ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা তার অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে গুরুতর ক্ষতি করেছেন এবং তাকে তার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডিতে ওই পোস্টে তিনি আওয়ামী লীগকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, শেখ হাসিনা আমার বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন। আমাকে তিনি আমার পৈতৃক সম্পত্তির কানাকড়িও পেতে দেননি। সম্পত্তি পেতে হলে আমাকে দেশে উপস্থিত থাকতে হবে অথবা দেশের কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হবে, যে আমার হয়ে সম্পত্তি বুঝে নেবে অথবা বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে যেহেতু শেখ হাসিনা দেশে ঢুকতে দেননি, আমি আমার বোনকে পাওয়ার অব এটর্নি দিয়েছিলাম। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ডকুমেন্ট বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়। তবে শেখ হাসিনার নির্দেশে বা ভয়ে দূতাবাসের কেউ তার পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সত্যায়িত করেননি বলে অভিযোগ করেছেন এই লেখিকা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা অবিশ্বাস্য রকম নিষ্ঠুর ছিলেন মন্তব্য করে নির্বাসিত এই লেখক বলেন, কী কারণে তিনি আমার পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড ‘আমার মেয়েবেলা’ নিষিদ্ধ করেছিলেন, তা তিনিই জানেন। অদ্ভুত হিংসে, ঘৃণা আর দম্ভে তিনি আচ্ছন্ন থাকতেন। তার ভয়ে প্রকাশকরা বাংলাদেশে আমার বই প্রকাশ করতেন না। তিনি নিষিদ্ধ করবেন আমার বই, আমার বই প্রকাশ করলে প্রকাশকদের হেনস্তা করবেন- এ ভয় ছিল প্রকাশকদের।
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষতি করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরং তার পক্ষে কথা বলেছি বহুবার। তিনি নির্বাচনে জিতুন, তিনি বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনুন, এমন আশা ব্যক্ত করেছি বহুবার। খালেদা জিয়া যাকে অন্যায়ভাবে নির্বাসনদণ্ড দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার তার প্রতি সহানুভূতি থাকার কথা, অথচ তিনি ছিলেন একই রকম ভিনডিকটিভ।
তিনি নিজের বাবাকে নিয়ে কত যে হাহাকার করতেন, অথচ অন্যের বাবাকে তিনি দুই পয়সার মূল্য দিতেন না। যেন তার বাবাই বাবা, অন্যের বাবারা বাবা নয়। অসম্ভব স্বার্থান্ধ মানুষ ছিলেন।
তসলিমার মৃত্যুশয্যায় থাকা বাবাকে দেখতে দেশে ফেরার জন্য শতবার অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু শেখ হাসিনা বাধা দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমার বাবা যখন মৃত্যুশয্যায়, আমি দেশে ফেরার জন্য আকুল ছিলাম। বাবাকে একবার শেষবারের মতো দেখতে চেয়েছিলাম। তাকে শতবার অনুরোধ করেছিলাম যেন আমাকে দেশে ফিরতে বাধা না দেন। তিনি বাধা দিয়েছিলেন, তিনি আমার অনুরোধের দিকে ফিরেও তাকাননি। আমাকে দেশে ফিরতে দেননি। আত্মম্ভরিতা শেখ হাসিনাকে খুব হীন ও নীচ বানিয়েছিল।
তসলিমা নাসরিন তার পোস্টে শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, তার হীনতা আর নীচতার প্রতিশোধ আমি কিন্তু নিচ্ছি না। আমি চাই, সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করুক এবং স্বাধীনতার শত্রুদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি জোট বাঁধুক।
তসলিমা নাসরিনের এই পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে সমর্থকরা তার সাহসের প্রশংসা করছেন, অন্যদিকে অনেকে সমালোচনা করে এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন।
মন্তব্য করুন