তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় সমমনা জোট
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এসব প্রস্তাবনা পেশ করেন। সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সভায় অংশ নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ছাড়াও সমমনা জোটের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে কোনো ব্যক্তি টানা দুইবারের বেশি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আপাদমস্তক ঢেলে সাজাতে হবে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে দেশকে রক্ষায় নদী খনন, তিস্তা প্রকল্প ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের নামের তালিকা সরকারিভাবে প্রকাশসহ উন্নত চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী স্বেচ্ছাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচন সম্পর্কে সরকারের পরিকল্পনা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিচার বিভাগ—এই চারটি বিষয়ে সংস্কারের পরিকল্পনা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলায় বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনার সময় দেশের স্বার্থবিরোধী সব অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। কুইক রেন্টাল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত যেসব অসম চুক্তি রয়েছে, তা অনতিবিলম্বে বাতিল এবং বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিশ্চিত করতে হবে।
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পদত্যাগে বাধ্য হলেন আ.লীগের রোষাণলে থাকা খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক
আওয়ামী লীগ সরকারের রোশাণলে পড়ে বারবার শাস্তিমূলক বদলি হওয়া পদ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে এবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়তে হলো। এ ছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের ৪১ জন চিকিৎসককে হাসপাতালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে স্বাচিপ নেতাদের পাশাপাশি কোনো দল না করা চিকিৎসকও রয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকই বহির্বিভাগে রোগী দেখেন।  তবে নাগরিক সমাজের দাবি, সঠিক তদন্ত করে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর বিভিন্নভাবে অনৈতিক সুবিধাভোগী চিকিৎসকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিরীহ চিকিৎসকদের কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। কিন্তু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো তত্ত্বাবধায়ক পোস্ট ছিল না তখন। ফলে নির্দিষ্ট বসার জায়গা ও রুম না পেয়ে তিনি চার মাস শাস্তি ভোগ করেন। এর আগে যশোর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালীন এমএসআর টেন্ডার নিয়ে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল এবং সাবেক মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এর অনৈতিক দাবি ও টেন্ডারবাজি রুখে দেন এই সৎ কর্মকর্তা।  তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর অনৈতিক ও দুর্নীতি রুখতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তমিদুল ইসলাম খান এবং পুলিশ সুপার প্রণয় কুমার জোয়ার্দারকে লিখিত অনুরোধ করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে যা তৎকালীন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়।  তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যশোর থেকে খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের অফিসে এক গ্রেড নিচে নামিয়ে দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী পরিচালক হিসেবে শাস্তিমূলক বদলি করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সেখানে সততার সঙ্গে চাকরি করে চলতি বছর তার আবারও ৪র্থ গ্রেড প্রাপ্তি হলে আবারও তাকে শাস্তিমূলক পদহীন খুলনা মেডিকেল কলেজের তত্ত্বাবধায়ক পোস্টে বদলি করা হয়। যেখানে গত ২০১৯ সাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদই বিলুপ্ত হয়েছে। চলতি বছরের গত জুলাই মাসের ২৫ তারিখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন উপ-পরিচালক বদলি হলে সেখানে উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আক্তারুজ্জামান।  মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মেডিকেল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ৪১ জন চিকিৎসক একটি তালিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এতে আতঙ্কে ভয়ে দুটি কাগজেই স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামান।  এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন। উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, জীবনে কেউ আমাকে আওয়ামী লীগ ও স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি কোনো দিন দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি কোনো দিন সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো দিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন কোনো রেকর্ড নেই। বরং আমাকে আওয়ামী লীগ সরকার বারবার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। ইসলাম মানা ও সততার কারণে প্রমোশন দেয়নি। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। এতো সবকিছুর পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিল্পবের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করতে সুযোগ পাবো কিন্তু আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করালো। