সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি চট্টগ্রামে হিন্দু নারীদের গণধর্ষণের ঘটনার। তবে এটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করে সংস্থাটি বলছে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চট্টগ্রামে হিন্দু নারীদের গণধর্ষণের কোনো ঘটনার নয়, বরং গত ২৯ নভেম্বরের ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওকে ওই দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওতে নারীদের ধর্ষণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
সংস্থাটি বলছে, আলোচিত দাবিটি যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সন্দীপ টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ নভেম্বর ‘চট্টগ্রামে বান্ডেল রোড, পাথরঘাটা। কোতোয়ালিতে টান টান উত্তেজনা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওতে উল্লিখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটার বান্ডেল রোড এলাকার। এ ছাড়া একাধিক ফেসবুক পোস্ট সূত্রেও ওই ভিডিওটি গত ২৯ নভেম্বরে চট্টগ্রামের পাথরঘাটার বান্ডেল রোড এলাকার বলে জানা যায়।
তারা আরও জানায়, পরবর্তী অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের স্থানীয় গণমাধ্যম সিভয়েস২৪-এর ওয়েবসাইটে গত ২৯ নভেম্বর ‘পাথরঘাটায় উত্তেজনা, শান্ত করলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাডভোকেট সাইফুল হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গত ২৯ নভেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল চলাকালে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জুমার নামাজের পরপর একদল লোক কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে জড়ো হয়। খবর পেয়ে আরেক পক্ষের লোকজনও সেখানে জড়ো হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমিও ঘটনাস্থলে এসেছি। এখানে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা এসে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ভাঙচুর বা কেউ আহত হয়নি। এ ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি।’
তথ্য যাচাই সংস্থাটি বলছে, অর্থাৎ উক্ত ঘটনায় স্থানীয়রা ধর্ষণের কোনো দাবি করেনি। ওই দিনের ঘটনায় থানায় ধর্ষণের কোনো মামলা বা অভিযোগ করার তথ্যও পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে হিন্দু নারীদের গণধর্ষণের কোনো সংবাদ খুঁজে পায়নি।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে চট্টগ্রামে হিন্দু নারীদের গণধর্ষণের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে রিউমর স্ক্যানার।
মন্তব্য করুন