পাবনার সুজানগর / আতঙ্কের নাম সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন
পাবনা জেলার সুজানগর। পদ্মা ও আত্রাই নদীর পলিবিধৌত এ জনপদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। দেশের প্রয়োজনীয় সিংহভাগ পেঁয়াজের জোগানদাতা এই উপজেলা। পরিচিতি রয়েছে আশপাশের অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটাই শান্তশিষ্ট। তবে মোগল সম্রাটদের স্মৃতিবিজড়িত এ উপজেলা গত কয়েক বছরে পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে। খুন, ধর্ষণ, দখলবাজি, লুটপাটসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নাভিশ্বাস উঠেছে বসবাসরত সাধারণ মানুষের। ক্ষেত্রবিশেষ এসব অপরাধ দমনে দুর্বলতা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও। পাবনার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুজানগরজুড়ে কয়েক বছর ধরে চলা দখলদারিত্ব এবং সন্ত্রাসের পেছনে গডফাদার হিসেবে কাজ অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সুজানগরের শাহীনের। সাত ভাইসহ বিরাট সংসার চালাতে তাদের পিতা আবুল কাশেম ছিলেন হাঁসফাঁস অবস্থায়। তবে ভাগ্য বদলাতে থাকে ২০১৯ সালের পর থেকে। ওই বছর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর যেন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শান্তশিষ্ট উপজেলাকে পরিণত করেন সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হিসেবে। খালবিল, জলাশয় দখল, হাটবাজারের ইজারা, উপজেলার সব নির্মাণকাজে হস্তক্ষেপ, নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, গ্রাম্য দলাদলিতে ফায়দা আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে আয় করেন শত শত কোটি টাকা। কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গড়েছেন একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। শাহীনের এসব দখলদারিত্বে যাদেরই বাধা মনে করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করেছেন। হত্যার শিকারও হয়েছেন অনেকে। নিজের ভাইদের পাশাপাশি শাহীনের এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শ্যালক রুবেল মিয়াও। সরেজমিন পাবনার সুজানগর উপজেলা ঘুরে সাধারণ জনগণ এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। জানা যায়, শাহীনের নিয়ন্ত্রণে অন্তত ৭০টি বালু উত্তোলনের ড্রেজার রয়েছে। এসব ড্রেজার দেখভাল করেন শাহীনের ভাইয়েরা। নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বিলীন হয়েছে হাজার হাজার একর তিন ফসলি জমি। সরেজমিন চরভবানীপুর, সুজানগর থেকে নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে নদীভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হওয়ার এমন চিত্র। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। প্রতিটি সিএফটি বালু বাজারদরের চেয়ে দুই থেকে চার টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হয়। এর পরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই বালু কিনতে বাধ্য করা হয়। চরভবানীপুর এলাকার আকবর হোসেন কালবেলাকে বলেন, পুরো এলাকায় শাহীন আতঙ্ক। মাইলের পর মাইল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কারণ বালু উত্তোলন। এ ছাড়া আগে স্থানীয়ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করতেন অনেক ব্যবসায়ী। কম টাকায় সেই বালু কেনা যেত। কিন্তু এখন পুরো সুজানগরে এ বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শাহীনের লোকজন। নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নেয়। সুজানগর রেজিস্ট্রি অফিস এবং পাবনা রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে এই দুই রেজিস্ট্রি অফিসে প্রায় ৩০ বিঘারও বেশি জমি রেজিস্টি করা হয় শাহীনুজ্জামান এবং তার কাছের স্বজনদের নামে। এ ছাড়া সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন শাহীনের শ্যালক রুবেলসহ স্ত্রীর স্বজনরাও। এর মধ্যে জমির পাশাপাশি কিনেছেন প্রাইভেটকার, তৈরি করেছেন মার্কেট। এ ছাড়া শাহীনের নিজ নামে ক্রয় করেছেন পাবনার কাচারী পাড়া এলাকায় একটি তিনতলা এবং একটি একতলা বাড়ি। ঢাকার ইস্কাটনে রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট। রাজধানীর বছিলায়ও জমি কিনে তৈরি করেছেন বাড়ি। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শাহীনুজ্জামান চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তবে পরাজিত হন। নির্বাচনের সময় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ আটকও হন তিনি। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাঁপে ২৪ ঘণ্টা পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাত্র সাড়ে চার বছরের মধ্যে হলফনামায় বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরেছেন শাহীনুজ্জামান। এর মধ্যে ২০১৯ সালে কৃষি জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ দেখালেও ২০২৪ সালে সেই জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে প্রায় পাঁচ একর। এ ছাড়াও দেখানো হয়েছে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ভবনসহ বিপুল সম্পদ, যা ২০১৯ সালের হলফনামায় ছিল না। সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকেও রাখা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা, যা আগেরবারের হলফনামায় ছিল না। তথ্য বলছে, শাহীনুজ্জামানের অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকা আয়ের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। এরপর বিষয়টি বিষদ অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগ করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। জানা