নৌপরিবহন উপদেষ্টা / সবাই যদি চায় নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করবে
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। যাত্রী ছাউনি, ফায়ার ব্রিগেড, সিএনফের বসার জায়গা ও ইউনিয়নের জায়গার স্থায়ী সমাধানে কাজ চলছে। অনেক বড় একটি ইয়ার্ড হয়েছে। হয়তো আরেকটু বাড়বে। কাজ চলছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা আরও বলেন, সবাই যদি চায় নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ রাজনীতি করেন না, তাই সংস্কার শেষেই নির্বাচন করার ম্যান্ডেট আছে। এর আগে বেলা ১১টায় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তামাবিল স্থলবন্দরে পৌঁছে স্থলবন্দরের প্রশাসনিক ভবন, তামাবিল ইমিগ্রেশন, বধ্যভূমি ও স্থলবন্দরের পণ্য পরিমাপ স্কেল পরিদর্শন করেন। পরে বন্দরের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান, গোয়াইনঘাট ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম, তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানসহ পাথর আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা। পরে দুপুর ৩টার দিকে জাফলংয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন উপদেষ্টা।
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

সবাই যদি চায় নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করবে : নৌ উপদেষ্টা
সবাই যদি চায় নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বতী সরকারের কেউ যেহেতু রাজনীতি করে না, তাই সংস্কার শেষে নির্বাচন করার ম্যান্ডেট আছে। তবে সময় হলে সবই পরিষ্কার হবে।’ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সবাই যদি মনে করে নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করবে অথবা নতুন কাউকে যুক্ত করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইনে যে সময় সীমা আছে তা কীভাবে সমাধান হবে তা একটি বিষয়। তবে এখন এ বিষয়ে হাত দেবে না বর্তমান সরকার।’ তিনি বলেন, ‘তামাবিল স্থল বন্দরের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের সমস্যা সমাধান করে সহযোগিতা করা হবে।’ এর আগে সকাল ১১ টায় নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তামাবিল স্থলবন্দরে পৌঁছে বন্দরের প্রশাসনিক ভবন, তামাবিল ইমিগ্রেশন, বধ্যভূমি ও স্থলবন্দরের পণ্য পরিমাপ স্কেল পরিদর্শন শেষে স্থল বন্দরের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ স্থলবন্দর আয়োজিত তামাবিল স্থলবন্দরের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থল বন্দরের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম, তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানসহ তামাবিল পাথর আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা। মতবিনিময়কালে তামাবিল পাথর আমদানিকারক গ্রুপের পক্ষ থেকে আমদানি করা পাথরে ওজনে যৌক্তিক ছাড়, লেবার হ্যান্ডেলিং, ইয়ার্ড ব্যবহারে অতিরিক্ত ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, বন্ড এরিয়া বৃদ্ধি এবং স্থল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হয়। এদিকে, বিকেল ৩টায় জাফলংয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং হাসিনার প্রহসন
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দেশে চালু হয়েছিল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার অধীনে দেশে তিনটি সাধারণ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই তিনটি নির্বাচন ছিল দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে দেশের উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতকাল সেই আদালতের রায়েই আবার ফিরে এসেছে এই ব্যবস্থা। ফ্যাসিবাদের অনুভূতিহীন দানব শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে নির্লজ্জ প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার প্রতারণা, প্রহসন এবং বেহায়াপনার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ১৯৯৩ সালের শেষদিকে শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রথমবারের মতো সামনে আনেন। ৯০-এর গণআন্দোলনে সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের পতন এবং পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পটভূমিতে এ পরাজয়ের গ্লানি এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনাকে ধারণ করে তিনি এ দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত এ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করে। বিএনপি চেয়ারপারসন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধী দলগুলোর এ দাবিকে নানাভাবে সমালোচনা করলেও তিনি বরাবরই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দলগুলোকে সংসদে এসে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মেনন এমপি জামায়াত, জাপা ও আওয়ামী লীগের দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলা মেনে নেওয়ার চেয়ে আত্মহত্যাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ’৯০-এর গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর তার দল উত্থাপিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে আওয়ামী লীগ একটি অসভ্য প্রস্তাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এরশাদের পতনের ছয় ঘণ্টা আগে মওদুদ আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, জামায়াত চায় মধ্যযুগীয় ব্লাসফেমি আইন। জাতীয় পার্টি চায় এরশাদের মুক্তি। আর আওয়ামী লীগ চায় যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলেন ১৯৯৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। এদিন তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনবে। বিএনপি যাতে এই বিল পাস করতে বাধ্য হয় এ জন্য তিনি আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এরপর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণে সংসদের সব বিরোধীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে। ১৯৯৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার আহ্বানে সংসদের সব বিরোধী দল ও গ্রুপের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ২৬ এপ্রিল থেকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে হরতাল, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ৯৪ সালের ২৭ জুন আওয়ামী লীগ, জাপা এবং জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করে এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৯৯৪ সালে ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ জন বিরোধীদলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপির সদস্যরা স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। স্যার নিনিয়ানের ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারি ও বিরোধীদের দলের সমঝোতার লক্ষ্যে কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকুর বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ১৯৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। ঢাকার আসার পর থেকে তিনি মাসব্যাপী উভয় দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের মধ্যস্থতা করেন। সংলাপের একপর্যায়ে তিনি একটি ফর্মুলা উত্থাপন করেন। এতে স্যার নিনিয়ান সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় নির্বাচনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। এই সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের পাঁচজন এবং বিরোধী দলের পাঁচজন মন্ত্রী থাকবেন। তারা সবাই বর্তমান ৫ম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে থেকে মনোনীত হবেন। এ ছাড়া বাকি একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন। যার ওপর স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর ভার ন্যস্ত থাকবে। সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপে সহায়তাকারী স্যার নিনিয়ান স্টিফেন সংসদ উপনেতার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে পৃথকভাবে আলাপ করে তাদের মনোভাব জানতে চেষ্টা করেন। নিনিয়ানের এই প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন বিএনপি সম্মতি জানালেও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানিয়ে দেন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা তিনি মানবেন না। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ স্যার নিনিয়ানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ আনে এবং তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উল্লেখ করে কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকুর কাছে ফ্যাক্স বার্তা পাঠায়। কমনওয়েলথ চিফ এমেকা এনিয়াওকু আওয়ামী লীগের এ অভিযোগ নানচ করে দেন। পাকিস্তান সফররত কমনওয়েলথ চিফ ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিনিয়ান কোনো পক্ষপাতিত্ব করেননি। সব মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে স্যার নিনিয়ান সাংবাদিকদের কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সহিংসতা ও হাঙ্গামার মাধ্যমে কিছুই অর্জিত হবে না। সহিংসতা ও হাঙ্গামা শুধু ক্ষোভ আর হতাশার পথেই দেশকে নিয়ে যাবে। ব্যর্থ মিশন শেষে তিনি ১৪ নভেম্বর দেশে ফিরে যান। সহিংসতায় নিহত প্রায় অর্ধশত: তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ৭০ দিন হরতাল অবরোধ এবং ২৬ দিন অসহযোগ। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। আর ২৬ দিনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে লাগাতার পালিত হয় ২২ দিন। আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে হরতালের কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। এক্ষেত্রে ’৯৬ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে যান, সে জেলাতেই হরতাল ডাকা হয়। বিরোধী দলগুলোর জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে ডাকা এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাঙচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশত মানুষ, আহত হয় সহস্রাধিক। ’৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরও ছয় শতাধিক মানুষ। বিরোধী দলগুলোর হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়েত ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পিকেটিংয়ে অংশ নেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, কাজী জাফর আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাজী ফিরোজ রশীদ, জামায়াতে ইসলামী আলী আহসান মুজাহিদ প্রমুখ। ’৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক জনসভায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছামতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল। আর লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে ১৯৯৫ সালের ১৮ অক্টোবর ফার্মগেটের এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, এ সরকার হরতাল ছাড়া আন্দোলনের কোনো ভাষা বোঝে না। হরতালে মানুষের দুঃখে কষ্ট হয়। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের করাই বা কী আছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকুর বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের সমঝোতা উদ্যোগ নিষ্ফল হওয়া এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীর সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। অন্যদিকে এই নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি চেয়ারপাসন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন। এই নির্বাচনে যেসব বিরোধী দল অংশ নেয়নি তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আলোচনায় সবাই মিলে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯৬ সালের ২১ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় এবং এ দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিল উত্থাপন করা হয়। উদ্ভূত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অসাংবিধানিক শক্তির অশুভ তৎপরতার প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ রাতভর আলোচনা শেষে ভোররাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী গৃহীত হয়। নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল পাসের পর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা খালেদা জিয়া ২৬ মার্চ সকাল ৬টায় জাতীয় সংসদে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, আমি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করলাম। পরদিন (২৭ মার্চ বুধবার) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রেসিডেন্টকে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন-সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনসহ বিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট আইন অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলে সম্মতি দেন। প্রেসিডেন্টের এই সম্মতির পর বিলটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ সুগম হয়। ২৯ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আবারও বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং মে মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাসের প্রতি অনুরোধ জানান। হাবিবুর রহমানের শপথ গ্রহণ : ৩০ মার্চ শনিবার বিকেলে তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী অলি আহমদ সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুরোধ প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এদিন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং রাতে বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে শপথবাক্য পাঠ করান। এ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, কূটনৈতিকবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। এদিন এক বিবৃতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য কামনা করেন এবং অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি তার দলের পক্ষ থেকে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, জনগণের অপরিসীম ত্যাগ ও তিন দলের আন্দোলনের ফলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। বাঙালি জাতি আরেকবার প্রমাণ করেছে জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তি টিকে থাকতে পারে না। ন্যায্য ও সত্যের সংগ্রাম সবসময় জয়ী হয়। লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক ফেরানোর পথ খুলল
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করাকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল, অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা পুরোপুরি ফেরার বিষয়টি আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এ বিষয়ে পৃথক রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আগামী ১৯ জানুয়ারি সেসব রিভিউর শুনানির দিনও ঠিক করা আছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। একই সঙ্গে হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা জাতির পিতা, ৭ মার্চসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। এসব ব্যাপারে সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন আদালত। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। ৬টি বিষয় বাতিল করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। এদিকে রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এলেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে আপিল বিভাগ থেকে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন বিচারাধীন। এখন এই রায়ের (হাইকোর্টের রায়ের) ফাইন্ডিংসগুলো সেখানে তুলে ধরা হবে। সবকিছু মিলিয়ে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’ অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জকারীদের পক্ষের আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর হলো। তবে সেটা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না। কারণ, সেটা বাতিল করা হয়েছিল দুইভাবে। আদালতের রায় ও সংসদ কর্তৃক সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘বদিউল আলম মজুমদার ও আরও চারজন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছেন। জানুয়ারিতে শুনানি হবে। সেটা আবেদনকারীদের পক্ষে নিষ্পত্তি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরবে।’ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আনা হয়। এরপর ওই বছরই জুনে দেশে প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তারপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানো নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংকটকালীন অবস্থায় ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ক্ষমতায় বসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যেটি বাংলাদেশে ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার নামেও পরিচিত ছিল। ওই সরকার প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজন করে। ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর পাসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিন আইনজীবী দুটি মামলা করেন। হাইকোর্ট সেগুলো খারিজ করে দেন। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ সাত বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আপিলের শুনানি করে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত, বিভক্ত আদেশ দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা। সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, পরবর্তী দুটি নির্বাচন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতিদের রাখার বিষয়টি সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের মাস দেড়েকের মাথায় একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়। এর মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে এই সংশোধনী পাস হয় সংসদে। এই সংশোধনীতে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়। সে সময় সংসদ ভেঙে না গেলেও কোনো অধিবেশন বসবে না বলেও সংশোধনী আনা হয়। এ ছাড়া সংশোধনী অনুযায়ী রাজনৈতিক সরকার শুধু রাষ্ট্রের রুটিন কাজ করবে বলেও বিধান রাখা হয়। এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনে। একই সঙ্গে তখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মের সমমর্যাদা নিশ্চিত করার বিধান আনা হয়। