মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলন নিয়ে স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা দিলেন গুগল ইঞ্জিনিয়ার সবুর

গুগলের ইঞ্জিনিয়ার জাহেদ সবুর। ছবি : সংগৃহীত
গুগলের ইঞ্জিনিয়ার জাহেদ সবুর। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলন নিয়ে গুগলের ইঞ্জিনিয়ার জাহেদ সবুর বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে যেমন প্রশংসিতও হয়েছেন, তেমনি নিন্দিতও। তার কিছু পোস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ইঞ্জিনিয়ার জাহেদ সবুর তার নিজের কিছু পোস্টের সমালোচনা করেছেন, দিয়েছেন ব্যাখাও।

তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, আপনারা যারা আমার ১৬ এবং ১৭ জুলাইয়ের পোস্টগুলোতে কষ্ট পেয়েছেন তাদের জন্যে এ পোস্টটি লিখতে বসা। প্রায়ই ব্যস্ততার কথা বলি কিন্তু কাজের গোপনীয়তার কারণে ঠিক কি নিয়ে ব্যস্ত সেটা আর বলতে পারি না। আর মাত্র কয়েকটা দিন, এই সপ্তাহের মেইড বাই গুগল, অর্থাৎ গুগলের বছরের সবচেয়ে বড় টেক ইভেন্টে প্রকাশ হতে যাচ্ছে আমার টিমের কাজের পরবর্তী অধ্যায়। তাতে অংশ নিয়ে সহায়তা করতে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ থেকে সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। এখন ১২ ঘণ্টার লম্বা ফ্লাইটে বসে প্রথমবারের মতো বাকি হাজারো চিন্তা পাশে রেখে আমার বিগত পোস্টগুলো নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার সুযোগ পেয়েছি। হাতে যথেষ্ট সময় আছে, তাই তাড়াহুড়ো করব না, কোনো শর্টকাট নেবো না, কোন অজুহাত বা অন্যের দোষ না দিয়ে বরং নিজের প্রতি যথাসম্ভব ক্রিটিক্যাল হওয়ার চেষ্টা করব। পোস্টটা লম্বা হয়ে যাবে তবু অনুরোধ রইলো কষ্ট করে পড়বেন।

গুগলের এই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, গত ১৬ জুলাই তার পূর্ববর্তী সপ্তাহে ছুটিতে সান্তোরিনি এবং ন্যাক্সোসে থাকাকালীন তোলা কিছু গ্রিক খাবারের ছবি পোস্ট করি। পোস্ট করার আনুমানিক ৩ ঘণ্টা পর লক্ষ্য করি যে প্রায় কয়েকশ মানুষ দেশের এমন কঠিন সময়ে দেশের বিষয়ে কেন কিছু পোস্ট করিনি তাই নিয়ে খুব গালমন্দ করছে। সে অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে ১৫ মিনিটের মধ্যে যতগুলো সম্ভব অনলাইন খবর পড়ে জানলাম, ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্যে আন্দোলন করছে। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমার সরকারি চাকরির প্রতি একটা ক্ষোভ তৈরি হয় এ বিষয়ে খুবই নেতিবাচক বহু অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এবং সেই থেকে আমি বরাবরই সরকারি চাকরির বিরুদ্ধে বলে এসেছি। তখন আমি দ্রুত যা লিখে পোস্ট করি সেখানেও আমার সেই অতীত অবস্থানের কথাই বলার চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে সরকার বা ছাত্রদের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

সবুর বলেন, চলমান আন্দোলনকে পাশে রেখে নিরপেক্ষভাবে দেখলে আমার পোস্টে খুব ভুল কিছু হয়তো ছিল না। আর সে কারণে ২০ হাজারের বেশি মানুষ সেই পোস্টে রিয়েক্ট করে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ ইতিবাচক ছিল। আর সে কারণে আমিও নিজের ভুল টের পাইনি। মূলত আমার দুটো বড় ধরনের ভুল হয়েছিল। প্রথমত, আমার তাড়াহুড়ো করে শুধু খবরের কাগজের লেখার ওপরে নির্ভর না করে আরও সময় নিয়ে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং গভীরভাবে বোঝা প্রয়োজন ছিল। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে আমি সেটা উপলব্ধি করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হই। সেই ভুল না হলে সম্ভবত দ্বিতীয় ভুলটাও হতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই প্রথম ভুলের সূত্র ধরেই আমি দ্বিতীয় আরও বড় একটা ভুল করি। আমার এই আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করা প্রয়োজন ছিল এবং তারই ভিত্তিতে এটা বোঝা প্রয়োজন ছিল যে আমি যেটা লিখেছি সেটা ঠিক ভুল হবার চেয়েও বেশি জরুরি ছিল সেটা যেন ছাত্রদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে।

