বন্ডের সুদ ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
বেশি সুদের আশায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। ১০ বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার এখন সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত, যা গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তুলনামূলক নিরাপদ বিনিয়োগ হওয়ার কারণে ক্রমেই বাড়ছে বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়া কমালে বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ঋণ নেওয়া বাড়তে থাকে। এদিকে ক্রমবর্ধমান সুদহারের কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার চেয়ে বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। কারণ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ নিরাপদ, কিন্তু ঋণ বিতরণ করলে তা মন্দ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ জুন ১০ বছরমেয়াদি বন্ডে সুদহার বেড়ে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এই সুদে ৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। তবে পুরো ঋণ একই সুদহারে নিতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাসেও ১০ বছরমেয়াদি এই বন্ডের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এদিকে ১৫ বছরমেয়াদি বন্ডে সুদ উঠেছে ১৫ দশমিক ২০ এবং ২০ বছরমেয়াদি সুদের হার ছিল ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইদানীং ব্যাংকসহ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। কারণ এই খাতে সুদের হার ক্রমেই বাড়ছে। আর বন্ডের মতো নিরাপদ বিনিয়োগ আর নেই। ঋণ বিতরণের পর খেলাপি হওয়ার শঙ্কা এখানে একেবারেই নেই। ২০০৭ সালের দিকে বন্ডের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপর থেকে কমতে থাকে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথ অনুসরণ করছে। সুদহার বাড়িয়ে একদিকে মানুষের হাতের টাকা ব্যাংকে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে খরচ বাড়িয়ে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বন্ডে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২ বছরমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ১২ থেকে ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৫ বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৩০ থেকে ১৫ দশমিক ৩০, ১০ বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৫৪ থেকে ১৫ দশমিক ৮০, ১৫ বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৬০ থেকে ১৫ দশমিক ২০ এবং ২০ বছরমেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৫৯ থেকে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের ঋণ দিচ্ছে না। এজন্য ব্যাংকগুলো সরকারি বিল-বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী সুদের হার বাড়িয়ে নিচ্ছে। এতে একদিকে সরকারের যেমন সুদ ব্যয় দিনদিন বাড়ছে। একইভাবে বেসরকারি খাতের ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। কারণ ব্যাংক নিরাপদ খাত হিসেবে তার বেশিরভাগ অর্থই বেশি সুদের বিল-বন্ডে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের ছোট উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাবেন। আর কর্মসংস্থান তৈরির পথ রুদ্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শহরাঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক টাকা না রেখে বিল বন্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছে। সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি না করে বিল বন্ডের অর্থে নজর থাকলে সাধারণ মানুষের এই খাতে বিনিয়োগের হার বাড়বে। এতে ব্যাংক আমানতেও প্রভাব তৈরি করতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত ওই ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়নি বলেও মনে করেন সাবেক এ ব্যাংকার। দেশের উচ্চমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত বছর থেকে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এরপর থেকেই হুহু করে বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদের হার। সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহারও। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এসব উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সে উদ্দেশ্য এখনো পূরণ হয়নি। উল্টো মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ব্যাংককাররা জানান, ব্যাংকিং খাতে তারল্যসংকট রয়েছে। কোনো কোনো ইসলামী ব্যাংক এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বর্তমানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
২৫ জুন, ২০২৪

সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে
কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না, তাই দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর সরকারকে বেশি ভরসা করতে হচ্ছে। বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে গত বছরগুলোয় নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসল পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেই চাপ আরও বাড়ছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো আগামী বাজেটেও জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রেখেই অনুদানসহ ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঘাটতি রাখা হয়েছে। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। এদিকে, আগামী বাজেটেও থাকছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। মোট বাজেটের ২০ শতাংশই চলে যাবে সুদ পরিশোধে। আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎসে সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে সুদ খাতের ব্যয় বাজেটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসে সুদ পরিশোধে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদে ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়।