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা ও সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০২১ সালের এই সংশোধনীর মাধ্যমে। অন্যদিকে গত আগস্ট মাসে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন দায়ের করেন। এরপর বিএনপি, জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও দুটিসহ মোট তিনটি রিভিউ আবেদন দায়ের হয়েছে। এখন পৃথক চারটি রিভিউ আবেদনের ওপর আগামী ১৯ জানুয়ারি শুনানির জন্য রেখেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আর আপিল বিভাগ থেকেই এই রিভিউর রায়ের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিলের রায়: গতকাল সকাল ১০ টা ৫২ মিনিট থেকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব পৌনে দুই ঘণ্টাব্যাপী এ রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, অনুচ্ছেদ দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। বাকিগুলো সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত আরও বলেছেন, সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। এর মধ্যে জাতির পিতার স্বীকৃতির বিষয়, ২৬ মার্চের ভাষণের বিষয়গুলো রয়েছে। গণভোটের বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো। হাইকোর্টের রায়ে ৭ক, ৭খ এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ এবং ৭খ সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা ছিল। এদিকে ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা আছে। ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বলছে, এ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সব বা এর যে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করতে পারবেন। এ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে। ‘এ রায় দিতে পেরে নারী হিসেবে আমি গর্বিত’: বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করে মূল রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ আদালতে পাঠ করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। রায় প্রদানকালে মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে আপনারা একজন নারী বিচারপতির বেঞ্চে এসেছিলেন। একজন নারী বিচারপতির ওপর আস্থা রেখেছেন, এ কারণে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। এ রায় দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমি মনে করি, নারী জাতির জন্য এটি গর্বের বিষয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এ রায় দেওয়ার সময় আমরা জনগণের চাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেছি। এসময় আইনজীবীরাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। আইনজীবীরা যা বলছেন: রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, রিটকারীরা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটাই অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত পুরো সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেননি। আদালত বলেছেন, পুরোটা সংবিধান পরিপন্থি বলছি না। দ্বিতীয়ত বলেছেন, সংবিধানের ৭(এ) ও ৭(বি) এই দুটো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা সংবিধানে ছিলই না—এভাবে ধরে নিতে হবে। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করাটা আদালত অবৈধ বলেছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা বাতিল করা হয়েছে। রেফারেন্স হিসেবে আদালত বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে, কীভাবে গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছে, কীভাবে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, কীভাবে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে সংবিধানের মূল ভিত্তিতে আঘাত হানা হয়েছে—এগুলো উনারা বলেছেন। এরপর সংবিধানের ৪৪(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোনো জায়গায় হাইকোর্ট বসাতে পারবেন। এটা অবৈধ। কারণ, এটা অষ্টম সংশোধনীর রায়ে বলা হয়েছে, এখানে একটি সুপ্রিম কোর্ট থাকবে। এই একটা সুপ্রিম কোর্টকে ভেঙে টুকরো টুকরো করবেন, এটার সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, গণভোটে জনগণের যে ক্ষমতা (পাওয়ার), সরকার যেভাবে সংকুচিত করেছিলেন, সেটা অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আদালত কিছুই বলেননি। বাকি বিষয়গুলো বৈধ নাকি অবৈধ, কিছুই বলেননি। সেগুলো সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে সেগুলো রাখবে কি রাখবেন না। সিনিয়র আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর মোট ছয়টি বিধান বাতিল করেছে। ওই সংশোধনীতে ৫৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বাকিগুলো পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। পরবর্তী সংসদ এসে যৌক্তিক মনে করলে রাখবে, অথবা রাখবে না। রিটকারীদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আদালত বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামোর একটি অংশ। যেহেতু নির্বাচন, গণতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামো, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছে, সেহেতু এটি সংবিধানের একটি মূল কাঠামো। এটা ঐতিহাসিক রায়। সংবিধানে জাতির পিতা, ৭ মার্চসহ কয়েকটি ধারা যে সংসদের জন্য আদালত ‘রেখে দিয়েছেন’ তা জানিয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালত বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত। সার্বিকভাবে তিনি রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে বলেন, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকবে বলে তিনি আশা করেন। বহাল থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেউ বাদ দিতে পারবে না। মামলার ইতিবৃত্ত: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সংস্থা, ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরেন। অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত অক্টোবরে আরও একটি রিট আবেদন করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর দ্বাদশ দিনে ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। পরদিন আদালত রায়ের জন্য ১৭ ডিসেম্বর তারিখ রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় পর্যবেক্ষণসহ রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন। আলোচিত এই রিটের রুল শুনানিতে সুজনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইনসানিয়াত বিপ্লব দলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুর রউফ ও ইশরাত হাসান। এ ছাড়া রুল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হওয়া সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। এদিকে গতকাল রায় ঘোষণার সময় পক্ষভুক্ত হওয়া আইনজীবী ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী, নাফিউল আলম সুপ্ত এবং সাইয়েদ আবদুল্লাহসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

