খাবারের অভাবে লোকালয়ে কালোমুখো হনুমান
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এ গ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে দুই শতাধিক কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান। গ্রামের মানুষের সঙ্গে তাদের রয়েছে সখ্য। ঠিক কতদিন ধরে হনুমানগুলো এখানে বসবাস করে, তা এই গ্রামের মানুষেরও জানা নেই। বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা, দুই কেজি বাদাম, পাউরুটি ৫০ পিস ও সবজি দুই কেজি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এসব খাবার হনুমানদের দিয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমুল হাসান নামের এক যুবক। নাজমুলের ডাকচিৎকার শুনলেই কালোমুখো হনুমানগুলো লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে তার কাছে। তারা নাজমুলের হাত থেকে খাবার খায় অনেকটাই নির্ভয়ে। ভবনগর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০০টি হনুমানের জন্য যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হয়, তা দিয়ে তাদের ক্ষুধা মেটে না। সব সময়ই ক্ষুধায় কাতর থাকে হনুমানগুলো। তা ছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট আরও বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারণে তাদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি। হনুমানদের দেখভালকারী নাজমুল হাসান জানান, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। যে কারণে খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এ ছাড়া এলাকার বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় হনুমানগুলো লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও পরিমাণমতো খাবার জরুরি হয়ে পড়েছে। ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন বলেন, দিন দিন এলাকায় বড় গাছগুলো কমে যাওয়ার কারণে তাদের থাকার সমস্যা হচ্ছে। আবার তাদের যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাও সামান্য। হনুমানগুলো খাবারের কারণে লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলসহ বসতঘরেরও ক্ষতি করছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার বড় গাছগুলো রক্ষা করতে হবে আগে। বড় গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের এলাকার হনুমানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিবুর রহমান বলেন, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ প্রাণীটি মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্য প্রাণী থেকে তাদের রোগবালাইও কম হয়। এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব হনুমানের জন্য খাবারের বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরা সব সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার কারণে কোনোসময় তারা বেশি থাকে আবার কোনোসময় তারা সংখ্যায় কম থাকে। হনুমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য তৈরির খুবই প্রয়োজন। মহেশপুর ইউএনও ইয়াসমিন মনিরা বলেন, হনুমান যে ভবনগর গ্রামে বসবাস করে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে কী করা যায় দেখব।
২৯ জুন, ২০২৪

হুমকির মুখে দুই শতাধিক কালোমুখো হনুমান
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এ গ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে প্রায় ২০০ এর অধিক কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান । এ গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের রয়েছে সখ্যতা। ঠিক কতদিন ধরে হনুমানগুলো এখানে বসবাস করে তা এই গ্রামের মানুষেরও জানা নেই। বন অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানদের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম, পাউরুটি ৫০ পিস ও সবজি ২ কেজি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এ সব খাবার হনুমানদের দিয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমু হাসান নামের এক যুবক। নাজমুলের ডাক চিৎকার শুনলেই কালো মুখো হনুমানগুলো লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে তার কাছে। তারা নাজমুলের হাত থেকে খাবার খায় অনেকটাই নির্ভয়ে। ভবনগর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০০টি হনুমানের জন্য যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে তাদের ক্ষুধা মেটে না। সব সময়ই ক্ষুধায় কাতর থাকে হনুমানগুলো। তা ছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট আরো বেশি দেখা দিয়েছে।  যে কারণে এদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি। হনুমানদের দেখভালকারী নাজমুল হাসান জানান, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। যে কারণে খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এ ছাড়াও এলাকার বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও পরিমাণ মত খাবার জরুরি হয়ে পড়েছে।  ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন বলেন, দিন দিন এলাকায় বড় বড় গাছগুলো কমে যাওয়ার কারণে তাদের থাকার সমস্যা হচ্ছে। আবার তাদের যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হচ্ছে তাও সামান্য। হনুমানগুলো খাবারের কারণে লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলসহ বসতঘরেরও ক্ষতি করছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার বড় বড় গাছগুলো রক্ষা করতে হবে আগে। বড় বড় গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের এলাকার হনুমানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিবুর রহমান বলেন, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ প্রাণীটি মানুষের সঙ্গে মিলে-মিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্য প্রাণী থেকে এদের রোগ বালাইও কম হয়। এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব হনুমানের ওপর প্রতিবেদন করিয়ে খাবারের বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরা সব সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার কারণে কোনোসময় তারা বেশি থাকে আবার কোনোসময় তারা সংখ্যায় কম থাকে। হনুমানগুলোর রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য তৈরির খুবই প্রয়োজন। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন মনিরা কালবেলাকে বলেন, হনুমান যে ভবনগর গ্রামে বসবাস করে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে কি করা যায় দেখব।
২৮ জুন, ২০২৪

লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাদা রঙের কালো মুখের হনুমান
সিরাজগঞ্জে একটি সাদা রঙের কালো মুখের হনুমান দুই দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জেলার তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার বাসাবাড়ি, গাছপালা, দোকানে দোকানে ঘুরছে হনুমানটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রাণিটিকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা গেছে। অনেকে খাবারও দিচ্ছেন হনুমানটিকে। তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মর্জিনা ইসলাম হনুমানটির বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া তাড়াশ পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক হনুমানটির বিষয়ে খোঁজ রাখছেন বলে জানান। স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার থেকে উপজেলার পৌর এলাকার কহিত ও তাড়াশ পৌর বাজার এলাকায় একটি হনুমানের দেখা মেলে। আর সাদা রঙের কালো মুখের হনুমানটিকে দেখতে ওই এলাকার শিশু, কিশোর ও নারী-পুরুষরা পেছনে পেছনে ছুটছেন। উৎসুক জনতা হনুমানটিকে কখনো কলা আবার কখনো রুটি খেতে দিচ্ছেন। আবার ঢিলও ছুড়ছেন। উপজেলার পৌর এলাকার ফেরদৈস জামান বাচ্চু জানান, অতি উৎসাহী লোকজন হনুমানটির দৃষ্টি আকর্ষণে চেষ্টা করছে। প্রাণিটি স্থির থাকতে পারছে না। পাশাপাশি সেলফি তোলার হিড়িকে সারা দিন এ বাড়ি ও বাড়ি, এ গাছে ও গাছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় শফিউল হক বাবলু জানান, এলাকা সংলগ্ন হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক। ধারণা করা হচ্ছে দেশের বনাঞ্চল থেকে আসা কোনো ট্রাকের ছাদে করে হনুমানটি এ এলাকায় আসতে পারে।  এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, খবরটি আমি পেয়েছি। খাদ্য সন্ধানে মূলত হনুমানটি লোকালয়ে আসে। হনুমানটিকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকলেই সে চলে যাবে।
০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুখপোড়া হনুমান
গাছের পাতা খায় বলে পাতা বানর বলে, চলাফেরা ঘুম, খাবার সবই গাছে চলে। বাংলাদেশ, চীন, ভুটান আর ভারতে যায় দেখা, এদের কাছে যায় নাকি ভাই অনেক কিছু শেখা। লোমবিহীন মুখমণ্ডল মাথার চূড়া কালো, শান্তিপ্রিয় এদের দেখে লাগে অনেক ভালো। গাছের কচি পাতা খায় আর কুঁড়ি-ফুল দুপুরের পর জিরিয়ে নিতে করে নাতো ভুল। গাছের গর্ত, পাতায় পাতায় জমে থাকা পানি, এটা দিয়েই গোসল সারে তা কি মোরা জানি! ডাকে ওরা সারাদিন কু কু শব্দ করে, গাছের আগায় লাফিয়ে চলে একটুও না ডরে। টাঙ্গাইল, সিলেট, চট্টগ্রামের মিশ্র বনে বাস, খায় এরা গাছের পাতা খায় না তো আর ঘাস। ভয় দেখাতে এই হনুমান ভেংচি কাটে মুখে, খেলাধুলা লাফালাফি করে মনের সুখে। বনভূমি কমছে ওরা হচ্ছে ভাসমান, বিপন্ন এই প্রাণীটার নাম মুখপোড়া হনুমান। লেখক : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

চট্টগ্রামে বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
চট্টগ্রামে পাঁচটি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তিন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাতে নগরের বাকলিয়া থানার শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে একটি অটোরিকশায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপান খালী স্কুলের পাশে মৃত আবদুল মালেকের ছেলে মো. সেলিম, একই থানার চকরিয়ার পৌরসভার মৌলভীর চরের আবুল খায়েরের বাড়ির ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে নুরুল কবির ও মহেশখালী থানার শাপলাপুর বাড়িয়াছড়ি এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে সালাউদ্দিন কাদের প্রকাশ হেলাল উদ্দিন। বাকলিয়া থানার ওসি আব্দুর রহিম কালবেলাকে বলেন, গত ৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাকলিয়া থানার নতুন ব্রীজ এলাকা হতে অটোরিকশায় তল্লাশি চালানো হয়। পরে পাঁচটি মুখপোড়া হনুমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, হনুমানগুলো কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানার শাপলাপুর পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে পাচার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কক্সবাজার ও বান্দরবানের গভীর জঙ্গল থেকে বিরল বন্যাপ্রানী সংগ্রহ করে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয়। ওসি আরও বলেন, হনুমানগুলো বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
০৪ নভেম্বর, ২০২৩

