সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১
মন্ত্রণালয় সীমালঙ্ঘন করলে কৃষিতে সাফল্য আসত না : কৃষি সচিব
কৃষি মন্ত্রণালয় বা এর অধীনস্ত সংস্থাগুলো সীমালঙ্ঘনের কালচার থাকলে কৃষিতে এত সাফল্য আসত না বলে মন্তব্য করেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।  বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) মিলনায়তনে ‘স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  বক্তব্যে সচিব বলেন, দেশের কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে অসুবিধায় পড়েন। তাদের প্রায় সব ধরনের অসুবিধার উত্তর মিলবে খামারি অ্যাপসে। দেশের জমিগুলো অতি ক্ষুদ্র, এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে বড় প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয় না। সমবায় ছাড়া কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।  সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সীমালঙ্ঘকারী না। মন্ত্রণালয়ে সীমালঙ্ঘনের কালচার থাকলে কৃষিতে এত বরকত হতো না। আপনারা যদি প্রশংসা না করেন আমরা উৎসাহ পাব কোথায়। আপনারা ভালোবেসে ভুল ধরিয়ে দেন। আমরা শুধরে নেব। কৃষি সচিব বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৭ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সাংবাদিকরা এসব প্রতিষ্ঠানে তথ্য সংগ্রহ করে। তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকা প্রয়োজন।  মন্ত্রণালয়ের তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস সরবরাহ করতে পারে জানিয়ে ওয়াহিদা আক্তার বলেন, এআইএসের মতো প্রতিষ্ঠান অনেক মন্ত্রণালয়ের নেই। এআইএস সাংবাদিকদের আসার-বসার ব্যবস্থা করবে। সাংবাদিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবে। কৃষি তথ্য সরবরাহ করাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বলেন, দেশের কৃষিবিষয়ক সাফল্যের তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া যায় না। কিংবা নতুন প্রযুক্তির তথ্যগুলোও সঠিকভাবে আসে না। এজন্য সাংবাদিকদের নানা উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।   সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই প্রকল্পের কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রধান পূরবী মতিন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের কৃষি উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান মাটি ও মানুষের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক, চ্যানেল আই এর বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বিএজেএফ এর সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন প্রমুখ।
১২ জুন, ২০২৪

ভালো জায়গায় বল ফেলেই সাফল্য ম্যাচসেরা রিশাদের
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সাফল্যর মূল নায়ক নিশ্চিত ভাবে বোলাররা। লঙ্কানদের মতো প্রতিপক্ষকে ১২৪ রানে বেধে ফেলার কারণেই আজ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মুখে হাসি। আর এই হাসি এনে দেওয়ার সবেচেয়ে বড় কারিগর নিঃসন্দেহে তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের। স্বাভাবিকভাবেই রিশাদের হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।   শনিবার (৮ জুন) ডালাসের গ্রান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয়ের সবচেয়ে বড় নায়ক নিঃসন্দেহে রিশাদ হোসেন। তার ৪ ওভারের দুর্দান্ত স্পেলই ঠিক করে দেয় ম্যাচের গতিপথ। রিশাদের আগমনে একজন ভালো মানের লেগ স্পিনারের জন্য পুরো বাংলাদেশের যে অপেক্ষা সেটি হয়তো পূরণ হবে এবার। আজকের ম্যাচে ২২ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে যেন বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের আগমনের বার্তাই দিলেন এই লেগ স্পিনার। ম্যাচশেষে রমিজ রাজার কাছ থেকে ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় তাই হয়তো রিশাদের ঠোঁটের কোণে দেখা গেল তৃপ্তির হাসি। সে হাসি দলেল জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হওয়াতেও।  লঙ্কান ইনিংসের ১৫তম ওভারে এসে আসালাঙ্কা-ধনাঞ্জয়ার প্রতিরোধ ভেস্তে দেন রিশাদ। প্রথম ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও পরের ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন শেষ করার পাশাপাশি ম্যাচের মোমেন্টামওটা বাংলাদেশের দিকে নেন তিনি। ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই রিশাদকে স্লগ সুইপে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন আসালাঙ্কা। পরের বলে লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান রিশাদ। সেটি না হলেও বাংলাদেশের দর্শকদের মনে থাকবে তা অনেকদিন। ম্যাচসেরার প্রতিক্রিয়ায় তিনি ওই স্পেল সম্পর্কে বলেন, ‘পিচ বোলিং করার জন্য খুব ভালো ছিল। আমি দলে অবদান রাখতে চেয়েছিলাম।’ ১৫তম ওভারে হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রিশাদ। সেটি না হলেও তার ওই জোড়া আঘাতই মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। রিশাদ বলেন, ‘ওই সময় (হ্যাটট্রিক সম্ভাবনার বলে)আমি চেষ্টা করেছিলাম ভালো জায়গায় বল করতে। সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল।’ রিশাদ ব্যাট হাতে আজ ব্যর্থ হলেও দলের জয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব কিন্তু তার ওই স্পেলেরই।
০৮ জুন, ২০২৪