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। খুলনা মেডিকেল কলেজ এর ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেছেন, স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল এমন অভিযোগে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পদত্যাগ দাবি করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ বিষয় অবগত নয়। ডা. মোস্তফা কামালকে তার মোবাইল নম্বরে বারবার কল এবং তার হয়্যাটসআপ নম্বরে ম্যাসেজ এবং কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। ম্যাসেজ এর রিপ্লাইও দেয়নি।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় / চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায় এলডিপি
দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারকে পরবর্তী চারটি জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করাসহ মোট ৮৩ দফা দাবি ও সুপারিশ করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এসব দাবি পেশ করেন। এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সভায় অংশগ্রহণ করেন। দাবিগুলো হলো: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহত এবং তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি রাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত বাংলাদেশিদের মুক্তি ও পুনর্নিয়োগ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে যারা উপযুক্ত প্রমাণাদি ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে এবং যারা গ্রেপ্তার ও বন্দি হয়েছেন তাদের অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ অপহৃত, নিহত ও গুম করা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। ১৯৯৬ সালের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যে অবৈধ ও অযৌক্তিক সংযোজন করা হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে এবং ওইসব মুক্তিযোদ্ধার পৌষ্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বাতিল করতে হবে। স্বৈরাচারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে হবে। স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অভিযুক্ত ও পলাতক ব্যক্তিদের উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, অবৈধ সম্পদ জব্দ এবং বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ প্রত্যর্পণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে। বাংলাদেশের স্থল, জল বা বিমানবন্দর দিয়ে যাতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করতে না পারে কিংবা অপরাধীরাও অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া মাত্র শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্পষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে। কমপক্ষে পরবর্তী চারটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রজাতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানে (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ) শীর্ষ নির্বাহী পদে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির সুপারিশ প্রথা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত সব কর্মচারীর সম্পদের তালিকা নিয়মিতভাবে দাখিল করা বাধ্যতামূলক এবং জনগণের কাছে উন্মুক্ত রাখতে হবে। সাক্ষ্যভিত্তিক প্রমাণের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও বস্তুগত প্রমাণের ওপর জোর দিয়ে নতুন আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করে বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিভিন্ন বৈষম্য নিরসনকল্পে কমিটি গঠন করতে হবে। অবিলম্বে দুটি আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। (ক) পেনাল কোড, ১৮৬০-এর ১৯৩ ধারার পরিমার্জন করে মিথ্যা এজাহার, জবানবন্দি, মামলা এবং হলফনামা প্রদান ইত্যাদি অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে এবং তার জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান করতে হবে। (খ) The Prevention of Corruption Act, 1947-এর পরিমার্জন করে প্রজাতন্ত্রের যে কোনো কর্মচারী ঘুষ দাবি করলে বা নিলে বা কার্য-নির্বাহে অকারণে দীর্ঘসূত্রতা করলে উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে ওই ব্যক্তি, তার স্বামী-স্ত্রী এবং সব সন্তানাদি সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের যে কোনো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বা প্রজাতন্ত্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে চিরতরে নিষিদ্ধ হবে—এমন বিধান করতে হবে। সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার নামে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবর্তিত ‘বিতর্কিত’ কারিকুলাম বাতিল করতে হবে। চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ইত্যাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি স্থগিত করতে হবে এবং বিচার বিশ্লেষণ করে সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার খাতিরে তা বাতিল বা সংশোধন করতে হবে। ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী সরকারের আমলে গণহত্যাকারী, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ নেতা, চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি, সাবেক এমপি, সাবেক মন্ত্রীসহ সব অবৈধ সুবিধাভোগীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। হেফাজত ইসলামের আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল তাদের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করতে হবে। পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন অফিসারসহ অন্যদের হত্যার বিচারের জন্য কমিশন গঠন করতে হবে। গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ দায়ী মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০৯ সালের পর থেকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব রাজনৈতিক, মিথ্যা ও গায়েরি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গণহত্যায় উসকানিদাতা পুলিশ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সুপারিশগুলো: ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে আমাদের প্রয়োজনে কয়েকটি প্রদেশ করতে হবে এবং ওই আলোকে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্ট স্থাপন করতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি বিভাগে অন্তত ৩ থেকে ৪টি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। সেইসঙ্গে বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সমস্ত কমিশনকে স্বাধীন এবং রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিএফআই ও ডিজি এনএসআইসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার কাজ সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। র্যাব ও পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। র্যাবের প্রধান সবসময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে পদায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত, সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের বদলি করে দেওয়াটা শুধু সমাধান নয়। ভুলবশত কোনো বদলি বা পদায়ন হয়ে থাকলে তা ফের শুধরে নিয়ে তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছে, অবসর দেওয়া হয়েছে বা বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বিগত দিনের অপকর্ম এবং দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। তাদের কাছ থেকে জনতার টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ গণপূর্ত ও রাজউকের কথা বলা যায়। কিছু মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়: ১৯৯৬ সাল থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অসংখ্য আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানাই। তবে অহেতুক কোনো নিরপরাধ কর্মকর্তা বা কর্মচারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলন এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় অস্ত্র প্রদর্শনকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করতে হবে। চাঁদাবাজদের জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্বৈরাচারী সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা ও গ্রেপ্তার করতে হবে। সব পুলিশ কর্মকর্তা অর্থাৎ থানার ইনচার্জ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পদায়ন করতে হবে। তারাই নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আইজি পদ পর্যন্ত প্রমোশন পেতে পারে—সেই সুযোগ রাখতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : শেখ হাসিনাকে যথাশিগগির ভারত থেকে এনে গণহত্যা, দুর্নীতি এবং দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যা, হেফাজত ইসলামের হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। যেসব বাংলাদেশি হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় : ২০০৯ সালের ৬৩ নম্বর ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন’-সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাচারী আইন বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। একাধিক দ্রুত বিচার আদালত স্থাপন করে উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও গণহত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। র্যাব ও পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ইত্যাদি অসাংবিধানিক কার্যকলাপ বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নয়, সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ও পরিবারের সদস্যদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিবরণ চাইতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দেশে বা বিদেশে অবৈধ সম্পদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ভবিষ্যতে ওই ধরনের ব্যক্তি বা তার পরিবারবর্গ কোনো ধরনের সরকারি চাকরি ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার অযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়: আয়করের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। আয়কর আইন-২০২৩সহ এই ধরনের আইন বাতিল করে সব চাকরিজীবীর জন্য একই ধরনের আয়কর আইন প্রণয়ন করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিভিন্ন দেশের অনেক নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত। রেমিট্যান্স হিসাবে পাওয়া আমাদের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ তারাই নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যাংক লুণ্ঠনকারীদের মাধ্যমে পাচারকৃত প্রায় ৯৪ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়: এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক। স্কুলগুলোর সভাপতি পদের জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি পাস এবং কলেজগুলোর সভাপতি পদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি পাস বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়: প্রতিটি সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদে ফের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বললেন তারেক রহমান  / তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে বিএনপি
বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার খুলনা বিভাগের মতবিনিময় সভায় দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মালিকানা এ দেশের মানুষের, আর স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তার ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে জনগণকে ভোটাধিকারবঞ্চিত করার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার সেটা সংবিধান থেকে মুছে দিয়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকারবঞ্চিত রেখেছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে আবারও সংযুক্ত করতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করে। মানুষের নিরাপত্তা, বাক-স্বাধীনতা, শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার, তরুণ ও যুবকের কর্মসংস্থান, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী-সমতল-পাহাড়ি নির্বিশেষে সবার জন্য সমান রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত করা, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা, বিচার, আইন ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই বিএনপির রাজনীতির অগ্রাধিকার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবেগের সঙ্গে বলেন, যে বাড়িতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাস করেছেন, যে বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে তার ও তার ভাইয়ের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যে বাড়ি তার মায়ের সংসারের সূচনা আর বৈধব্যের বেদনার সাক্ষী, সেই বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে কতটা অসম্মানজনক ও অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেটা দেশবাসী দেখেছে। বিনা চিকিৎসায় তার একমাত্র ভাইকে (আরাফাত রহমান কোকো) নিদারুণ অবহেলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে দলের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে, পরিবার-পরিজন বিসর্জন দিয়ে, ব্যবসা-চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে, হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে। আর অগণিত নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন দেশকে ভালোবেসে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তারা যেমন অতীতের মতো প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না, তেমনি তিনি এবং দলের প্রধান খালেদা জিয়াও জানেন যে, দেশের মানুষও গত সতেরো বছর বাংলাদেশ নামে এক বৃহত্তর কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করেছেন। সুতরাং আজ হিংসা নয়, বরং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে অতীতের সব অন্যায়ের জবাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-বঞ্চনা সহ্য করে বিএনপি আজ জনগণের যে আস্থা আর ভালোবাসা অর্জন করেছে, দলের কিছু বিপথগামীর হঠকারিতায় মানুষের সেই আস্থা আর প্রত্যাশার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, তিনি যেই হোন না কেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করুন, প্রতিরোধ করুন। দল তাদের শুধু বহিষ্কারের অঙ্গীকারই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিচ্ছে। তিনি দলের তৃণমূলের ওপর তার অগাধ আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে এক-এগারোর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, দলের সকল সংকটকালে তৃণমূলই ছিল বিএনপির শক্তি। এরা শত প্রলোভন আর নির্যাতন উপেক্ষা করে ইস্পাতকঠিন ঐক্য দিয়ে দলকে ধরে রেখেছে। তিনি বলেন, তৃণমূল সঙ্গে থাকলে দল যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যেমন সক্ষম হবে, তেমনি তার পক্ষেও অনেক সহজ হবে দল পরিচালনা। তারেক রহমান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ আর আগামীর আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে এই বার্তা দেশের প্রান্তিক সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। তিনি দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অসংখ্য অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারের পতন শুধুমাত্র প্রাথমিক বিজয়, সামনে রয়েছে প্রকৃত পরীক্ষা। ফলে আত্মতুষ্টি আর সব শিথিলতা কাটিয়ে আগামীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের আপামর জনগণের দলের প্রতি সমর্থন আর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে : তারেক রহমান
বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে অঙ্গীকার করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।   সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগের মতবিনিময় সভায় দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।  তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মালিকানা এ দেশের মানুষের, আর স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তার ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার সেটা সংবিধান থেকে মুছে দিয়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত রেখেছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে আবারও সংযুক্ত করতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করে। মানুষের নিরাপত্তা, বাক-স্বাধীনতা, শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার, তরুণ ও যুবকের কর্মসংস্থান, নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী-সমতল-পাহাড়ি নির্বিশেষে সবার জন্য সমান রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত করা, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা, বিচার, আইন ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই বিএনপির রাজনীতির অগ্রাধিকার।   বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবেগের সঙ্গে বলেন, যে বাড়িতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাস করেছেন, যে বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে তার ও তার ভাইয়ের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যে বাড়ি তার মায়ের সংসারের সূচনা আর বৈধব্যের বেদনার সাক্ষী- সেই বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে কতটা অসম্মানজনক ও অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেটা দেশবাসী দেখেছে। বিনা চিকিৎসায় তার একমাত্র ভাইকে (আরাফাত রহমান কোকো) নিদারুণ অবহেলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে দলের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে, পরিবার-পরিজন বিসর্জন দিয়ে, ব্যবসা-চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে, হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে। আর অগণিত নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন দেশকে ভালোবেসে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে।   তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তারা যেমন অতীতের মতো প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না, তেমনি তিনি এবং দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও জানেন যে, দেশের মানুষও গত সতের বছর বাংলাদেশ নামের এক বৃহত্তর কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করেছেন। সুতরাং আজ হিংসা নয়, বরং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে অতীতের সব অন্যায়ের জবাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।  তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-বঞ্চনা সহ্য করে বিএনপি আজ জনগণের যে আস্থা আর ভালোবাসা অর্জন করেছে, দলের কিছু বিপথগামীর হঠকারিতায় মানুষের সেই আস্থা আর প্রত্যাশার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হবে- সেটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, তিনি যেই হোন না কেন।   বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করুন, প্রতিরোধ করুন। দল তাদের শুধু বহিষ্কারের অঙ্গীকারই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিচ্ছে।   তিনি দলের তৃণমূলের উপর তার অগাধ আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে এক-এগারোর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, দলের সব সংকটকালে তৃণমূলই ছিল বিএনপির শক্তি। এরা শত প্রলোভন আর নির্যাতন উপেক্ষা করে ইস্পাত কঠিন ঐক্য দিয়ে দলকে ধরে রেখেছে। তৃণমূল সঙ্গে থাকলে দল যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যেমন সক্ষম হবে, তেমনি তার পক্ষেও অনেক সহজ হবে দল পরিচালনা।   তারেক রহমান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ আর আগামীর আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে এই বার্তা দেশের প্রান্তিক সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন। তিনি দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অসংখ্য অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারের পতন শুধু প্রাথমিক বিজয়, সামনে রয়েছে প্রকৃত পরীক্ষা। ফলে আত্মতুষ্টি আর সব শিথিলতা কাটিয়ে আগামীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের আপামর জনগণের দলের প্রতি সমর্থন আর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে। 
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ
তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি বহাল করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ডেইলি স্টার ভবনের আজিজুর রহমান সম্মেলন কক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়‘ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ও প্রার্থীদের হলফনামার নতুন খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে গোলটেবিলসহ অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে সাবেক বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবদুর রউফ বলেন, ‘গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। কিছু কাল পরপর স্বৈরশাসক আসবে আর তাকে তাড়াতে সাধারণ মানুষ প্রাণ দেবে, রক্ত দেবে, এটা হতে পারে না। এবারের আন্দোলনেই যেন এই রীতি চিরতরে শেষ হয়ে যায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিচারপতি রউফ ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে মনোনয়ন প্রথা বন্ধের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ২০ কোটি টাকায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আরও ২০ কোটি টাকা নির্বাচনের মাঠে খরচ করে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরে ২০০ কোটি টাকা বানানোর যে প্রক্রিয়া রাজনীতিতে চালু হয়েছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকা প্রয়োজন। তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেই কেউ তাদের ইচ্ছামতো আইন পাস করতে পারবে না। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করে, এটা করতে চায় না। তোফায়েল আহমদ বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনো দল ৬০ শতাংশ বা তার বেশি আসনে জয়ী হয়ে সরকারে যায়। তারা ৭০ শতাংশ মানুষকে শাসন করে। এই পদ্ধতির পরিবর্তন করে নির্বাচিত হতে অন্তত ৫১ শতাংশ ভোট পাওয়ার নিয়ম করা প্রয়োজন। ফেমার সভা প্রধান মনিরা খান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করা। জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলি বলেন, গত ৫৩ বছরে ১২টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনই কেবল তুলনামূলক স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যায় করে পার পাওয়ার একটা রীতি তৈরি হয়েছে। এই পথ সংকুচিত করতে হবে। তাহলে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসবে। নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলিম নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। বৈঠকে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কবি সোহরাব হাসান, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও সুজনের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন আলোচনায় অংশ নেন। এতে লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
৩০ আগস্ট, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে রিভিউর সিদ্ধান্ত
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে রিভিউকারীদের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ২৭ আগস্ট রিভিউ ফাইল করা হবে। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আদালত। রায়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আদালত তার রায়ে বলেন, আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন—সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ।
২৬ আগস্ট, ২০২৪

মুখ দেখে খাবার দেওয়ার অভিযোগ, তত্ত্বাবধায়ক বললেন গরিব দেখে
নওগাঁ জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতাল। এখানে ভালো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৩০০ জন। ভর্তি রোগীর তুলনায় খাবারের বরাদ্দ কম থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, মুখ দেখে দেখে রোগীদের খাবার দেওয়া হয়। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ১০০ শয্যার বরাদ্দ থাকায় গরিব রোগী দেখে খাবার দেওয়া হয়। মুখ দেখে নয়। সোমবার (১৯ আগস্ট) হাসপাতালে গেলে খাবার নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের খেতে দেওয়া হয়েছে মাছ, ভাত এবং সবজি। হাসপাতালের দেওয়া খাবারের তালিকা অনুযায়ী মাছ এবং সবজি। তবে যে চাল দেওয়ার কথা তা না দিয়ে অন্য চাল দেওয়া হয়। নওগাঁ শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুমা আক্তার। তিনি ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মাকে গত সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি কালবেলাকে বলেন, মাকে নিয়ে সাত দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি। এই সাতদিনে হাসপাতাল থেকে খাবার পাইনি। রাজশাহী বা অন্য জায়গাতেও চিকিৎসার সময় দেখেছি হাসপাতাল থেকে খবার দেয়। কিন্তু এখানে কোনো প্রকার খাবার পাইনি।  তিনি আরও বলেন, শুধু আমার মা না, আমাদের রুমে যতগুলো রোগী আছে এ কয়দিনে কেউ খাবার পায়নি। আমাদের বাসা কাছে, তাই তিনবার খাবার আনতে পারি। কিন্তু যারা দূরের তারা তো একদম অসহায় অবস্থায় আছে। একই রুমের ভর্তি থাকা নওগাঁ সদর উপজেলার খাগড়া ফয়েজউদ্দিন কলেজ এলাকার বাসিন্দা শাহিদা বেগম বলেন, তিন দিন হল এখানে ভর্তি আছি। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে একদিনও খাবার পাইনি। হাসপাতাল থেকে খাবার না পাওয়ায় বাহির থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। বাইরের খাবারের যে দাম আমাদের মতো মানুষের জন্য খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। কাটখইল গ্রামের বাসিন্দা জাহিদা আক্তার, ছেলেকে নিয়ে গত তিনদিন যাবত ভর্তি আছি সদর হাসপাতালের ৫২০ নম্বর বেডে। প্রথম দিন খাবার পাইনি, এরপর থেকে খাবার পেয়েছি। সকালে ডিম, কলা আর চিড়া দিয়েছিল। গতকাল দুপুরে মাংস দিয়েছিল দুই পিচ। হাসপাতালের খাবার হিসেবে ভালোই আছে।  হাসপাতালের সপ্তম তলার ৭২৫ নম্বর বেডে ভর্তি হন বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ধামকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা রবিউল আওয়াল। তিনি বলেন, এ রুমে যারা ভর্তি আছে তারা কেউ কেউ খাবার পাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছে না। আমাকে কোনোদিনই খাবার দেওয়া হয়নি। দুয়েকদিন অনেক অনুরোধ করার পরে এক সন্ধ্যা খাবার পেয়েছি, তারপর আর পাইনি। বাড়ি দূরে হওয়ায় খাবার আনা কষ্টকর। খাবার বিতরণে যে আসে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে বলে এই বেডে নাকি খাবার দেওয়া হয় না। ষষ্ঠ তলার ৬০৮ নম্বর বেডে থাকা বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলা সায়তুন খাতুনের স্বজনরা জানান, চারদিন ধরে মাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি, কোনো ধরনের খাবার