নওগাঁয় দলছুট হনুমান এখন যেন পোষা প্রাণি
নওগাঁর রাণীনগরে কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামে কয়েক সপ্তাহ ধরে এক দলছুট মুখপোড়া হনুমান লোকালয়ে এসে গাছের ডালে ডালে, ঘরের ছাউনিতে ছুটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। তবে শিশুদের কথা ভেবে অনেক অভিভাবক আতঙ্কিত বলেও জানা গেছে। ক্ষুধার তাড়না আর লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে স্থানীয় নরেশ সরকারের বাড়িতে এ হনুমান নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। উৎসুক জনতা সেখানে তাকে একনজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। এ বিষয়ে নরেশ জানান, ‘প্রায় সপ্তাহ খানিক ধরেই আমার বাড়িতে হনুমানটা মাঝে মাঝে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করছে। আমি, আমার পরিবারের সদস্যরা মিলে পাউরুটি বিস্কুট এবং রুটি খেতে দিলে সে ইচ্ছে মতো খেয়ে নেয়। হনুমানটি যথেষ্ট শান্ত স্বভাবের। স্থানীয়রা হনুমানটিকে বিরক্ত না করায় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সে আমার বাড়ির ঘরের চালে অবস্থান করছে। সে এক পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করছে।’ কুজাইল গ্রামের আজমেল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমাদের গ্রামে এই হনুমানটি বিভিন্ন ঘরের চালে গাছের ডালে চলাফেরা করছে। প্রথম দিকে এলাকার লোজন বিরক্ত করলেও এখন তাকে আমরা আশ্রয় দিয়ে খাবার দিচ্ছি। হনুমানটিও এখন মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে না। শান্ত স্বভাবেই আমার প্রতিবেশি নরেশ সরকারের বাড়ি এবং বাটুলের বাড়ির আমড়া গাছে বেশি সময় থাকছে। নরেশ সরকার ইতোমধ্যে হনুমানটিকে পোষ্য প্রাণীর মতো খাবার দেওয়াসহ কেউ যেন বিরক্ত করতে না পারে সেই দায়িত্ব পালন করছেন। সারা দিন এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে আবার সে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে নরেশের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।’ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বণ্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘এরা আমাদের পরিবেশ বান্ধব প্রাণি। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে এদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রতিটি মানুষকে পরিবেশ রক্ষার স্বাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আভাসস্থল ধ্বংসের কারণে অনেক সময় হনুমান, বানর পথভ্রষ্ট হয়ে লোকালয়ে চলে আসে। মানুষ এদেরকে খাবার না দেওয়া এবং বিরক্ত না করলে নিরাপদ মুক্ত চলাচলে সহনশীল ও মানবিক আচরণ করা হলে এরা একাই নিরাপদ স্থানে চলে যাবে।’ অন্যদিকে বাংলাদেশ বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের দেখা মেলে যার মধ্যে একটি হল কালোমুখ হনুমানের (Hanuman Langur)। এই প্রজাতির হনুমান প্রায় ২০০ বছর ধরে যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে এদেরকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকালয়ে দেখা যায়। বুনো পরিবেশে এদের গড় আয়ু ১৮-৩০ বছর। সাধারণত জুলাই- অক্টোবর  বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এদের প্রজননকাল। স্ত্রী হনুমান ২০০ থেকে ২১২ দিন গর্ভধারণের পর সাধারণত ১/২টি বাচ্চা প্রসব করে। হনুমানের এই প্রজাতিটি গাছের কচিপাতা, শাকসবজি ও ফলমূল, ফুল খায়। তবে বসতবাড়ির কাছাকাছি বসবাস করায় মানুষের খাবারেও এরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন)-২০১২ অনুযায়ী হনুমানের এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।  
৩০ নভেম্বর, ০০০১

পাচারের সময় উদ্ধার বিলুপ্তপ্রায় দুই হনুমান
পাচারের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিলুপ্তপ্রায় দুটি হনুমান উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় পাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে চক্রের হোতা হাদিসুর রহমান পলাতক। গতকাল সোমবার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এ অভিযান চালায়। পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা হনুমানের মধ্যে একটি মুখপোড়া, অন্যটি চশমাপরা। প্রাণী দুটিকে গতকাল রাতে বন অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে পাচার হয়ে ঢাকায় বিলুপ্তপ্রায় বণ্যপ্রাণী আসছে—এমন গোপন খবরে তাদের একটি দল ধলপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর হনুমান দুটি নিয়ে যাওয়ার সময় কাওসার নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সাজউদ্দিন নামে অন্য একজনকে আটক করা হয়। সাজউদ্দিন জানিয়েছেন, তার মালিক হাদিসুর বণ্যপ্রাণীর ব্যবসা করেন। আগে মিরপুরে মালিকের বণ্যপ্রাণী বিক্রির দোকান থাকলেও এখন ভাটারায় দোকান রয়েছে। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী দমন ইউনিটের কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, চশমাপরা হনুমান ও মুখপোড়া হনুমান দেশের বনাঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায়। পলাতক হাদিসুর রহমান তাদের তালিকায় আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী চোরাচালান চক্রের সদস্য। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। উদ্ধার করা হনুমান দুটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বা অন্য কোনো সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করা হবে। যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মুকিত হাসান বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী পাচার আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। হাদিসুরকে আটক করতে অভিযান শুরু হয়েছে।
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X