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’ পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা “জিতে যাওয়া”ই মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত-মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।’
‘তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা ও স্বাধীনতা অর্জন করেছে౼নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভালো না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক, সে স্বামী হোক; ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে౼ জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত।’
‘স্বামীর আচার-ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে একা বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জের জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।’
মন্তব্য করুন