সংবিধানে জাতির জনক, ৭ মার্চসহ কয়েকটি ধারা সংসদের জন্য রেখেছেন আদালত
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। এই সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। জাতির জনক, ৭ মার্চসহ এর কয়েকটি ধারা ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখেছেন আদালত।  আইনজীবীরা জানান, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা আদালত বাতিল করেননি। আদালত বাকিগুলো ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তিসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করেন আদালত। রায়ের পর রিটকারীর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, তারা পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়েছিলেন। আদালত বেশ কয়েকটি ধারা বাতিল করলেও অন্যগুলো বাতিল করেননি। আদালত বলেছেন, বাকিগুলোর বৈধতাও তিনি দিচ্ছেন না। সেগুলো ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ সংসদ জাতির প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো রাখতে পারে অথবা বাতিল করতে পারে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালত বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত। সার্বিকভাবে এটি ঐতিহাসিক রায়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।  
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান হলো : প্রিন্স 
হাইকোর্ট কর্তৃক সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান হলো। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে  আওয়ামী লীগ চরম কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে নিজেদের দানবে পরিণত করেছিল। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ময়মনসিংহ বিভাগীয় নেতাদের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।  আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪ বাস্তবায়নে এ সভার আয়োজন করা হয়। আগামী বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় টুর্নামেন্টটি ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। ময়মনসিংহ বিভাগের ৭ জেলা ও মহানগর ইউনিট লাল ও সবুজ দলে বিভক্ত হয়ে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। সভায় এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগ সারাজীবন রাজনীতিতে থাকতে পঞ্চদশ সংশোধনীসহ সংবিধান কাটাছেঁড়া করে দলীয় গঠনতন্ত্রে পরিণত করেছিল। আজকের রায়ের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার অপকৌশল জাতির সামনে আবারও উন্মোচিত হলো। একই সাথে জনগণের ভোটাধিকারও প্রতিষ্ঠা হলো। সভায় তিনি বলেন, তারেক রহমান তারুণ্যের জাগরণ সৃষ্টি করে সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্র গড়তে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা দিয়েছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের কবল থেকে তরুণদের উদ্ধার করতে গঠনমূলক ও ইতিবাচক রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, মানবিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডের কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদের সম্পৃক্ত করতে তারেক রহমান উদ্যোগ নিয়েছেন। শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ,আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট, সবার আগে বাংলাদেশ কনসার্ট, বিজ্ঞান মেলা ও প্রতিযোগিতা সেসব উদ্যোগেরই অংশ। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান গতানুগতিক রাজনীতির ধারা পরিবর্তন করতে চান। ছাত্র গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাও একই। তাই তিনি রাজনীতি, রাষ্ট্রের পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। নেতাকর্মীদেরও রাজনীতির গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করতে মন-মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমানের মহতী উদ্যোগ সফল করার আহ্বান জানান । তিনি ২৫ ডিসেম্বর  ময়মনসিংহ বিভাগীয় আরাফাত রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট সর্বাত্মক সফল করার আহ্বান জানান । বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, শেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হযরত আলী, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, সদস্য সচিব রোজনুজ্জামান সরকার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আমজাদ আলী, কাজী রানা, অ্যাড. এমএ হান্নান খান, কায়কোবাদ মামুন, লিটন আকন্দ, জেলা ও মহানগর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল অবৈধ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ রায় পড়া শুরু হয়। তার আগে গত ৫ ডিসেম্বর রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। আদালতে এই রিট আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষে রুলের শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলে বিষয়ে রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ। এ ছাড়া জামায়াতের পক্ষে শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী, ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে ইশরাত হাসান এবং চার আবেদনকারীর পক্ষে জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী ও ইন্টারভেনর হিসেবে হামিদুল মিসবাহ শুনানি করেন। জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা দুটি রিটের শুনানি হয়। এরপর ১৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। রিটের পক্ষে অবস্থান নেয় বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি সংগঠন। প্রায় সকলেই শুনানিতে তত্ত্ববধায়ক সরকারের পক্ষে মত দেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় এবং সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এ ছাড়া এর মাধ্যমে সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭(ক)(খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়। যেখানে বলা হয়, সংবিধানবহির্ভূতপন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানে আওয়ামী লীগ শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। এ ছাড়া সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান জারি করা হয়। এভাবে ছোট বড় ৫৫টি সংশোধনী আনা হয়।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সবাই একমত : বদিউল আলম
