আনন্দবাজার পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিদিনসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমে ঢাকার উত্তরা এলাকায় ইসকনের এক সদস্যের ওপর হামলার যে তথ্য প্রচার করেছে, সেটি মিথ্যা ও মনগড়া বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস থেকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরা এলাকায় ইসকনের একজন সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে মর্মে দাবি করেছে এবিপি আনন্দ ও সংবাদ প্রতিদিনসহ ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ঢাকার উত্তরা এলাকার শ্রী শ্রী রাধারমন মন্দিরের (ইসকন উত্তরা) পুরোহিত কৃষ্ণ প্রিয় নিতাই দাস জানিয়েছেন, উত্তরা এলাকায় কোনো ইসকন ভক্ত বা সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা তার জানা নেই। ঢাকার পুলিশও জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘটনার খবর তারা পাননি।
এতে আরও বলা হয়, ভারতীয় মিডিয়া ‘ভুক্তভোগীর’ কোনো বক্তব্য বা পরিচয় প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ পুলিশ অথবা কোনো ইসকন নেতারও বক্তব্য নেই এসব প্রতিবেদনে, যা সার্বিক বিবেচনায় খবরগুলোকে অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাংবাদিকতার নীতি বহির্ভূত হিসেবে চিহ্নিত করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসকনের কেন্দ্রীয় নেতা হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, উত্তরায় সম্প্রতি সংঘটিত একটি পারিবারিক ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া চেষ্টা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পারিবারিক ঘটনায় সম্পৃক্ত যুবক ইসকন সদস্য নয়।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত ভুয়া খবর প্রকাশের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
এদিকে স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১২ আগস্ট থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতীয় ৪৯টি সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্তত ১২০টি মিথ্যা প্রতিবেদন ছড়িয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের তথ্যমতে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে গুজব ও ভুয়া খবর প্রচারে শীর্ষে রয়েছে রিপাবলিক বাংলা, হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, লাইভ মিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ ও আজতক।
গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভারতসহ একাধিক দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও অপতথ্যের এই প্রবাহের প্রসারে ভূমিকা রেখেছেন। এই তালিকায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্তত দুজন রাজনীতিবিদ (শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল), পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া, সুইডেনে একাধিকবার কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্ত সালওয়ান মোমিকা, দীর্ঘদিন ধরে ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন ও ভারতীয় গণমাধ্যম অপি ইন্ডিয়ার সম্পাদক নূপুর শর্মার মতো ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার। এর মধ্যে একটি পোস্টই ১ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। এসব অপতথ্য গণমাধ্যমের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ছাপিয়ে প্রচার হয়েছে টেলিভিশন এবং প্রিন্ট সংস্করণেও। এর ফলে অগণিত মানুষের কাছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ক্রমাগত ভুল তথ্য সংবলিত বার্তা গিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ ও ভারত এ দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়। দুই দেশের নিরাপত্তার জন্যও এটি শঙ্কার কারণ হয়ে উঠতে পারে। রিউমর স্ক্যানার আশঙ্কা করছে, সামনের দিনগুলোয় অপতথ্যের প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন