হলমার্ক কেলেঙ্কারির আরও ১০ মামলা বিচারাধীন
১১ বছর আগে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ১১টি মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে একটির বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ১০টি মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলার বিচার শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলেই অর্থ আত্মসাৎ হওয়া টাকা ফিরে পেতে পারে সরকার। সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায় (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন দুদক উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা বাদী হয়ে ১১টি মামলা করেন। মামলাগুলোয় হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির ও সোনালী ব্যাংকের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল শাখার সাবেক ডিজিএম একেএম আজিজুর রহমানসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১টি মামলায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, এমডি তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়। পরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরে এই ১১টি মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। তার মধ্যে ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে অর্থ আত্মসাতের মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। তানভীর ও তার স্ত্রীর আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, দুদকের দায়ের করা ১১টি মামলার মধ্যে একটির রায় হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। আশা করছি, উচ্চ আদালতে সাজা ও জরিমানা স্থগিত হবে। অন্য ১০টি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলোতে ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি। দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম বলেন, তদন্তে ১১টি মামলায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে এক মামলায় রায়ের আসামিদের সাজা ও জরিমানা করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই এসব মামলার বিচার কাজ শেষ হবে। এদিকে মঙ্গলবার রায় হওয়া একটি মামলায় আসামিদের সাড়ে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে সরকার তাদের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তা আদায় করতে পারবে। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান কালবেলাকে বলেন, পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইনের মাধ্যমে জরিমানার অর্থ আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে সরকার জরিমানার সমপরিমাণ অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করবে।
২১ মার্চ, ২০২৪

হলমার্ক কেলেঙ্কারি / সাজা শুনে আদালত থেকে পালালেন ইউপি চেয়ারম্যান
হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারের সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায় শুনে তিনি আদালত থেকে পালিয়ে গেছেন।   এদিন জামিনে থাকা আসামি জামাল উদ্দিন আদালতে উপস্থিত হন। তার উপস্থিতিতে আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এক ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন ওর রশিদ বলেন, এ মামলায় আসামি জামাল আদালতে হাজিরা দেন। রায় ঘোষণার সময় উনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শেষে দেখি চলে গেছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব দে বলেন, আসামি জামাল জামিনে ছিলেন। আজকে হাজিরা দিয়েছেন। রায়ের পর তাকে না পাওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।  
১৯ মার্চ, ২০২৪

‘যারা দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত’
হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামের যাবজ্জীবন দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, হলমার্কের ঘটনা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধিরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে তাদের মৃত্যু দণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে অত্র আদালত মনে করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। এর আগে ২৮ জানুয়ারি আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। তবে ওইদিন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রায় থেকে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে পাঠান। পরে গত ১২ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন। মামলার সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসেবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসেবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগ গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।
১৯ মার্চ, ২০২৪

হলমার্ক সাম্রাজ্যে শুধুই শূন্যতা