যায়, শাহীনুজ্জামানের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল পাবনা জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামের। সম্প্রতি রফিকুল ইসলামের শত শত কোটি অবৈধ টাকার বিষয়টি সামনে আসে। সূত্র বলছে, এসব অবৈধ টাকার বেশিরভাগই উপার্জন করেছেন পাবনা থাকাকালীন সময়ে। আর সবকিছু ম্যানেজ করে দিয়েছেন তৎকালীন সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান। স্থানীয়রা বলছেন, সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায় করতেন শাহীনুজ্জামান। সেই টাকার বড় একটি অংশ দেওয়া হতো রফিকুল ইসলামকে। এমনকি সাধারণ মানুষকে রফিকুল ইসলাম তুচ্ছ কারণে আটক করতেন। এরপর তাদের ছাড়িয়ে আনতেও দেনদরবারের দায়িত্ব পালন করতেন এই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। আর এর মাধ্যমে আদায় করতেন অর্থ। জানা যায়, সম্প্রতি দুদক শাহীনের সম্পত্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার অনুরোধ করেন একজন দুদক কর্মকর্তাকে। হাফিজুর রহমান নামের দুদকের ওই কর্মকর্তার গ্রামের সুজানগরের রানীনগর ইউনিয়নে। তবে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপে অপরাগতা প্রকাশ করেন হাফিজুর। এতে ক্ষিপ্ত হন শাহীনুজ্জামান। এতেই যেন কালো মেঘ নেমে আসে হাফিজুরের ওপর। স্থানীয়ভাবে একটি মারামারিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয় হাফিজুরের। এরপর সেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রধরে পুরো এলাকায় তান্ডব চালান শাহীন। অন্তত শতাধিক বাড়িতে চালানো হয় লুটপাট। অনেকের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গবাদি পশু, ঘরের আসবাবপত্রসহ নানা জিনিসপত্র চোখের সামনেই নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো এলাকা হয়ে পড়ে পুরুষশূন্য। মহিলার এসব লুটপাটের প্রতিবাদ করলে তাদের ওপরও চালানো হয় নির্যাতন। থেমে থাকেননি এখানেই। দুদক কর্মকর্তা হাফিজুরের বৃদ্ধ বাবাকে ধরে নিয়ে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। কয়েকদিন হাসপাতালে ভুগে ওই বৃদ্ধ বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করেন। পরে এ ঘটনায় মামলা হয়। সেই মামলায় আসামি করা হয় শাহীনুজ্জামানকে। সূত্র বলছে, শাহীনুজ্জামান স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরের সুনজরে থাকায় মামলার আসামি করতে বেগ পেতে হয় ভুক্তভোগীদের। স্থানীয়রা বলছেন, গত পাঁচ বছরে সুজানগরে অন্তত ১০ জন ব্যক্তি খুন হয়েছেন। আর প্রতিটি খুনের পেছনেই রয়েছে শাহীনুজ্জামানের ইশারা। এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে দলাদলি তৈরি করে সেখান থেকেও ফায়দা হাসিল করেন এই শাহীন। ব্যবহার করেন পুলিশ প্রশাসনকে। চালানো হয় লুটপাট। রানীনগরের বাসিন্দা লাইলি বেগম কালবেলাকে বলেন, শাহীন চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। অনেকের ঘরের টিনের চালাও খুলে নেওয়া হয়েছে। এক বৃদ্ধকে ধরে নিয়ে পিটিয়েছে দীর্ঘসময়। এরপর সেই বৃদ্ধ মারা যান। এসব বিষয়ে জানতে শাহীনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। সূত্র বলছে, মামলা নথিবদ্ধ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরে শাহীন গা ঢাকা দিয়েছেন। জানতে চাইলে পাবনা জেলার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী কালবেলাকে বলেন, ‘একটি হত্যা মামলা হয়েছে এটা সঠিক। এখন মামলায় যেভাবে ওনাকে আসামি করা হয়েছে, সেভাবে উনি জড়িত কি না সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বালুর বিষয়ে অভিযোগ ওঠার সময়েও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যখন যে অভিযোগই উঠেছে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপরেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
০২ জুলাই, ২০২৪

অপহরণের পর যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সাবেক চেয়ারম্যান আটক
কুমিল্লার দেবিদ্বারে অপহরণের পর আবু সায়েম নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক চেয়ারম্যান ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রাতেই উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলমকে আটক করেছে থানা পুলিশ। তবে তার ছেলে মামুন পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত সায়েম (৩৯) উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের চাষারপাড় গ্রামের আবদুর রহিম সরকারের ছেলে। নিহত আবু সায়েমের শ্বশুর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আমার মেয়ের জামাই সায়েমকে অপহরণ করে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন সন্ত্রাসী। অপহরণের খবর পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করি।  একপর্যায়ে বিকেল ৫টায় খোরশেদ চেয়ারম্যান আমাকে ফোনে জানায়, সায়েম তার ছেলে মামুনের সঙ্গে আছে। মামুন আমার জামাইয়ের কাছে যৌথ ব্যবসার যে টাকা পাবে সে টাকা ফেরত দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চেয়ারম্যান খোরশেদ আমাকে যাত্রাবাড়ীর বাবুবাজার এলাকার একটি বাসায় সায়েমের সঙ্গে দেখা করায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে লেনদেনের বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। আমি সায়েমকে আমার সঙ্গে নিতে চাইলে চেয়ারম্যান বলে ‘সায়েম তার জিম্মায় থাকবে’। সেখান থেকে তারা রাতেই সায়েমকে নিয়ে প্রাইভেটকারে দেবিদ্বার চলে আসে।  প্রাইভেটকারে জায়গা না থাকায় আমি বাসে করে দেবিদ্বারে রওনা হই। কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় চেয়ারম্যান আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, সায়েম চা খাওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। পরে রাত সোয়া ১টায় চেয়ারম্যান আবার ফোনে জানায়, সায়েম খুবই অসুস্থ তাকে আমি ও আমার স্ত্রী দেবিদ্বার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি দ্রুত হাসপাতালে এসো। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি সায়েমের মরদেহ নিচে পড়ে আছে। মরদেহের চোখ-মুখ ফোলা, গলায় ও পিঠে অসংখ্য দাগ। থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে খোরশেদ চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।   সায়েমের ছোট ভাই আবু কাউছার সরকার জানান, গত কয়েক বছর আগে আমার বড় ভাই ব্যবসার কাজে সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে মামুনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে দুজন একসঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই টাকার জন্য মামুন আমার ভাইকে চাপ সৃষ্টি করলে তাকে ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং বাকি টাকার জন্য একটি খালি চেক দেওয়া হয়।  পরে মামুন ওই চেক দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করে। ওই মামলা চলমান থাকাবস্থায় মামুন ও তার বাবা আমার ভাইকে সন্ত্রাসী দিয়ে অপহরণ করে। রাতে সায়েম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আমার পিকআপ ভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেবে। এই কথা শুনে আমি পিকআপ ভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দিই। এরপরও আমার ভাইকে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনায় খোরশেদ চেয়ারম্যান ও তার ছেলের ফাঁসি দাবি করছি। নিহত সায়েমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলী আজম খান বলেন, সায়েম আমাকে ফোনে জানায়, তাকে মামলার বাদী মামুন অপহরণ করেছে। আমি তাকে ৯৯৯ ফোন দিতে বলি। সে তার লোকেশন যাত্রাবাড়ী বউবাজার এলাকার তরমুজ পট্টিতে আছে জানিয়ে লাইন কেটে দেয়। পরে আমি যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণের বিষয়টি জানাই।  এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, নিহত সায়েমের স্বজনরা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ঘটনায়  অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন। সায়েমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা হলে চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

পিরোজপুরে সাবেক চেয়ারম্যান হত্যায় বর্তমান চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪
পিরোজপুরের নেছারাবাদে সাবেক চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বরিশাল র‌্যাব-৮ ও র‌্যাব-৬। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরিশাল র‌্যাব-৮। র‌্যাব জানায়, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টায় বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানাধীন এলাকা হতে মামলার প্রধান আসামি মিঠুন হালদারসহ (৪৪) তার ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামিরা হলেন- সুষময় হালদার, জালিস মাহমুদ, মো. আমিনুল ইসলাম।   উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় পিরোজপুরের নেছারাবাদের কুড়িয়ানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদার এক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য নিজ বাড়ি থেকে রওনা করেন। কুড়িয়ানা বাজারের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছা মাত্রই আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মিঠুন হালদারের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন দলবদ্ধভাবে তার পথ রোধ করেন। এ সময় তাকে লাঠি ও ইট দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলে আসামিরা মৃত মনে করে চলে যান। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে  কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারপর তাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।   এ ঘটনায়  ভিকটিমের স্ত্রী মালা মন্ডল (৪৫) বাদী হয়ে পিরোজপুরের নেছারাবাদ থানায় দণ্ডবিধি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করেন। ওই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব-৮ (সিপিএসসি ক্যাম্প) গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। র‌্যাব-৮ এর বিশেষ গোয়েন্দা শাখা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে র‌্যাব-৬ এর সহায়তায় বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট এলাকা হতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উল্লেখিত আসামিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পিরোজপুরের নেছারাবাদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
৩১ জানুয়ারি, ২০২৪

‘চেয়ারম্যানের হামলায়’ সাবেক চেয়ারম্যান নিহত
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হাওলাদার ও তার লোকজনের হামলায় সাবেক চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার (৫৫) নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আন্ধারকূল আটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে কুড়িয়ানা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শেখর কুমার সিকদার জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়নের দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ঘটনায় কুড়িয়ানা বাজারে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েকটি দোকানপাটেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখর সিকদার ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাজারে বসে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শেখর সিকদারের ওপর হামলা চালায় মিঠুন হাওলাদারের লোকজন। এতে তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই বাজারের দোকানদার প্রত্যক্ষদর্শী সজল শিকদার বলেন, ‘সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর সিকদার কুড়িয়ানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হাওলাদার তার পথ রোধ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এক পর্যায়ে মিঠুন হাওলাদার সাবেক চেয়ারম্যানের বুকে কিল-খুসি মারতে থাকেন। আমি প্রতিরোধ করতে গেলে উপস্থিত কুড়িয়ানা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ আমাকে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন সাবেক চেয়ারম্যানের ওপর হামলা চালায়।’ নিহত শেখর কুমার সিকদারের ছোট ভাই শংকর কুমার সিকদার বলেন, ‘কুড়িয়ানার একটি প্রাইমারি স্কুলে ক্রীড়া অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ডে বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের নাম ওপরে লেখা হয়নি। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারসহ তার লোকজন কুড়িয়ানা বাজারে এসে আমার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। তাদের পিটুনিতে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।’ অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হাওলাদার মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, ‘আমি শেখর কুমার সিকদারের কাছে সাত লাখ টাকা পাই। সকালে কুড়িয়ানা বাজারে বসে সেই টাকা চাইছিলাম। এতে একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। শেখর কুমার উত্তেজিত হয়ে হয়তো অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারেন। তিনি হার্টের রোগী ছিলেন।’ নেছারাবাদ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহিন হোসেন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার হাতে একটু আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি প্রতিপক্ষের হামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদারের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছরোয়ার আহমেদ বলেন, ওই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
৩১ জানুয়ারি, ২০২৪

বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান কারাগারে
সিলেটের বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রি সুহেল মিয়া হত্যা মামলায় বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি একে টুটুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ও আব্দুল মতিনের ভাই তুরণ মিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী সিলেট জজকোর্টের অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুলাই বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের জবান উল্যার ছেলে কাঠমিস্ত্রি সুহেল মিয়ার ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বালাগঞ্জে বাজারে অতর্কিত হামলা করা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন সুহেলকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা বাধা দেন। পরে সুহেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট রাতে মারা যান তিনি। লাশ বাড়িতে নেওয়া হলে হামলাকারীরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করার জোর চেষ্টা চালান। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে বালাগঞ্জ থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।  এই ঘটনায় সুহেলের স্ত্রী হেপি বেগম বাদী হয়ে বালাগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। নিরুপায় হয়ে গত ১৪ আগস্ট সিলেট আদালতে মামলা করেন তিনি। বালাগঞ্জ সিআর মামলা নং-৮৭। মামলায় চাঁনপুর গ্রামের সৈয়দ উল্যার ছেলে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, তার ভাই তুরণ মিয়া, একই গ্রামের কদর উল্যার ছেলে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি একে টুটুল, বালাগঞ্জ উপজেলার নতুন সুনামপুর গ্রামের ইকবাল মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রাহীসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করেন। পাশাপাশি তদন্ত করে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য বালাগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবি সিলেট জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমদ বলেন, আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার অগ্রগতি না করায় বালাগঞ্জ থানার সাবেক ওসিসহ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মামলার বাদী হেপি বেগম। ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার আগে অভিযুক্ত তিন জন উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নেওয়ার পর জামিনের সময়সীমা শেষ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালতে তাদের জামিন না মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী হেপী বলেন, বালাগঞ্জ বাজারস্থ আকবর কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে আমাদের রাস্তার পাশের জমি দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে আসছিলেন আব্দুল মতিন চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগ নেতা একে টুটুল ও তাদের সহযোগীরা। আমার স্বামী তাতে বাধা দেন। এ জন্য আমার স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল তারা। এ কারণেই তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমার ২টি সন্তান রয়েছে, তারা এতিম হয়ে গেল। আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি আমার স্বামী হত্যার ন্যায়বিচার চাই।
২৪ নভেম্বর, ২০২৩
X