মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১
মৌরিতানিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান
২০০৫ সালের ৩ আগস্ট দিনটি ছিল রোববার। এদিন আফ্রিকা মহাদেশের মৌরিতানিয়ায় একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। প্রেসিডেন্ট মাওউয়া অওল্ড সিদ আহমেদ তায়াকে মৌরিতানিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন মিলিটারি কাউন্সিল ফর জাস্টিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (সিএমজেডি) নেতা এলি অওল্ড মোহাম্মদ ভাল। সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া এ সময় সৌদি আরবের রাজা ফাহাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে সৌদি আরবে ছিলেন। অভ্যুত্থানকারীরা একটি সাংবিধানিক গণভোট এবং সংসদীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা এবং অভ্যুত্থানের নেতারা কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ১১ মার্চ ২০০৭ তারিখে মৌরিতানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক সরকার শেষ হয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাউনা উলদ হাইদাল্লার কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং টানা প্রায় ২০ বছর মৌরিতানিয়া শাসন করেন। এ শাসনের বিরুদ্ধে মৌরিতানিয়ায় ২০০৩ সালের জুন এবং ২০০৪ সালের আগস্টে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। এসব অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়ার সখ্য। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার জন্য আরববিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের মধ্যে একটি ছিল মৌরতানিয়া, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা মেনে নিতে পারেননি। অভ্যুত্থানটির পেছনে কিছু বিরোধী সমর্থন ছিল। ৩ আগস্ট ২০০৫ তারিখে প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় সেনাসদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদস্যরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ঘিরে ফেলে। রাজধানী নুওয়াকশুতে তখন গুলির শব্দ শোনা যায় এবং রাস্তাঘাট খালি হয়ে যায়। অভ্যুত্থানকারীরা রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও ও টিভি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। মৌরিতানিয়ার টেলিভিশনে একটি আনুষ্ঠানিক বার্তায় অভ্যুত্থানের নেতারা ঘোষণা করেন যে, ‘সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিলুপ্ত শাসনের বিগত কয়েক বছরের সর্বগ্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট অবসান ঘটাতে হবে, যার অধীনে আমাদের জনগণ গত কয়েক বছর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ঠিক অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট সিদ আহমেদ তায়া মৌরিতানিয়া ফেরার জন্য বিমানে ছিলেন। অভ্যুত্থানকারীরা তাকে পাশের দেশ নাইজারে অবতরণ করতে বাধ্য করে। তিনি শেষ পর্যন্ত মধপ্রাচ্যের কাতারে যান এবং সেখানকার একটি সামরিক একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। অভ্যুত্থানের পর আফ্রিকান ইউনিয়ন মৌরিতানিয়ায় ‘সাংবিধানিক আদেশ’ ফিরে আনার দাবি জানায় এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে মৌরিতানিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে। ২০০৭ সালে একটি সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মৌরিতানিয়ার সামরিক সরকারের শাসন শেষ হয়। এ নির্বাচনে সিদি অওল্ড চেখ আবদুল্লাহি নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আবদুল্লাহি আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ইসলামিক কট্টরপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রাসাদে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারি তহবিল অপব্যবহার করেছিলেন বলে সেনাসদস্যদের নেতৃত্বে ২০০৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করা হয়। লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
০৩ আগস্ট, ২০২৩
X