পাইনি। খাবার বণ্টনের দায়িত্বে থাকা আব্দুল বারি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা খাবার বিতরণ করি। কোনো ওয়ার্ডে ১৩ জন আবার কোনো ওয়ার্ডে সাতজন। আমাদের যে তালিকা দেয় সে অনুযায়ী খাবার বণ্টন করি। অভিযোগের বিষয়ে খাবার বন্টনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিএমটি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মহসিন আলী চৌধুরী বলেন, বিশেষ দিবস উপলক্ষে যে খাবার দেওয়া হয়, সেদিন মূলত জিরা অথবা কাটারি চাল ব্যবহার করা হয়। অসুস্থতার কারণে অনেকদিন বাইরে থাকায় হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জানতে চাইলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। আমরা ১০০ শয্যার লজিস্টিক দিয়েই হাসপাতাল চালাই। সবকিছু ১০০ শয্যার জন্যই বরাদ্দ আসে। খাবারের যে বরাদ্দ সেটিও ১০০ জন রোগীর।  তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে গড়ে ৩০০ জন। মুখ দেখে দেখে খাবার দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে মুখ দেখে খাবার দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে। তবে গরিব ও অসহায় রোগী দেখে খাবার দেওয়া হয়। তা ছাড়া অনেকে এখানকার খাবার নিতে চায় না।
২০ আগস্ট, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরখাস্ত
অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ ও বাজে অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগে উঠেছে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে।  সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ককে বরখাস্ত করা হয়েছে।  ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলেন এবং তারা বলেন, এসব অনিয়ম তত্ত্বাবধায়কের দেখা উচিত। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক উত্তেজিত হয়ে গালি দেন এবং চেয়ার থেকে উঠে প্যান্টের চেইন খোলার চেষ্টা করেন। এ সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক তাকে থামিয়ে দেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।  অশালীন আচরণ করার কথা স্বীকার করে তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার রায় বলেন, আমি মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারা আগের দিন শিক্ষার্থীরা আমাদের অপমান করেছিল। সে ভিডিও তো দেয়নি। প্রথমে আমার রুমে এসে খাবার নিয়ে কথা বলে। পরে তারা আরএমওর রুমে যায়। তাকে ডেকে গালাগালিও করা হয়। এরপর এসে আমার অফিসে তালা দেয়। শিক্ষার্থীরা এসে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। আমি মেজাজ হারিয়ে ফেলি এবং তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি।  তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি অফিস থেকে ইতোমধ্যে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।  সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা এসে রোগীদের খাবারসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়। কথা বলার একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক উত্তেজিত হয়ে এ কাজ করেন।
১৪ আগস্ট, ২০২৪

জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন / দ্রুত নির্দলীয় সরকার গঠন করে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি
অবিলম্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ নিরীহ জনগণের ওপর হামলা বন্ধ এবং সকল পক্ষের সম্মতিতে দ্রুত নির্দলীয় সরকার গঠন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন। আজ বুধবার (০৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম ও সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকন। তিনি বলেন, সরকারবিহীন দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জিত বিজয় ক্রমেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা ডাকাতি, লুটতরাজ শুরু করেছে। জনজীবনে আতঙ্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোন বাহিনী না থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুল কলেজে পাঠাতে অনিরাপদ বোধ করছেন। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থাপনা, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা বা পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণভাবে শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাইব্রেরি, সংগীত চর্চার স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, তার এত বছরের সংগীত যন্ত্রের বিশাল সংগ্রহশালা লুট করা, আগুন দেওয়ার মতন ঘটনা ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে কলংকিত করার অপচেষ্টা বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়। বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, মূলত দেশে কোনো সরকার না থাকায় এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে দুষ্কৃতকারী পেশাদার ডাকাত দল ডাকাতি করার চেস্টা করছে। বিবৃতিতে ঢাকাসহ সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের দ্বায়িত্ব সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য ছাত্রসমাজকে অভিনন্দন জানানো হয়। সেইসঙ্গে যে পর্যন্ত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় সে পর্যন্ত সামাজিকভাবে প্রতিটি গ্রাম মহল্লায় দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে জণগণকে ছাত্র জনতার বিজয় নস্যাৎকারী  দুষ্কৃতকারীদের রুখে দাঁড়ানের আহ্বান জানানো হয়।
০৭ আগস্ট, ২০২৪
X