তিনি বলেন, সেই পোস্টের পর আমি সেই ৯০ শতাংশ ইতিবাচক বনাম ১০ শতাংশের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার অঙ্কে আটকে যাই। এটা ছিল আমার তৃতীয় ভুল। এর ফলে আমার মনোযোগ বরং সেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং আচরণ কতটা অসভ্য, বর্বর ছিল সেদিকে চলে যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমি ১৭ জুলাইয়ের পোস্টে তার প্রতিবাদ জানাই। আজকের এই পোস্টটা আমার নিজের ভুল ধরার তাই আপনাদের সে আচরণের সমালোচনায় যাব না। কারণ আপনাদের বা অন্য কারোরই ভুল ধরে আমার ভুলগুলো ঠিক হয়ে যাবে না। যাইহোক, সেই প্রতিবাদের পোস্ট এবং পরবর্তী ভিডিও, লাইভ এবং আজকের এই পোস্ট লিখতে বসা পর্যন্ত, আমার চতুর্থ ভুল ছিল ঠাণ্ডা মাথায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টা বিশ্লেষণ না করা। সময়ের অভাবের অজুহাত দেব না, যেটা ছিল আমার পঞ্চম ভুল, কারণ কোনো অজুহাতই আমার এ ভুলগুলোর কারণে যারা কষ্ট পেয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, বরং আমার সব ভুলের জন্যে আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং এর কারণে যারা কষ্ট পেয়েছেন আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, সম্ভব হলে আমাকে মাফ করে দেবেন। আমার বহু পোস্টে, ভিডিওতে আমি বরাবরই বলে এসেছি আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ এবং অবশ্যই আমার বহু ভুল হয়। নিজের ক্ষুদ্রতার বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই বরং এত এত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ করে এতটা পথ এসেছি, এটাই আমার অর্জন। যদি খুব অসাধারণ কিংবা নিখুঁত ভাবতাম নিজেকে তাহলে কোনো অর্জনেই কোনো পরিতৃপ্তি থাকত না। বরং খুব সাধারণ, হাজারো ভুল-ত্রুটি করা একজন মানুষ হয়েও থেমে না যাওয়া এবং নিজের ভুল খুঁজে বের করে সেখান থেকে শিখতে পারার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত যথার্থতা খুঁজে পেয়েছি। অবশ্যই আমি আমার ভুলের জন্যে গর্বিত নই, বরং অত্যন্ত লজ্জিত, কিন্তু একই সঙ্গে আমি কৃতজ্ঞ যে, এই পুরো ঘটনা এবং সব ভুল থেকে যা শিখেছি সেটা আমাকে ভবিষ্যতে এরূপ ভুলের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

গুগলের ইঞ্জিনিয়ার জাহেদ সবুর বলেন, আমার ভুলের কারণে কষ্ট পেয়ে রাগের মাথায় অনেকেই অনেক মিথ্যে বলেছেন, আমি সে আলোচনায় যাব না। শুধু দুটো জিনিস পরিষ্কার করতে চাই। এক, আমার পেইজের বয়স প্রায় সাত বছর আর প্রোফাইল প্রায় আঠারো বছর, এই পুরো সময়ে আমি বাংলাদেশের যে কোনো সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কিছু বলেছি বা লিখেছি এমনটা কেউ দেখাতে পারবেন না। কাজেই দয়া করে এ জঘন্য মিথ্যে বলে অযথাই পাপ করবেন না। দুই, ২০০৬ সালের গুগল কোড জ্যাম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট হওয়ায় গুগল থেকে আমার অনেকগুলো ইন্টারভিউ নেওয়া হয় এবং সেগুলো সফলভাবে পেরিয়ে ২০০৭ সালে আমি বাংলাদেশ থেকে প্রথম গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সরাসরি গুগলে যোগ দেই। যেটা কিনা বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে, কাজেই সে বিষয়ে বিগত সরকারের সহায়তা করার কথা বলা নিতান্তই হাস্যকর। প্রতিহিংসা খুবই ভয়াবহ এক অভিশাপ, এর মাধ্যমে কখনো ভালো কিছু হয়নি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আশাকরি সে ফাঁদে পা দিয়ে অযথাই নিজের এবং অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার মতো ভুল করবেন না। আপনারা ছাত্ররা নিঃসন্দেহে দেশের জন্যে অসাধারণ একটা সুযোগের সূচনা করেছেন। সেজন্যে আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ এবং বাহবা জানাই। কিন্তু এটা এখনো শুধুই সূচনা, খুব ভালো কিছু করার অসাধারণ একটা সুযোগ। এখনই যেন অহংকারী, দাম্ভিক আচরণ করে সে সুযোগটা হেলায় হারাবেন না- এতটুকুই প্রত্যাশা। দেশের কাছ থেকে আমার চাওয়া-পাওয়া এতটুকুই যে, দেশের মানুষগুলো ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক। দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্যি কিন্তু দেশের বহু মানুষ এখনো ভালো নেই, শান্তিতে নেই। আমার বা অন্য কারও সমালোচনা করে যদি দেশের মানুষের শান্তির ব্যবস্থা করতে সাহায্য হয় তাহলে একশবার করুন, হাজারবার করুন। কিন্তু আমার মনে হয় না একাত্তরে বিজয়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের মানুষকে সাহায্য করার পরিবর্তে অন্যদের সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল। আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ তাই আমার বহু ভাবনায় ভুল থাকতেই পারে কিন্তু তাতে কখনোই সার্বিকভাবে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। আপনাদের ভুলের ক্ষেত্রে সেটা সত্যি নয়, সব ভুলে গেলেও সেটা যেন ভুলবেন না। দায়িত্ব নিয়েছেন সেজন্য আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, আশাকরি দায়িত্ববান হয়ে সে দায়িত্বের মর্যাদা বজায় রাখবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X