সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আর্থিক সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের
জুন মাসের মৌসুমি বন্যা থেকে পুনরুদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাকে সহায়তা করতে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহুমুখী নগদ সহায়তা হিসাবে এই অর্থ বিতরণ করবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে অংশীদারত্ব এবং এই ট্র্যাজেডিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও পানি কেনা, জীবিকা নির্বাহ, আশ্রয়কেন্দ্র মেরামত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণের কারণে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৫ লাখের বেশি মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়ে ৩০,০০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে আরও একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে জরুরি সহায়তার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। উন্নয়নখাতে ২০০ মিলিয়ন ডলার এবং মানবিক সহায়তায় আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে ইউএসএআইডি বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ প্রসারিত, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রচার, পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।  
৯ ঘণ্টা আগে

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, বাড়ছে নানা রোগবালাই
সিলেটে ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসী মানুষ। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন বন্যার পানিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগসহ নানা ধরনের রোগবালাই। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষত চিহ্ন ভেসে উঠছে। এদিকে বন্যার কারণে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকি ও টিউবওয়েল ডুবে গিয়ে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। জেলায় বন্যা পানিবন্দি মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১৫ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন। চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায়  সিলেট মহানগরেরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে অনেক নিচু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি এখনো। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরছেন বাসিন্দারা। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিপৎসীমার উপরে রয়েছে এখনো সুরমা নদী ও কুশিয়ারা ৩টি পয়েন্টের পানি। এছাড়া অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও পানীয় জলের সংকট। ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও চুলা ভিজে থাকায় রান্না করতে পারছেন না অনেকেই। সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২৫ জুন) পর্যন্ত  সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১৫ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন। সোমবার (২৪ জুন) এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৯৪৮ জন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেল ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত রয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায়  সিলেটে ৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জের ওপর দিয়ে জুড়ি নদী, শেরপুরের ওপর দিয়ে মনু নদী কুশিয়ারা নদীতে যুক্ত হয়। তাই কুশিয়ারা নদীর পানি নামার হার ধীরগতির। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত তাই পানি ধীরগতিতে নামছে। এখন বৃষ্টিপাত কমে গেলে ও সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন রোদ হলে বন্যার পানি কমে যাবে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত কালবেলাকে বলেন, পানিবাহিত রোগের রোগী আছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নায়। পানিবাহিত রোগ মোকাবেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। বন্যায় পানিবাহিত রোগ থেকে বাচার জন্য সবাইকে পানি বিশুদ্ধতাকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য স্বাস্থ বিভাগ থেকে আহ্বান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আমরা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে।
২৫ জুন, ২০২৪

ফের ২০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে বন্যা
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ১৫টি এলাকার ১০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত।  বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারেন। মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন তারা। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই গত শনিবার ফের কবলিত সিলেট। সোমবার ঈদের দিন ভোর রাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে শুরু করে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। ঈদের দিন দুটি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে থাকলেও মঙ্গলবার সকালে ৪ টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। বিকেলে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় পানি আরও বেড়েছে। চৌকিদিঘির বাসিন্দা মতিন মিয়া কালবেলাকে জানান, ‘ঘরে কোমর সমান পানি, আমার পরিবার গাঙ্গের হপাড় রাইক্কা আইছি আশ্রয়কেন্দ্রত। একবারে নিরাশ অবস্থা, খাবারদাবার কিচ্ছুই নাই। এই অবস্থার মাঝে আছি। আমরা বারবার ভোগান্তির স্বীকার হইরাম। কেউ দেখেরও না। সরকারের পক্ষ থাকিও কুন্তা দেওয়া ওর না।’ ওই এলাকার সালেহা খাতুন কালবেলাকে বলেন, দুই-তিনদিন ধইরা আমরা কোমর পানিতে আছি । আইজ একটা স্কুলের বারান্দাত আইয়া আশ্রয় নিছি। তারা আমারে স্কুলের ভিতরে ডুকতে দেয় না। স্কুল খুইল্লা দেওন যাইত না অন্য ব্যবস্থা করতে কইছে আমারে। আমরা কই যাইতাম এই পরিস্থিরি মাঝে? সাজু আহমেদ আরেকজন কালবেলাকে বলেন, আগে ঘরে উরাত পানি আছিল, কালকে রাইত থাকি পানি আরও বারি গেছে। পুরা পরিবার নিয়ে ইনো আইয়া আশ্রয় নিছি। আমরা সাহায্য সহযোগিতা কুন্তা পাইরাম না। একটু আমার দিকে খেয়াল করলে, আমার জান বাচত। মরিয়ম বানু নামে আরেকজন কালবেলাকে বলেন, আমরা বস্তিতে থাকি, বাড়িতে পানি উঠি গেছে, রাস্তাঘাটে পানি, আমরা কুন্তা করতে পারিয়ার না। খুব কষ্ট কইরা দিন যাপন করতাছি আমরা। বাচ্চাকাচ্চা নিয়া দুর্বিসহ জীবন পাড় করছি। এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। আর সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.২৮ সেমি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটজুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরের ৪টি ওয়ার্ডোর ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এ ছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত। এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে। এদিকে, মহানগর পুরোটা না হলেও জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ইউএনও কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী ৩ দিন  সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র মঙ্গলবার বিকেল ৬টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত) ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবং সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৭৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী তিন দিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
১৯ জুন, ২০২৪

বৃষ্টি-উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি বুধবার দিন থেকেই ছিল বিপৎসীমার ওপরে। রাতে ভারতের মেঘালয় থেকেও নামে ব্যাপক ঢল। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েন চার লক্ষাধিক মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েন বন্যাকবলিতরা। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করছে সিলেটের কোটি মানুষকে। এদিকে, বন্যার কারণে সিলেট জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। বন্যাদুর্গত পাঁচ উপজেলায় কাজ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮, কানাইঘাটে ১৮, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫ ও জকিগঞ্জে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারো মানুষ। বন্যায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনী বিজিবি, জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের টিম, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার-ভিডিপি এবং বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুরসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দও বন্যাদুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত উপজেলার বাসিন্দাদের জন্য ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ত্রাণসামগ্রী হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে পানিবন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার সিমুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা তুজ জোহরা সানিয়া, ওসি তাজুল ইসলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে এবং কুশিয়ারার পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বুধবার রাতে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে জৈন্তাপুরের লালাখালে রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলেই সিলেটের নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, উঁচু এলাকা ছাড়া সব প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। বুধবার রাতে প্রবল স্রোতে উদ্ধারাভিযান ভালোভাবে পরিচালনা করা না গেলেও বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই পুরোদমে অভিযান চলে। সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ করছেন।
৩১ মে, ২০২৪
X