রেণু উৎপাদনে সাফল্য বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে
মাছের রেণু পোনা নিয়ে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে। গোটা দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে বলুহর হ্যাচারির রেণু এখন যাচ্ছে ঢাকা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলায়। বলুহর হ্যাচারির এই রেণু চাষ করে মৎস্যজীবীরা আশানুরুপ সাফল্য পাচ্ছেন। বর্তমান এই হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানিকৃত সিলবার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের রেনু ও ভিয়েতনামীয় পাঙ্গাস, কালিবাউস এবং সুবর্ন রুই মাছ লালন পালন করা হচ্ছে। শুধু রেণু উৎপাদনই নয়, দেশের খ্যতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা রেণু পোনা উৎপাদনে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে এখানে আসছেন।  জানা গেছে, উন্নত জাতের কার্প জাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আমিষের ঘাটতি পুরণের লক্ষে ১৯৮৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার  কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ি, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই হ্যচারির উৎপাদিত রেণু পৌঁছে যাচ্ছে।    হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর রেণু বিক্রি করে ৩৫ লাখ ও টেবিল ফিশ এবং পোনা বিক্রির ১৭ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যা এরইমধ্যে অর্জিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। হ্যাচারি ম্যানেজার আরও জানান, পরিত্যক্ত ভবনগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে চালু করা হয়েছে। হ্যাচারির মধ্যে আবর্জনা স্তূপে ভরা ছিল। সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগান তৈরির মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এদিকে হ্যাচারি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারিতে দেশের খ্যতনামা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছেন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে। তাদেরকে আধুনিক কলাকৌশল ও সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পুকুর থেকে ব্রুড সংগ্রহ পদ্ধতি, মাছে ইনজেকশন পুশ, ডিম সংগ্রহ ও বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন।    কোটচাঁপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মাছ চাষি জহুরুল ইসলাম জানান, বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তার মতো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
০৭ জুন, ২০২৪

নানামুখী সংকটেও চট্টগ্রাম বন্দরের ঈর্ষণীয় সাফল্য
কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রাম বন্দরে ১৭০-১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যেত। কিন্তু নানা উদ্যোগের পর বর্তমানে ভেড়ানো যায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজগুলো। এর প্রভাবে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রতি মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর ভাঙছে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড। গত এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৯ টিইইউএস। এর পরের মাস অর্থাৎ মে মাসে ৪৪ হাজার ৮২৪ টিইইউএস বেশি হয়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। অর্থাৎ এই মাসে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ লাখ ১৯৩ টিইইউএস। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত (১১ মাস) সর্বমোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭ টিইইউএস। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউএস। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে এই অর্থবছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৪ টিইইউএস বেড়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আগে বন্দরে ছোট জাহাজ বেশি আসত। এ কারণে জেটিতে জাহাজ বরাদ্দ দিতে বেগ পেতে হতো কর্তৃপক্ষকে। জেটি খালি না থাকলে বহির্নোঙরে জাহাজগুলোকে অপেক্ষা করতে হতো। এতে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় দুটিই বেশি লাগত। বর্তমানে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের চেয়ে বেড়েছে। মে মাসে ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিপাত, তীব্র তাপদাহসহ আরও নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে আমাদের যেতে হয়েছে। তার পরও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানোর কারণে। অর্থাৎ ব্যয় সাশ্রয়ে শিপিং কোম্পনিগুলো ছোট জাহাজের পরিবর্তে বড় জাহাজে পণ্য আনছে। বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় খরচ কমেছে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারীরাও। তবে এর সুফল পেতে কাস্টমের শুল্কায়ন কার্যক্রমে সময় কমিয়ে পণ্য ডেলিভারি ব্যবস্থা আরও সহজ ও দ্রুত করার দাবি জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে প্রতি মাসে রপ্তানি ১০ শতাংশ করে বাড়ছে। ফলে ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্যের শিপমেন্টের হারও বেড়েছে। এমএসসি শিপিংয়ের অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিক বিভাগের প্রধান আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, কনটেইনার লোড করার কারণে আমাদের খরচ কমে আসছে। যে কারণে আমাদের ফিডার ফেডটাও অনেক কম। এটা শুধু মাদার ভেসেলের ক্ষেত্রে নয়, ফিডার ভেসেলের ক্ষেত্রেও হয়েছে। টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপদেষ্টা মো. জাফর আলম বলেন, ‘কনটেইনার ডেলিভারির সহজ প্রক্রিয়া ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করবে। তবে ভিন্ন তথ্য দিলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আজম। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির কারণে অনেক পোশাক মালিক মে মাসে শিপমেন্ট বাড়িয়েছেন। সে কারণেই মে মাসে রপ্তানি বেশি হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং: চলতি অর্থবছরের মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ লাখ ১৯৩ টিইইউএস। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩১ টিইইউএস। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৯ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৯৭ টিইইউএস। গত মার্চে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৪ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের মার্চে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ২০৭ টিইইউএস। গত ফেব্রুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৬ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টিইইউএস। গত জানুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬২ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের জানুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮৭৩ টিইইউএস। বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিংও: মে মাসে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যাও। এই মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরের ওই মাসের চেয়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন বেশি। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৯৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন। গত এপ্রিলে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ৩০ মেট্রিক টন। জাহাজ কমলেও পড়েনি প্রভাব: চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. সোহায়েল বলেন, জাহাজ কম ভিড়লেও কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ায় বন্দরের আয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। মে মাসে জাহাজ ভিড়েছে ৩১৩টি। আগের অর্থবছরের ওই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৪১টি। অর্থাৎ জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে ২৮টি। চলতি বছরের এপ্রিলে জাহাজ ভিড়েছে ৩২৯টি। অর্থাৎ এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে জাহাজ কম ভিড়েছে ১৬টি। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়েছে ৩৪২টি।
০৭ জুন, ২০২৪

