স্বাস্থ্য / হিটস্ট্রোক ও সাধারণ স্ট্রোক
ইদানীং গরমের কারণে শোনা যাচ্ছে হিটস্ট্রোকের কথা। এটি একটি জরুরি স্বাস্থ্যগত অবস্থা, যা যে কারও হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা নিলে মস্তিষ্কের ক্ষতি ও স্ট্রোকসংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অন্যথায় রোগীর মৃত্যুও ঘটে। তবে সাধারণ স্ট্রোক বলতে যা বুঝি, সেটার সঙ্গে হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো—মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, বমি ভাব, মাথা ঘোরা, শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে, গরম লাগা, লাল, শুষ্ক বা স্যাঁতসেঁতে ত্বক, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালিগুলো খুলে যায়। তখন রক্তচাপ কমে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃৎপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়।
এমনিতে সাধারণ স্ট্রোক বলতে আমরা যে রোগটির কথা জানি, তা হলো মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্ত প্রবাহের ঘাটতি। রক্তনালির ভেতরের অংশে কোলেস্টেরল, চর্বি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি জমে রক্ত চলাচলের পথ সরু বা বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের যে কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
দেহের রক্তের মাত্র ২ শতাংশ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। মস্তিষ্কের কোষগুলো বেশ সংবেদনশীল। অক্সিজেন বা শর্করা সরবরাহে সমস্যা হলে দ্রুত কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ রক্ত সরবরাহের সময় ব্যাঘাত ঘটলে নালিকাগুলো ফেটে গিয়ে স্ট্রোক হতে পারে।
মূলত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। ইসকেমিক স্ট্রোক, হেমোরেজিক স্ট্রোক। রক্তবাহী নালিকা জমে গিয়ে নালি সরু হয়ে যাওয়ার কারণে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। তখন ইসকেমিক স্ট্রোক হয়। আবার মস্তিষ্কের ভেতরে দুর্বল রক্তনালি ফেটে বা ছিদ্র হয়ে মস্তিষ্কের চারপাশে রক্তক্ষরণের কারণে হেমারেজিক স্ট্রোক হয়।
ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিয়া অ্যাটাক হয়, যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয়, তখন সেটা ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিয়া অ্যাটাক। এতে মস্তিষ্কে কোনো স্থায়ী ক্ষতি না হলেও পরে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণ স্ট্রোকের উপসর্গ
হঠাৎ মুখ, হাত অথবা পায়ের একপাশ দুর্বল হওয়া বা অবশ হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো, হাঁটতে ও ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হয়। এ ছাড়া চোখে ঘোলা লাগবে, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা যাবে। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, কথা বলতে ও বুঝতে অসুবিধা হওয়া।
শনাক্তকরণ
দ্রুত স্ট্রোক শনাক্ত করা যায় ফাস্ট পদ্ধতি।
ফেস : লক্ষ করতে হবে রোগীর চোখ-মুখ ঝুলে গেছে কি না এবং মুখ বেঁকে গেছে কি না, হাসলে বেঁকে যাচ্ছে কি না?
আর্মস : রোগী নিজে নিজে দুই হাত ওপরে তুলতে পারে কি না এবং কিছুক্ষণ ধরে রাখতে পারে কি না।
স্পিচ : খেয়াল করতে হবে কথা বলতে গেলে জড়তা আসে কি না অথবা মুখের কথা এলোমেলো হয়ে যায় কি না।
টাইম : যদি ওপরের তিনটি লক্ষণের যে কোনো একটি দেখা যায় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। নিউরোলজির চিকিৎসা রয়েছে—এমন হাসপাতালে নিতে হয়।
চিকিৎসা
হিটস্ট্রোক হলে রোগীকে দ্রুত ছায়াযুক্ত, শীতল জায়গায় নিয়ে যান এবং পোশাক খুলে ফেলুন। ঠান্ডা পানি বা বরফ গোসলের ব্যবস্থা করুন। গোসল সম্ভব না হলে ভেজা কাপড় দিয়ে ত্বক ঘন ঘন মুছে দিন। মাথা, ঘাড়, বগল ও বিভিন্ন জয়েন্টে ঠান্ডা ভেজা কাপড় বা বরফ রাখুন।
সাধারণ স্ট্রোকেরও কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল লেভেল, ডায়াবেটিসের পরিমাণ, সিটি স্ক্যান, কারোটিড আলট্রাসনোগ্রাম, প্রয়োজনে এমআরআই, ইকো কার্ডিওগ্রাফি ইত্যাদি করে রোগীর সার্বিক অবস্থা দেখেন চিকিৎসকরা। ইসকেমিক স্ট্রোকের রোগীকে রক্ত জমাট বাঁধা বা মস্তিষ্কে দ্রুত রক্ত চলাচল চালুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসকরা দ্রুত সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। আবার হেমোরেজিক স্ট্রোকের অপারেশনও করা হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
হিটস্ট্রোকে প্রতিরোধে ঘরে বা ছায়ায়
থাকাই প্রথম কাজ। পান করতে হবে প্রচুর পানীয়। এ সময় শিশুদের কোনো ঘরে বা গাড়িতে একা রেখে যাবেন না। সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সূর্যের আলো
থেকে দূরে থাকতে হবে। দিনে শরীরচর্চা বাদ দিন। কোথাও গেলে সঙ্গে করে পানি নিয়ে যাবেন।
অন্যদিকে সাধারণ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, টেনশনমুক্ত জীবন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এ ছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন, মদ্যপান ও ধূমপান বাদ দিন।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