প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে হলমার্ক গ্রুপের বিশাল শিল্প পার্ক। সাভারের হেমায়েতপুর-সিংগাইর রোডের তেঁতুলঝোড়া ব্রিজের পশ্চিম পাশে এর অবস্থান। ভেতরে সারিবদ্ধ ৪৩টি কারখানা। আছে মসজিদ, বিশ্রামাগার, ফায়ার সার্ভিসসহ নানা আয়োজন। রয়েছে উন্নত জাতের গাভি পালনের শেড। এত কিছুর পরও সেখানে এখন রাজ্যের নীরবতা। কারখানায় কোনো মেশিনপত্র নেই। কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ভবন। ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে অনেকটাই। জনমানবহীন এলাকাটিতে গা ছমছমে ভূতুড়ে পরিবেশ। রাত হলেই জমে অপরাধী আর মাদকসেবীদের আড্ডা। কে বা কারা লুটে নিয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। বেহাত হওয়ার পথে অনেক জমিও। এই শিল্প পার্কের মালিক বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপ। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল পোশাক কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে উদ্ঘাটিত হয় দেশের ব্যাংকিং খাতের সর্ববৃহৎ এই অনিয়ম। সব মিলিয়ে ৩৮টি মামলা করে দুদক। গ্রেপ্তার করা হয় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। এরপর একে একে বন্ধ হয়ে যায় সব প্রতিষ্ঠান। এক দশক পর বিশাল সেই সাম্রাজ্যে শুধুই শূন্যতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলমার্কের শিল্প পার্কের কারখানার যন্ত্রপাতি লুটপাটে জড়িত এলাকার কয়েক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি। লুটেরারা প্রভাবশালী হওয়ায় এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি কেউই। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং হলমার্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দুদক যখন হলমার্কের বিরুদ্ধে মামলা করে, তখন হলমার্কের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক হয়নি। দেখভালের জন্য বিশেষ কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদের সর্বমোট ৪৩টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করতেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। তবে তানভীরের গ্রেপ্তারের পরই বন্ধ হয়ে যায় এসব কারখানা। যদিও বেশ কয়েকবার আলোচনায় উঠেছিল তানভীর ও জেসমিন ইসলাম জামিনে বের হয়ে ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের দেনা শোধ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর বিষয়টি এগোয়নি। যদিও হাজার কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রাংশসহ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, হলমার্ক শিল্প পার্কের চারপাশ উন্মুক্ত। কোনো প্রবেশপথেই নিরাপত্তারক্ষী নেই। সাধারণ মানুষ দেদার কারখানা এলাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন। ভেতরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি দোকানও। বেশ কয়েকটি ভবনের মধ্যে আবাস গড়েছেন কিছু মানুষ। তবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হলমার্কের কারখানা এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভবনই ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক কারখানা ভবন ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এসবের মধ্যে একসময় মূল্যবান যন্ত্রাংশ থাকলেও এখন কিছুই নেই। পুরো এলাকার কোনো ভবনেই যন্ত্রপাতির দেখা মেলেনি। কোথাও কোথাও ভবন থেকে লোহার পাত খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি গত বছরের শেষ দিকে কারখানা এলাকায় খুন হন একজন নিরাপত্তারক্ষীও। হলমার্কের দুজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন এই গ্রুপে চাকরি করেছি। তাই মাঝেমধ্যে কারখানা এলাকায় যাই। তবে সেখানে এখন কিছুই নেই। সব বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এখন জমি বিক্রির অপচেষ্টা চলছে। ওই দুই কর্মকর্তার কথার সত্যতাও মিলেছে সরেজমিন। কারখানা এলাকার একটি ভবনের মধ্যে গড়ে উঠেছে আমেনা মাখনুস মাদ্রাসা ও এতিমখানা। মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে ভেতরের একজন দোকানি বলেন, কারখানার সম্পদ এখন পাবলিকের। স্থানীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তার অনুমতি পেলে যে কেউ যা কিছু করতে পারে। শুধু ওই মাদ্রাসা নয়, কয়েকটি ভবনে স্থানীয় কয়েকজন মালিক হিসেবে নিজেদের নামফলক টানিয়েছেন। যদিও হলমার্কের মালিকপক্ষের অবর্তমানে ওইসব জমি নিয়ে আদালতে বিচার চলছে। হলমার্কের মালপত্র লুটের বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে অভিন্ন তথ্য। স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ মদদেই এসব মালপত্র লুটপাট হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ সরিয়ে ফেলা হয়েছে রাতের আঁধারে। হলমার্ক গ্রুপে কাজ করা সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরই জামিনে বের হয়েছিলেন জেসমিন ইসলাম। ওই সময় তিনি কিছু মেশিন ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেছিলেন। এরপর থেকে হলমার্কের কারখানাগুলো থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিয়মিতভাবে নানা মেশিনারিজ ও দ্রব্যাদি বিক্রি করছেন দেদার। স্থানীয়রা বলেন, প্রভাবশালীরা যে যার ইচ্ছামতো হলমার্কের মালপত্র সরিয়ে বিক্রি করেন। জমি আর পরিত্যক্ত ভবন ছাড়া তেমন কোনো মেশিনারিজ এখন আর নেই। শুধু একটি কারখানা সচল রয়েছে। পুরো হলমার্ক এলাকা