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে। সে সঙ্গে বিগত নির্বাচন কমিশনকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়েও সবাই একমত। কারণ তারা শপথ ভঙ্গ করেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। ড. বদিউল আলম বলেন, আজকের আলোচনা থেকে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হলো যে, সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে। সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘না’ ভোটের বিধানের ব্যাপারে তারা সবাই একমত। রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রের ব্যাপারেও তারা একমত। রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে এটা আশা করা যায় না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারেও অনেক আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, সরাসরি নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকে বলেছে এবং রাষ্ট্রপতি পদকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। নারীদের সরাসরি নির্বাচন এবং তাদের নির্বাচনী এলাকা থাকতে হবে এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচন করার পক্ষে সবাই মতামত দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন পরিবর্তন করতে হবে। মূলত এসব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।
২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার তোপের মুখে হাসপাতাল ছেড়ে পালালেন তত্ত্বাবধায়ক
শেরপুরে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিঞা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করলে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কার্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। স্থানীয়রা জানান, ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর শেরপুরের সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন ছানু এবং সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিকের আস্থাভাজন ডা. সেলিম মিঞা নেত্রকোনায় সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জুলাই মাসে শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদে যোগদান করেন তিনি। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।  অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগপন্থি ডাক্তারদের সংগঠনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা ডা. সেলিম মিঞা নিজ জেলায় যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ায়। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, রোগীদের বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া, আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে চাকরি থেকে বের করে দিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো লোকজনকে নিয়োগ প্রদান, ওষুধ ও মালামাল ক্রয়ে দরপত্রে সীমাহীন অনিয়মসহ নানা অভিযোগে ধীরে ধীরে ফুঁসে উঠতে থাকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ও স্থানীয়রা। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সোয়া এগারটার দিকে বিক্ষুব্ধ কয়েকশ ছাত্র-জনতা বিভোক্ষ মিছিল করে তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবি করে। সেইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে ছাত্র জনতা। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে সটকে পরেন তিনি। পরে ছাত্র-জনতা মিছিলটি নিয়ে নারায়ণপুর এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে সদর হাসপাতাল গেইটে গিয়ে শেষ হয়। এ ব্যাপারে ডা. সেলিম মিঞার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিছু লোক আমার কার্যালয়ে এসেছিল এবং আমাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলেন। বিষয়টি আমার কাছে রাজনৈতিক বলে মনে হয়েছে। পরে আমি বাড়ি চলে আসি। আমি পালিয়ে আসিনি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফী জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি এবং এডিশনাল সেক্রেটারিকে বিষয়টি টেলিফোনে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগকে স্বচ্ছ এবং সেবামূলক রাখতে আমরা ফ্যাসিবাদী কাউকে দায়িত্বে রাখবো না। এ ছাড়াও আগামীকাল আমি সরেজমিনে শেরপুরে যাবো।
১৬ নভেম্বর, ২০২৪

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলেই তত্ত্বাবধায়ক ফিরবে, এমনটা না : বদিউল
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে এমন ধারণা করা ভুল বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে ‘কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।   বদিউল আলম বলেন, ‘সংবিধানকে নানান সংশোধনীর মাধ্যমে নষ্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এক তৃতীয়াংশ পরিবর্তন করে সংবিধান কলুষিত করা হয়েছে।’   নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘বর্তমানে সংবিধানে বহু অসঙ্গতি রয়েছে, যা পরিবর্তন করতে হবে।’ সংরক্ষিত আসন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে নারীকে প্রতীকী অবস্থায় নিয়ে যায়। সেইসঙ্গে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়। তাই সংস্কার প্রয়োজন। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীকে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’ মূলত ৪০০ আসন হলে ১০০টি নারীর জন্য বরাদ্দ করতে হবে, তাও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ করেন বদিউল আলম। সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক সংকটে এই সংবিধান সমাধান করতে পারেনি। বরং সংকট বাড়িয়েছে।’
১৬ নভেম্বর, ২০২৪
X