বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দপ্তরির
পিরোজপুর নেছারাবাদের ১৯নং পশ্চিম সোহাগদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মো. মিজানুর রহমান নামে এক দপ্তরি সাত মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা তুলতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মিজানুর রহমান ২০২৩ সালের গত মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতানা পারভীনের ভাষ্যনুযায়ী দপ্তরি মিজানুর রহমান সাত মাস পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে দীর্ঘ সময়ে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে তার।  এদিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় দপ্তরি মিজানের স্বাক্ষরের বিষয়ে কিছুই জানেন না ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোসাৎ সুলতানা পারভীন। তিনি বলেছেন, দপ্তরির হাজিরা খাতা থাকে সভাপতির কাছে। এখন শুনেছি দপ্তরি মিজান নাকি অসুস্থ। তাই সভাপতির নির্দেশে রেজুলেশন করে মিজান একটি মেডিকেল রিপোর্ট এনে বেতন তোলার জন্য সব কাগজ নাকি উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, গত মে মাসে হঠাৎ মিজান কিছু না বলে বিদ্যালয় থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। কিছুদিন পরেও মিজান বিদ্যালয়ে না আসায় বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। সেই থেকে মিজান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তবে গেল আগস্ট মাসে বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জাকারিয়া শরীফ এসে বলেন মিজান অসুস্থ ছিল। সে একটি মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে। আপনি রেজুলেশন করে মিজানকে বিদ্যালয়ে অন্তুভুক্ত করুন। মিজান মেডিকেল রিপোর্ট এবং আমাদের রেজুলেশন কাগজ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে উপস্থাপন করেছে। তবে মিজান এখনো বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। এ ব্যাপারে দপ্তরি মিজানের সাথে দেখা করে কথা বলার জন্য বিদ্যালয়ে গেলেও দেখা মেলেনি তার। একপর্যায়ে তার ব্যবহৃত ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরে ফোন রিসিভ করেন। ফোন রিসিভ করে তিনি বলেন আমি এ বিষয়ে পরে কথা বলব। আমি একটু ব্যস্ত এই বলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জাকারিয়া শরীফ বলেন, মিজান অসুস্থ ছিল। তাই মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আসেনি। আগস্টে সে একটি মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। বিদ্যালয়ের রেজুলেশন কপি ও মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে সে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং পিরোজপুর যাচ্ছে। তাই এই অফিসিয়ালি কাজের জন্য মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে আসতে তার দেরি হচ্ছে। মিজানের বিদ্যালয়ের এসব অফিসিয়ালি কাজ করা এটা কি বিদ্যালয়ের কাজ নয়; বলে জানান সভাপতি জাকারিয়া শরীফ। মিজান স্কুলে না এসেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করেন কিভাবে পুনরায় জানতে চাইলে, তিনি বলেন হাজিরা খাতা আমার কাছে থাকে না। ওটা প্রধান শিক্ষক জানেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন খলীফা জানান, ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি গত মে মাস থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এ মর্মে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা পারভীন আমাকে লিখিতভাবে অবগত করেন। আমি তার আলোকে মিজানকে একটি শোকজ করে সাত কর্মদিবসের মধ্য কৈফিয়াৎ চেয়েছিলাম। মিজান তার কোনো জবাব দেয়নি। হঠাৎ গত আগস্ট মাসে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির রেজুলশন এবং মেডিকেল রিপোর্ট এনে মিজান বেতন-ভাতা তোলার জন্য আমার কাছে কাগজ দিয়েছে। আমি সব কাগজ আমার ঊর্ধ্বতন বরাবর প্রেরণ করে দিক নির্দেশনা চাইব। তারা যে নির্দেশনা দেয় আমি সেই আলোকে কাজ করব।
২৪ নভেম্বর, ২০২৩
X