বর্তমানে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া হলমার্কের তানভীর গ্রেপ্তার হওয়ার সময় কয়েকটি কারখানা ভবন নির্মাণাধীন ছিল। পরিত্যক্ত অবস্থায় সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তেঁতুলঝোড়ায় হলমার্কের প্রকল্পের শেষ প্রান্তে ছিল গরুর খামারের সাতটি বড় বড় শেড। এর মধ্যে একটি শেডে লোহার অ্যাঙ্গেল দৃশ্যমান রয়েছে। বাকি ৫টি শেডের টিন ও লোহার সব মালপত্র লুটেরারা কেটে নিয়ে গেছে। আনসার ক্যাম্পের এক সদস্য জানান, হলমার্ক গ্রুপের অনেক বড় একটি স্পিনিং মিল ছিল। ওই মিলের জন্য জার্মানি ও জাপান থেকে অত্যাধুনিক মেশিন আমদানি করা হয়েছিল। হলমার্ক গ্রুপের কর্ণধার তানভীর মাহমুদ আটক হওয়ার সময় মেশিনগুলো নতুন অবস্থায়ই প্যাকেট করা ছিল। এসব মেশিনারিজ রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার লোকজন কারখানা থেকে নিয়ে গেছেন। হলমার্ক শিল্প পার্কের পাশের একটি কারখানার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। হলমার্কের মালপত্র আশপাশের প্রায় সব কারখানায় বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় কয়েকটি কারখানায়ও হলমার্কের উন্নতমানের মেশিনগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের হলমার্কের কারখানার মেশিনারিজ বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বিক্রি করতে কারও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারও টাকা-পয়সার প্রয়োজন হলেই হলমার্কের কারখানার কিছু না কিছু বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রথমদিকে রাতের আঁধারে এসব বিক্রি চললেও পরে দিনের আলোতেও লুটপাট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হলমার্কের যেসব উন্নতমানের মেশিনারিজ ছিল, চাইলে সবকটি কারখানা আবার সচল করা যেত। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব নয়। কয়েকটি মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় তা আর সচল হবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব খামারে একসময় প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার গরু ছিল। এখন কিছুই নেই। তবে পাশেই গরুর খামার গড়ে তুলেছেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব। সেই জমিটি এখন তিনি নিজের বলে দাবি করছেন। যদিও হলমার্ক গ্রুপ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘জমি হলমার্কের। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব তার বলে দাবি করছেন। এসব নিয়ে কিছু করার নেই।’ জানতে চাইলে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব কালবেলাকে বলেন, ‘আমার গরুর খামার হলমার্কের জমির বাইরে। এসব জমির বৈধ কাগজপত্র আমার কাছে আছে।’ কারখানার যন্ত্রপাতিসহ হলমার্কের সম্পদ লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি কি এত দৈন্যদশায় আছি যে, হলমার্কের পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে হবে। আর এসব মেশিনপত্র কিনবেই বা কে? এরপরও আপনার কাছে কেউ অভিযোগ করলে আপনি যাচাই করে সত্যটা লিখবেন।’ তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য’ লিখলে মামলা করবেন বলেও হুমকি দেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান। সম্পদের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হলমার্ক গ্রুপের ম্যানেজার এইচ এম শামীম কালবেলাকে বলেন, ‘আমি মূলত মামলার বিষয়গুলো দেখি। গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাবন্দি আছেন। জামিনের চেষ্টা করছি।’ হলমার্কের সম্পদ দেখভালের দায়িত্বে কারা আছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলত আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেখভাল করা হয়। নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিজস্ব লোক আছে। তারা দায়িত্ব পালন করেন। তবে পর্যাপ্ত লোকজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘কারখানা থেকে হলমার্কের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই বিক্রি করা হয়নি।’ হলমার্ক গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হক বলেন, ‘আমরা অসহায়! কী করব আমরা? অনেক নিরাপত্তারক্ষী দরকার, কিন্তু টাকার অভাবে রাখতে পারছি না। প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। থানা-পুলিশকেও জানিয়েছি। কারখানাগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যেসব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তারা এগিয়ে এলে অবস্থা এমন হতো না। সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ নিলেও সম্পদ রক্ষা করা যেত।’ তিনি বলেন, ‘গরুর খামার ছিল। সেখানে এখন কিছু নেই। ১০-১২টা লিকলিকে গরু আছে। ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না।’ হলমার্কের সম্পত্তি বেহাত হওয়া নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা নেই। দুদকের যেসব মামলা রয়েছে, আমি শুধু সেগুলো দেখি।’ দুদকের আইনজীবী রুহুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাবন্দি। তাদের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে। শিগগির এসব মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।’
১৮ জুলাই, ২০২৩
X