শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের পেট কেটে ফেললেন ডাক্তার
ফরিদপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় নবজাতক এক মেয়ে শিশুর পেট কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। নবজাতকের পেট কাটার পর দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় তাকে ফেলে রাখা হয় বলে জানা যায়।  রোববার (২৩ জুন) বিকেলে নবজাতকের বাবা নায়েব আলী কালবেলাকে বিষয়টি জানান। তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। শহরের ঝিলটুলীতে অবস্থিত সৌদি-বাংলা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। গাইনি সেই চিকিৎসকের নাম শিরিনা আক্তার। জানা গেছে, শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুর এলাকার বাসিন্দা কসাই দোকানির সহকারী নায়েব আলীর স্ত্রী মোর্শেদা বেগম সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য শনিবার বিকেলে হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। সন্ধ্যায় তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন গাইনি চিকিৎসক ডা. শিরিনা আক্তার। একটি মেয়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় তার। নায়েব আলী জানান, সিজার করার সময় আমার বাচ্চাটির নাভির পাশে পেটের অংশ কেটে ফেলেছেন ডাক্তার। বিষয়টি ডাক্তার আমাদের জানাননি। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর আমরা দেখতে পাই তার পেট দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। পরে বিষয়টি ওই ডাক্তারকে বললেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। বারবার বলার পর পেটে দুটি সেলাই দেওয়া হয়। তবে রাতে বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন সেখানের ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, আমার বাচ্চাটির অবস্থা ভালো না। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ঢাকা যাওয়ারও টাকা নেই। বাধ্য হয়ে ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। নায়েব আলীর চাচাতো ভাই মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সিজারের সময় ডাক্তারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন হাসপাতালটির আয়া ও স্টাফরা। তাদের ভুলেই এই পরিণতি হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে এজন্য আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই। ওই নবজাতকের শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. পারভেজ। তিনি বলেন, শিশুকে যখন আনা হয়েছিল তখন শকের মধ্যে ছিল। তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় শক হয়। আগামী ৭২ ঘণ্টা না যাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন ওই গাইনি চিকিৎসক শিরিনা আক্তার। তিনি বলেন, অপারেশনের সময় দেখা যায় বাচ্চাটির অবস্থান ঠিক জায়গায় নেই। প্রসবের সময়ও পার হয়ে যাওয়ায় বাচ্চাটি পেটের ভেতর পায়খানা করে। যে কারণে নাভির কিছু অংশ পচে গিয়েছিল। এ ছাড়া বাচ্চাটির গলার উপর দিয়ে নাড়ি পেঁচানো ছিল। সেটি সরাতে গিয়ে অসাবধানতায় হয়তো নাভির ওই অংশে নাড়ি ছিড়ে যায়। যে কারণে সমস্যাটি হয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম লিখন বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে শিশুটির খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ জুন, ২০২৪

স্ত্রীর মামলায় পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিজার গ্রেপ্তার
টাঙ্গাইলের সখীপুরে স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় স্বামী সখীপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিজারুল ইসলাম ওরফে সিজার (২৭) কে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২১ মে) রাতে তাকে পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিজার ওই ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে (২২) যৌতুকের জন্য প্রায়ই মারধর করতো স্বামী সিজারুল ইসলাম। এ নিয়ে উভয় পরিবারের দ্বন্দ্বও চলছিল। ২০ মে বিকেলে স্ত্রী সানজিদা আক্তার তার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে আসলে স্বামী সিজারুল তাকে যৌতুকের জন্য ব্যাপক মারধর করে। পরে ওইদিন রাতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী সিজারুলসহ চারজনক আসামি করে সখীপুর থানায় মামলা করেন স্ত্রী সানজিদা আক্তার। সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় স্বামী সিজারুলকে গ্রেপ্তার করে বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়েছে।
২৩ মে, ২০২৪

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মারা গেছেন
আর্জেন্টিনাকে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ জেতানো কিংবদন্তি কোচ সিজার লুইস মেনত্তি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। সোমবার (৬ মে) আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক বিবৃতিতে মেনত্তির মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। খেলোয়াড়ি জীবনে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন মেনোত্তি। সান্তোসের হয়ে ফুটবল সম্রাট পেলের সঙ্গেও খেলেছেন মেনত্তি। লিওনেল মেসির জন্মশহর রোজারিওতে ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন মেনোত্তি। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এ স্ট্রাইকার খেলেছেন ১১টি ম্যাচ। খেলা ছাড়ার পর ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে দুটি দেশের জাতীয় দলের এবং ১১টি ক্লাবের কোচের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনাকে কোচিংয়ের দায়িত্ব পান তিনি। তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত নিজ দেশের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও মেক্সিকোর কোচের দায়িত্বেও ছিলেন এক বছর। কোচ মেনোত্তি ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতান। আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর পরের বছর দেশের অনূর্ধ্ব-২০ দলকেও জিতিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার খেলার ধরন বদলে যায় মেনোত্তির হাত ধরেই।
