চার বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফের বসছে সীমান্ত হাট
দীর্ঘ চার বছর পর চালু হতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা (তারাপুর-কমলাসাগর) সীমান্ত হাট। মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে সীমান্ত হাট সম্মেলন কক্ষে দু’দেশের সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে এ হাট বসবে। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জেসমিন সুলতানা এবং ভারতের পক্ষে ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুব্রত মজুমদার নেতেৃত্ব দেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান, কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহারিয়ার মুক্তার, কসবা পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম হাক্কানী, কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার, সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম, কসবা থানার ওসি মো. রাজু আহমেদ, বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার মনোরঞ্জন সরকার এবং ভারতের পক্ষে ত্রিপুরা রাজ্যের কাস্টম সুপারিনটেনন্ডেন্ট এসএমটি সুজাতা, মুধুপুর পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তা অনিমেশ পাল, বিশালঘর এসডিপিও পঙ্কজ সেন ও বিএসএফ কর্মকর্তা রমেশ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।  বৈঠকের পর উভয় দেশের প্রতিনিধিদলের নেতারা বর্ডার হাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এডিএম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) জেসমিন সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, দু’দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৯ জুলাই বর্ডার হাট পুনরায় উদ্বোধনের প্রাথমিক দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। এরইমধ্যেই হাটের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে।   এদিকে এডিএম (সিপাহীজলা) সুব্রত মজুমদার হাটের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আগামী ২৯ জুলাই হাট পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও জনগণ উপকৃত হবে।  উল্লেখ্য ২০১৫ সনের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে এই হাটের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের ১১ জুন থেকে সপ্তাহের একদিন এ হাট বসা শুরু করেছিল। এ সীমান্ত হাটটি করোনা ভাইরাসের কারনে ২০২০ সালের ১১ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়।   জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২০৩৯ পিলারের কাছে ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ এক একর ৫০ শতক জায়গাজুড়ে সীমান্ত হাট অবস্থিত। প্রত্যেক রোববার এ হাটের আয়োজন করা হয়। এতে ভারতের ২৫টি এবং বাংলাদেশের ২৫টি দোকান বসত। 
০২ জুলাই, ২০২৪

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা / দুই বছর বন্ধ কসবার তারাপুর সীমান্ত হাট
দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ তারাপুর সীমান্ত হাট। ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার এ হাটের ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত হাট খোলার ব্যাপারে গত ৬ জুন দুই দেশের এডিএম পর্যায়ের বৈঠকে আগামী এক মাসের মধ্যে হাট খোলার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে হাট বন্ধ রাখলেও ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করেনি হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। এতে চরম অর্থসংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রকোপ কমে যাওয়ায় দ্রুত সীমান্ত হাট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ মালিকানায় যাত্রা শুরু হয় তারাপুর সীমান্ত হাটের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহিজলা জেলার কমলাসাগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে এ হাটের অবস্থান। সীমান্ত হাট ব্যবসার জন্য যতটা না চাঙ্গা ছিল, তার চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ ছিল দুই বাংলার মানুষের সম্প্রীতির মেলবন্ধনের কারণে। পণ্য বেচাকেনার পাশাপাশি প্রতি হাটবার দুই বাংলার মিলনমেলা বসত এই সীমান্ত হাটে। হাটে দুই দেশের ৫০টি করে মোট ১০০টি দোকান আছে। প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলত হাটের বেচাকেনা। মূলত সীমান্তের ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের কেনাকাটার জন্যই প্রতি হাটবার ১ হাজার মানুষকে হাটে প্রবেশের জন্য টিকিট দেওয়া হয়। তারাপুর সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী পলাশ কর্মকার বলেন, হাটে তিনি দা-বঁটিসহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন। হাট বন্ধ হওয়ার আগে দোকানে ২ লাখ টাকার পণ্য তুলেছিলেন; কিন্তু হঠাৎ করে হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় বাজারে কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি করেন। তবে এখনো বেশ কিছু পণ্য অবিক্রীত রয়ে গেছে। এ ছাড়া তার দোকানে যে দুজন শ্রমিক কাজ করতেন, হাট বন্ধ হওয়ায় তারাও এখন কর্মহীন হয়ে অর্থকষ্টে আছেন। আজহারুল ইসলাম বাবু নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, হাটে তার কাপড়ের দোকান ছিল। হাট বন্ধের কারণে তার দোকানের অন্তত দেড় লাখ টাকার কাপড় নষ্ট হয়েছে। সেগুলো শীতের কাপড় ছিল। আর কভিডের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় সেগুলো স্থানীয় কোনো মার্কেট বা দোকানে বিক্রি করতে পারেননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারাপুর সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হেলেনা পারভীন বলেন, হাটের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। তবে হাট খোলার ব্যাপারে তাদের (ভারত অংশের ব্যবস্থাপনা কমিটি) আগ্রহ আছে। দুই দেশের সরকারি সিদ্ধান্ত হলে হাট খুলে দেওয়া হবে। খুলে দেওয়ার নির্দেশনা এলে হাটের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করে খুলে দেব আমরা।
২৮ জুলাই, ২০২৩
X