০৭ জুন, ২০২৪

বাজেটের ২০ শতাংশ চলে যাবে সুদ পরিশোধে
ঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না রাজস্ব। সরকারকে ভরসা করতে হচ্ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর। এ জন্যই অর্থের জোগান দিতে আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে বিগত বছরগুলোতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। এরই প্রেক্ষিতে নতুন অর্থবছরের জন্য পেশ করা বাজেটে সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট বাজেটের ২০ শতাংশই চলে যাবে সুদ পরিশোধে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎসে সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে সুদ খাতের ব্যয় বাজেটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসে সুদ পরিশোধে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদে ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের সময় এসব তথ্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়। এদিকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো আগামী বাজেটেও জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রেখেই অনুদানসহ ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঘাটতি রাখা হয়েছে। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। আজ সংসদে বিকেল ৩টার পর থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। যা এর আগে একটি বিশেষ বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক শুরু হয়। অনুমোদিত এ বাজেট দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫তম এবং এ অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট www.mof.gov.bd এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট www.nbr.gov.bd- এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পড়তে পারবেন এবং ডাউনলোডও করা যাবে। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে থেকে [email protected]–এ ইমেইলের মাধ্যমে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে পারবেন।
০৬ জুন, ২০২৪

সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে
কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না, তাই দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর সরকারকে বেশি ভরসা করতে হচ্ছে। বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে বিগত বছরগুলোতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ আসল পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে।  আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৫ শতাংশের সমান।  বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসাবে এটি তার প্রথম বাজেট।  প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো আগামী বাজেটেও জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রেখেই অনুদানসহ ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঘাটতি রাখা হয়েছে। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে।  এদিকে, আগামী বাজেটেও থাকছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। মোট বাজেটের ২০ শতাংশই চলে যাবে সুদ পরিশোধে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎসে সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে সুদ খাতের ব্যয় বাজেটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসে সুদ পরিশোধে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর  বিদেশি ঋণের সুদে ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।  চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়।
০৬ জুন, ২০২৪

বাজেটের ১৪ শতাংশের বেশি চলে যাবে সুদ পরিশোধে
আজ আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এবারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট রাজস্ব খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছে। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছে সরকার, যা মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে যাবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ হয়েছে দ্বিগুণ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে যে অর্থ রাখা হয়েছিল তা অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। গত এক দশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ।  চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার বা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে সুদ পরিশোধের অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। তবে, ডলারের দাম ও সুদের হার বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ঋণের সুদের জন্য এক লাখ ৫৩০০ কোটি টাকা রেখেছে সরকার।  জানা যায়, প্রণোদনা বাবদ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ভর্তুকি, সুদ আর সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বিপুল অঙ্কের টাকা রাখতে গিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো কঠিন হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশাল বাজেটের ৪০ শতাংশই ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হবে।    
০৬ জুন, ২০২৪

সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১২৪ শতাংশ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বাড়ছে। একই সঙ্গে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল রোববার চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, প্রথম ১০ মাসে সরকার সুদ, আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ৩০ হাজার ৯২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৯ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ঋণ শোধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে সুদ পরিশোধ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ৬২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। আর ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১০১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোতে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে, এর মধ্যে আসল ঋণ ১৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাকি ১২ হাজার ৬২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে; কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৯ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৫ হাজার ৬২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে। এ সময়ে ডলারে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১৯৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ সময় ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের বছর ছিল ৫৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৯১ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। ঋণের অর্থ ছাড়া বাড়লেও কমেছে অনুদানের অর্থ। অর্থবছরের ব্যবধানে যেখানে ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ৪০ কোটি, সেখানে অনুদান কমেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ পর্যন্ত দেশটি থেকে অর্থছাড় হয়েছে ১৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবি ছাড় করেছে ১৪৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ১০৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ৮৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। ভারত দিয়েছে ২৪ কোটি ২২ লাখ ডলার। বাকিগুলো অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে এসেছে। ঋণ পরিশোধ এবং অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা এ সময়ে ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ২০৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ১৪৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এদিকে অর্থছাড় করলেও রাশিয়া চীন এবং ভারতের কাছ থেকে অর্থবছরের ১০ মাসেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
২৭ মে, ২০২৪

সংশোধিত ব্যয় বাড়ল আরও ৩,৪২৪ কোটি / বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে চাপে পড়ছে বাজেট
দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের চাপ রয়েছে। এই ঋণ দেশি বা বিদেশি হোক, তা নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদসহ পরিশোধের বিধান রয়েছে। এই পুঞ্জীভূত ঋণের একটা অংশ প্রতি মাসে সরকার এখন সুদ-আসলে পরিশোধও করছে। তবে দেশি ঋণ যখন খুশি সরকার শোধ দিতে পারে; কিন্তু বিদেশি ঋণে নির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে দিন যত পার হচ্ছে, এ ঋণ পরিশোধে সরকারের চাপও তত বাড়ছে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) গত ৯ মাসেই বিদেশি ঋণের সুদ-আসল মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের আসল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধ বাবদ ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৩৭ হাজার ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে, বাজেটে বৈদেশিক ঋণের দায় খাতে রাখা বরাদ্দের অর্থ দিয়ে চলতি অর্থবছরের বাকি ব্যয় সংকুলান হচ্ছে না। দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ কারণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকার ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক বাজেটে বিদেশি ঋণের জন্য ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে সেটি ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত বাংলাদেশের মতো কল্যাণমূলক উন্নয়নশীল দেশে সব সরকারেরই জনপ্রতিশ্রুতি থাকে। এ কারণে উন্নয়নের চাহিদাও বেশি হয়। বিশেষ করে এই বাস্তবতায় এ ধরনের দেশগুলোয় রাজনৈতিক সরকারের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কম আয়ে বেশি উন্নয়নের চেষ্টা। ফলে সরকার বিভিন্ন সময় উন্নয়ন চাহিদা পূরণে বাড়তি ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের তাল মেলাতে প্রতি বছর যে বাজেট তৈরি করছে, তার ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাতের বাইরে বৈদেশিক বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করে থাকে। দেশে সরকারের কাঁধে এখন যে ঋণের বোঝা, এটি তারই পুঞ্জীভূত আকার। যার ঋণ এখন প্রতি মাসেই সুদ-আসলে শোধ দিতে হচ্ছে। তবে বিদেশি ঋণে সুদ তুলনামূলক কম, পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ডও বেশি। এ কারণে সরকার বিদেশি ঋণেই ঝুঁকছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় আড়াই গুণ। সংশোধিত বাজেটে বিদেশি ঋণের দায় খাতে এই অতিরিক্ত বরাদ্দের কারণ জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি ঋণের প্রায় ৪৫ শতাংশই নেওয়া এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) মুদ্রায়, যা পরিশোধ করতে হয় সাধারণত মার্কিন ডলার কিংবা যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিংয়ে; কিন্তু সম্প্রতি বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে এখন এই এসডিআর মুদ্রার সঙ্গে ডলার ও পাউন্ডের বিনিময় হার, ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য এবং ইউরোবর ও সোফর হার অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের ওপর সুদ পরিশোধের পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে। অর্থাৎ ডলার ও পাউন্ডের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে একই পরিমাণ বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয়ই এখন বাজেট ব্যবস্থাপনায় সরকারের বড় চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে। যেগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এখন তার অর্থায়নকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এতে করেও নতুন-পুরোনো মিলে সরকারের কাঁধে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপও আগের তুলনায় বেড়েছে। এই বাস্তবতায়ও বাজেট সংশোধনীতে এ খাতের সুদ পরিশোধের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে এই বৈদেশিক উৎসের ঋণ সরকারের নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করার কথা; কিন্তু দেশীয় বাস্তবতায় সরকারের আয় কম। আবার আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রও কম। একমাত্র ভরসা হলো রাজস্ব খাত। সেখান থেকেও নানা কারণে কাঙ্ক্ষিত আয় আসছে না। যে কারণে সরকার নিজের আয় থেকে আংশিক পরিশোধ করে বাকিটা ঋণ নিয়েই ঋণের দায় শোধের চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমস্যা হচ্ছে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের আয় বাড়াতে পারছে না। আবার যে আয় করছে, তার বড় একটা অংশ ভর্তুকিতেই খরচ করে ফেলছে। আবার রাজস্ব আয় বাড়ানোর যে সংস্কার কাজ তারও গতি বাড়াতে পারছে না। এ বাস্তবতায় যে বিদেশি ঋণ আসছে, তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কিছুটা ধীরগতির কারণে হয়তো সেটি বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে থাকতে পারে। তবে এতে করে বিদেশি ঋণের আকার যেমন বাড়বে, তেমনি সুদ পরিশোধ খাতেও বড় আকারের ব্যয় করতে হবে। এর থেকে বেরিয়ে সরকারের উচিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে রাজস্ব ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা উঠিয়ে সরকারের রাজকোষ সমৃদ্ধ করা। এতে অন্তত প্রতি বছর যে মোটা অঙ্কের সুদ ডলারে পরিশোধ হচ্ছে, সেটি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সুদ পরিশোধেই গেছে সাড়ে ১১ হাজার কোটির বেশি টাকা
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বেড়েছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোর নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ ঋণ করে আগের ঋণ পরিশোধ করছে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গতকাল সোমবার চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ২৫৭ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। ঋণ শোধের বাড়তি চাপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। আর ডলারের হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোয় নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তার মধ্যে আসল ঋণ ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে ডলারের হিসাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১৭৩ কোটি ৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৩ কোটি ডলার। এ সময় ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আগের বছর ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৫৬৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ঋণের অর্থছাড় বাড়লেও কমেছে অনুদানের অর্থ। অর্থবছরের ব্যবধানে যেখানে ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ৩০ কোটি, সেখানে অনুদান কমেছে প্রায় ২ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এ সংস্থা অর্থছাড় করেছে ১৪০ কোটি ২৭ লাখ ডলার। জাপান ছাড় করেছে ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া রাশিয়া ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। ভারত দিয়েছে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বাকিগুলো অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে। ঋণ পরিশোধ ও অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা এ সময়ে ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩০৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪১৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৯৯২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৬২ কোটি ২ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অর্থছাড় করলেও রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে অর্থবছরের ৯ মাসেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে সুদ বাড়ল
ব্যাংক খাতের পর এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতেও কমানো হয়েছে ঋণের করিডোর রেট। এখন থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় রেটের (স্মার্ট রেট) সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে। আর আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করিডোর হবে ২ শতাংশ। অর্থাৎ আগের ঋণ ও আমানতে করিডোর রেট দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। করিডোর কমলেও স্মার্ট রেট বৃদ্ধিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে সুদহার সাড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আর্থিক নীতিহার বিবেচনায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহার নতুন করে ঠিক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমানতে সুদ বা মুনাফা মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের স্মার্ট রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নেওয়া যাবে। আর ঋণ, লিজ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদ বা মুনাফার হার নির্ধারণে স্মার্ট রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নেওয়া যাবে। নতুন করে আহরণ করা আমানত ও বিতরণ করা ঋণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। তবে আগের প্রজ্ঞাপনের অন্য নির্দেশনাগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। এদিকে, করিডোর রেট কমলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে স্মার্ট রেট বেড়েছে। স্মার্ট রেট এখন ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ মার্চ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের সুদহার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এক কথায় করিডোর রেট কমলেও স্মার্ট রেট বেড়ে যাওয়ায় সস্তায় ঋণ পাবে না গ্রাহকরা। এ ছাড়া আমানতে সুদহার দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
০৪ এপ্রিল, ২০২৪
X