০৬ মে, ২০২৪

সিজার উপেক্ষা করে নরমাল ডেলিভারিতে ঝুঁকছে ব্রাহ্মণপাড়ার নারীরা
সারাদেশে যখন বাচ্চা প্রসব করাতে চলছে অস্ত্রোপচারের (সিজার) প্রতিযোগিতা ঠিক এই সময়টিতে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিক প্রসবের (নরমাল ডেলিভারি) মাধ্যমে সন্তান জন্মের হার দিন দিন বাড়ছে। ‘স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন’ এই স্লোগানকে লালন করে উপজেলার প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্মের বিষয়ে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিনের নেতৃত্বে দলবদ্ধভাবে এ কাজটি পরিচালনা করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা। জানা গেছে, জেলার সবচে ছোট উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়া। অস্ত্রোপচারের কুফল থেকে প্রসূতি মায়েদের ও নবজাতকদের সুরক্ষা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন’ এই স্লোগান। এরই সুফল হিসেবে গত কয়েক বছরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের হার। আর এই বিশেষ উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলস পরিশ্রম করে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২২ পেয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের প্রতিষ্ঠানটির এক মিডওয়াইফ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এ উপজেলায় দিন দিনই বাড়ছে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মের হার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক বছরে প্রসব পূর্ববর্তী এএনসি সেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৯৮৮ জন প্রসূতি মা। এ ছাড়াও প্রসব পরবর্তী পিএনসি সেবা নিয়েছেন ৫০১ জন মা। তবে দিন দিনই এ সেবার প্রতি ঝুঁকছেন প্রসূতি মায়েরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল আর ক্লিনিকের কারণে স্বাভাবিক প্রসব প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবার মানোন্নয়নের ফলে দিন দিনই বাড়ছে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার। অন্যদিকে গ্রামের অদক্ষ দাইদের হাতে প্রসব করিয়ে নানা জটিলতা থেকেও মুক্তি পেয়েছে প্রসূতিরা। তবে কিছু দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে, তারা নানা কৌশলে প্রসূতি ও তার স্বজনদের ভুলভাল বুঝিয়ে এখনো প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই সেবার মান অক্ষুণ্ণ থাকলে এ উপজেলায় প্রায় শতভাগ স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।  প্রসূতি সালমা আক্তার কালবেলাকে জানান, মধ্যরাতে প্রসব ব্যথা ওঠে তার। পরে রাতেই স্বজনদের নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন তিনি। আসার পরপরই চিকিৎসক ও মিডওয়াইফরা তাকে ডেলিভারি ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সেখানে কিছুসময় চেষ্টার পর স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। আরেক প্রসূতি পারভীন আক্তার কালবেলাকে বলেন, মানুষজন থেকে শুনে আসছি সরকারি হাসপাতালে ভালো সেবা পাওয়া যায় না। তবে নিজে এসে সেবা নিয়ে আমাদের সে ভুল ভেঙেছে। প্রসব ব্যথা নিয়ে গতকাল হাসপাতালে আসি, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক ও তার সহযোগীদের প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো আমি মা হয়েছি। রৌশন জাহান কালবেলাকে জানান, প্রসব ব্যথা উঠলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া সেবায় সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়াই নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করেন। এজন্য তাকে কোনো খরচ গুণতে হয়নি। তিনি এবং তার সন্তান সুস্থ আছেন।  অপর এক প্রসূতি সামিয়া ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে এতো দ্রুত সেবা পাওয়া যায় না আসলে বিশ্বাস করতাম না। হাসপাতালে আসার দেড় ঘণ্টার মাথায় চিকিৎসক ও উনার সহযোগীদের চেষ্টায় নরমাল ডেলিভারি সেবা পেয়েছি।  স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, একটা সময় শিশু জন্মের অধিকাংশই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার কারণে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের দিকে ঝুঁকছে উপজেলাবাসী। সিজারের কুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শঙ্খজিৎ সমাজপতি কালবেলাকে বলেন, সন্তান জন্মদান সত্যিই গর্বের ও আনন্দের। দীর্ঘ ১০ মাস গর্ভধারণ শেষে সন্তানের মুখ দেখার খুশির চেয়ে একজন মায়ের পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় খুশি আর কিছুতে নেই। তবে এটা যদি হয় স্বাভাবিক প্রসবের পরিবর্তে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাহলে ওই মায়ের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডেলিভারিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার ফলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া মা বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। ওইসব মায়েদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোমড় ব্যথা নিয়ে বাঁচতে হয়। এ ছাড়াও আরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটিও জন্মগতভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম নিয়ে জন্মায়। এসব বাচ্চাগুলোর শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে এরা সহজেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়। যার ফলে সিজারিয়ান বাচ্চাগুলো খুব ঘন ঘন অসুস্থ হয়। স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে জন্মানো বাচ্চাদের তুলনায় সিজারিয়ান বাচ্চাদের মেধা কম থাকে। যে হারে দিন দিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের হার বাড়ছে তাতে একটি জাতি দিন দিন নীরবে পিছিয়ে পড়ছে। তবে আমাদের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জোরালো ভূমিকায় এ উপজেলায় দিন দিন স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মের দিকে ঝুঁকছেন প্রসূতি মায়েরা। দিন দিনই বাড়ছে এর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে পাওয়া সিজার মানুষের কল্যাণেই ব্যবহার হওয়ার কথা। যখন স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করা যাচ্ছে না, এদিকে প্রসূতি মায়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন, এমতাবস্থায় সিজার করার প্রয়োজন আছে। তবে বর্তমানে সিজার একটি ট্রেডিশনে রূপ নিয়েছে। এই সিজারের ফলে সিজারিয়ান বেবি ও মা দুজনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলার প্রায় প্রতিটি প্রসূতি মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পরামর্শ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই এ উপজেলায় দিন দিন নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে। ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন আরও বলেন, প্রসবকালীন মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারিকে উপজেলাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসকসহ একদল দক্ষ মিডওয়াইফরা সর্বদা এই বিষয়ে তৎপর রয়েছে। এই সেবা নিতে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারের মতো টাকা গুনতে হয় না। সরকার বিনামূল্যে এই সেবা প্রদান করছে। সকলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা পেলে আমি বিশ্বাস করি এই উপজেলায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সম্পাদকীয় / অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ করুন
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজার। প্রতি দুজন শিশুর মধ্যে একজনের জন্ম হচ্ছে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সন্তান জন্মদানের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার এই বিরুদ্ধাচারণ যে কতটা ভয়ংকর, তা কারও অজানা নয়। বছরের পর বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই অসুস্থ প্র্যাকটিস জেকে বসেছে। তারপরও এ নিয়ে রাষ্ট্রের তরফ থেকে নেই বিশেষ বা জোরালো কোনো পদক্ষেপ। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শনিবার কালবেলায় প্রকাশিত ‘অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে নেই কার্যকর পদক্ষেপ’ শীর্ষক শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের একটি জরিপের তথ্যমতে, গত দুই দশকে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার মাত্র ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এক বছরের ব্যবধানে এর হার বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। অথচ অপ্রয়োজনীয় এসব অস্ত্রোপচারে সীমাহীন স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হচ্ছে মা ও শিশু। অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক সমস্যা। মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণ নিয়ম হলো প্রসূতির শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে মা ও সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকরা। তবে তা ১০-১৫ শতাংশের বেশি হলে স্বাভাবিক নয়। একটি হিসাবে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অন্তত ৮ লাখ ৬০ হাজার সি-সেকশন হয়, যার ৭৭ দশমিক ১ শতাংশই ছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’। আর ওইসব অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের পেছনে পরিবারগুলোর খরচ হয়েছে ৩ হাজার কোটির অধিক টাকা। তারা বলছে, সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে রয়েছে নানা ঝুঁকি। মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। আবার গর্ভাশয়ের ক্ষতি, ভ্রূণের মৃত্যুসহ শিশুর হরমোন, শারীরিক ও অন্যান্য বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এক জরিপে দেখা গেছে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার বেশি। বেসরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ অতিরিক্ত মুনাফা করার বিষয়টি সবারই জানা। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে রাষ্ট্র অথবা সরকারের উদাসীনতা কেন? বেসরকারি হাসপাতালে বিরাজমান এই অসুস্থ চর্চা ঠেকাতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিশেষ উদ্যোগ নেই কেন? ২০১৯ সালে প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও চিকিৎসক কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিটের বিষয়টি আমরা জানি। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দেন আদালত। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি নীতিমালা তৈরি করে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। গত বছরের ১২ অক্টোবর হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানি করে বিনা প্রয়োজনে হাসপাতাল-ক্লিনিকে সন্তান প্রসবে সিজারিয়ান বন্ধে তৈরি করা নীতিমালার আলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ না হওয়ায় নীতিমালাটি আজও বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখানেই প্রশ্ন আসে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত ধীরগতি কেন? এ ছাড়া প্রসূতির পরিবারের অসচেতনতা এবং সিজারিয়ানকে এক ধরনের সামাজিক স্ট্যাটাস হিসেবে দেখারও একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যাকে এর জন্য কিছুটা দায়ী বলা যায়। আমরা মনে করি, জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার। তবে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধে উল্লিখিত নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন সর্বাগ্রে দরকার। আমরা চাই, নীতিমালাটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাই তৎপর হবেন।
৩১ মার্চ, ২০২৪

শিশুর ফিব্রাইল সিজার
জ্বরের ফলে খিঁচুনিজনিত সমস্যার নাম ফিব্রাইল সিজার। এটি সংক্রামক রোগ। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এর ফলে যে খিঁচুনি হয় তা সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী থাকে। তবে এর ফলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কারণ দেহে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা থাকলে তা ফিব্রাইল সিজারে রূপ নিতে পারে। ভাইরাল সংক্রামণের কারণে শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মাঝেমধ্যে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বা রোজিওলা রোগের ভাইরাসের কারণেও এটি দেখা দিতে পারে। শিশুকে টিকা দেওয়ার পর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ও পারটুসিস ভ্যাকসিন এবং হাম-মাম্পস-রুবেলা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একবার ফিব্রাইল সিজারে শিশু আক্রান্ত হলে বারবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। উপসর্গ l শিশুর সারা শরীর কাঁপতে থাকে এবং জ্ঞান থাকে না। l কখনো কখনো শিশুর শরীর কোনো নির্দিষ্ট অংশ খুব শক্ত হয়ে যেতে পারে। l শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হয়। প্রকারভেদ l সাধারণ ফিব্রাইল সিজারের ক্ষেত্রে খিঁচুনি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। খিঁচুনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুনরাবৃত্তি হয় না। l জটিল ফিব্রাইল সিজারের ক্ষেত্রে খিঁচুনি সাধারণত ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়। ২৪ ঘণ্টায় একাধিকবার এ খিঁচুনি হতে পারে। l জ্বর শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফিব্রাইল সিজারের যাবতীয় লক্ষণ প্রকাশ পায়। করণীয় l শিশুকে যথাসম্ভব দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। l জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যদি খিঁচুনি ৫ মিনিটের বেশি থাকে। l এ ছাড়া বমি হওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত ঘুমভাব থাকলেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিকার l জ্বর হলে শিশুকে অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। l তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশু-কিশোরদের অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। অ্যাসপিরিন তিন বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হলেও চিকেনপক্স বা ফ্লুর মতো রোগে আক্রান্ত শিশু এবং কিশোরদের গ্রহণ করা উচিত নয়। l জ্বরজনিত খিঁচুনি প্রতিরোধ করার জন্য প্রেসক্রিপশন অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ ব্যবহার খুবই কম করা হয়। এ ধরনের ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যা ক্ষতিকর। l যেসব শিশু ফিব্রাইল সিজারে দীর্ঘসময় ধরে আক্রান্ত থাকতে পারে তাদের জন্য বিশেষ ক্ষত্রে রেকটাল ডায়াজেপাম বা নাকে মিডাজোলাম ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয় l সম্প্রতি টিকা দেওয়া হয়েছে এমন শিশুরা ফিব্রাইল সিজারে আক্রান্ত হতে পারে। l যাদের সম্প্রতি টিকা দেওয়া হয়নি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ যেমন মেনিনজাইটিস আছে কি না, তা খুঁজে বের করার জন্য একটি পরীক্ষার কথা বলতে পারেন। l জটিল ফিব্রাইল সিজারের ক্ষেত্রে ডাক্তার ইলেকট্রোয়েন্সফালোগ্রাম পরীক্ষা করতে পারেন, যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করে। l শিশুর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তার একটি ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং পরীক্ষার কথা বলতে পারেন।   চিকিৎসা l শিশুকে কোনো নরম স্থানে রাখুন যাতে সে পড়ে গিয়া ব্যথা না পায়। l খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে তা লক্ষ করুন এবং শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তার কাছে থাকুন। l শিশুর মুখে কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকুক ও শিশুর কোনো ধরনের নাড়াচাড়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা থেকেও বিরত থাকুন।
২৩ মার্চ, ২০২৪

সিজার ছাড়াই ১২ ঘণ্টায় ১২ শিশুর জন্ম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সিজার ছাড়াই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় (নরমাল ডেলিভারি) সন্তান প্রসবের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই প্রসূতি মায়েরা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করছেন। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ১২ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে আটজন কন্যা শিশু ও চারজন পুত্র সন্তান।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ নার্সদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সিজারের নামে বাণিজ্য, দালালচক্র ও অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতিদের রক্ষায় এবং নিরাপদে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক টিমওয়ার্কের মাধ্যমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করানোর কাজ করছেন। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণসহ প্রচারে বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগাচ্ছেন তারা। এতে একদিকে তাদের যেমন খরচ বাঁচে অন্যদিকে প্রসবকারী মায়েরাও সুস্থ থাকেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ১১৮৪টি নরমাল ডেলিভারি ও ৫৪ টি সিজারিয়ানের ডেলিভারি করানো হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯ ০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ কালবেলাকে বলেন, মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে এবং নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে এই হাসপাতালে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে। যার ফলে দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না, পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের সরাসরি ও মোবাইল ফোনে খোঁজখবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয়। যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জন প্রসূতির স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করার নজির রয়েছে।
০৯ নভেম্বর, ২০২৩

অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে নীতিমালা অনুসারে পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টের রায়
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে প্রচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। চূড়ান্ত নীতিমালাটি রায়ের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এই রায় দেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে রুলের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। রায়ের পর আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদালতে দাখিল করেছে, সেটি রায়ের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন আদালত। ফলে সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে নীতিমালাটি এখন বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এককথায় নীতিমালাটি এখন অবশ্যপালনীয়।’ বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভের বরাত দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন এ রিটটি করা হয় তখন সিজারের মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৩১ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার প্রায় তিন গুণ।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে রাশনা ইমাম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সন্তান জন্মদানে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে ৮৩ শতাংশ, সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ এবং বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ৩৯ শতাংশ।’ ব্রাজিল ও চীনে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার ভয়াবহ চিত্র ছিল জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যথাযথ নীতিমালা, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে দেশ দুটি ‘সি’ সেকশন নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদের দেশে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে সিজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’ সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন করে। পরে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্টের উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। ওই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন রোধে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের এক মাসের মধ্যে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়। আর ওই কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ছয় মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে। আর রুলে জানতে চাওয়া হয়, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বার অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন রোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না। বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা আদালতে দাখিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর রুল শুনানি শুরু হয়। চূড়ান্ত শুনানির পর সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
১৩ অক্টোবর, ২০২৩

বেসরকারি ক্লিনিকে ৭০ শতাংশ সিজার করা হয়- স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে গেলে ৭০ শতাংশ প্রসূতিকে সিজার করা হয়, যার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় সিজার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সিজারের কারণে নারীদের কর্মক্ষমতা খর্ব করা হয়। মন্ত্রী বলেন, আগে হাসপাতালে আট ঘণ্টা ডেলিভারি ছিল, সেটিকে এখন ২৪ ঘণ্টায় নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি আরও বাড়বে। দেশের অর্জনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের অবদান বেশি। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, এনডিসি, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিঞা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লখুস প্রমুখ।
০৩ আগস্ট, ২০২৩
X