মরুর খেজুর চাষে জাকির হোসেনের সাফল্য
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন। জীবিকার তাগিদে সৌদি ও কুয়েতে পাড়ি দিয়ে প্রায় ২০ বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকাকালীন মরুর ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যকজ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফেরার সময় ১২ কেজি পাকা খেজুর নিয়ে আসেন। সেই খেজুরগুলো থেকে চারা তৈরি করেন নিজেই। প্রথম পর্যায়ে ২০ শতক জমিতে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর বাগান গড়ে তোলেন। এখন খেজুর গাছগুলোর বয়স চার থেকে ছয় বছর। ২০২২ সালে তার বাগানে প্রথম তিনটি গাছে ফল এসেছিল। সেই চারা গাছগুলো এখন পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছেই থরে থরে ঝুলে পড়েছে খেজুর ফল। সেই খেজুর ফলের মিষ্টি স্বাদ এখন দিনাজপুরসহ সারা দেশে ছড়িয়েছে। মরুর এ খেজুর গাছ ও ফল দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক নারী ও পুরুষ। তার সফলতার প্রশংসা এখন দেশজুড়ে।  উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম। সেখানে চাষ হওয়া খেজুর দেখে নিজ দেশের মাটিতে খেজুর চাষের স্বপ্ন জাগে। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে পাকা খেজুর এনে পরীক্ষামূলক চারা তৈরি এবং ইউটিউবের সহায়তায় ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ১৯টি খেজুর গাছের চারা রোপণ করি। বর্তমানে দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছি খেজুর বাগান। অনেকে চারা গাছ কিনতে অগ্রীম অর্থ দিয়ে রাখছেন। গাছে ফল আসলেই প্রতিবছর ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে তিনটি গাছে প্রচুর পরিমাণে খেজুর আসে। তারপর সে ফলগুলো স্থানীয়দের খাওয়ানোসহ কিছু চারা তৈরি করি। এ বছর ৯টি গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছের ৮ থেকে ৯টি কাঁদিতে (গোছায়) খেজুর ধরেছে। ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুরের ওজন এক কেজি হবে। খেজুরের বীজ থেকে চারা গাছ হতে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। এ খেজুর বাগান করতে প্রয়োজন উঁচু জমি।  এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, চারাগাছ রোপণের কয়েক বছরেই ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিটি চারা বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চারাগাছ সংগ্রহ করছেন লোকজন। একটি খেজুর গাছ ৭০ থেকে ৮০ বছর ধরে ফল দেয়। বর্তমানে বাগানে উৎপাদিত খেজুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যে দেড় হাজার চারা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, বাড়ির কাছেই এখন সৌদির খেজুর বাগান। ছোট্ট এ গাছগুলোতে এতো খেজুর হতে পারে সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। স্থানীয়রা সকলেই জাকির হোসেনের বাগানের উৎপাদিত খেজুরের স্বাদ নিয়েছেন, স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু। মরুর খেজুর ফুলবাড়ীতে চাষ হচ্ছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর থেকে এ বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বাগানে ভিড় করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার কালবেলাকে বলেন, দিনাজপুর জেলা চাল ও লিচুর জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। জাকির হোসেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেজুর এনে সেটি চারা করে গাছ রোপণের মাধ্যমে খেজুর উৎপাদন করে সাফল্য দেখিয়েছেন। মরুর খেজুর ফুলবাড়ীতে উৎপাদিত হচ্ছে এটি একটি গর্বের বিষয়। কৃষি বিভাগ থেকে ওই খেজুর বাগান পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মরুর এ খেজুর দেশের চাহিদা মিটাতে ভূমিকা রাখবে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, প্রবাসী জাকির হোসেন মরুর খেজুর ফুলবাড়ীর মাটিতে ফলিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তার উৎপাদিত খেজুর ও খেজুর চারা বাজারজাত করণের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
০২ জুন, ২০২৪

নজর এখন রূপালী ব্যাংকে, নেতৃত্বের শক্তিতে দুর্দান্ত সাফল্য
খেলাপি আদায়ে দৃষ্টিনন্দন অঙ্ক। নতুন অ্যাকাউন্টের হিড়িক। শাখায় স্বনামধন্য করপোরেট গ্রাহকদের আনাগোনা। গত দুই বছরে এসবই ঘটেছে রূপালী ব্যাংকে। ঝানু ব্যাংকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে আর্থিক খাতে নিজেদের পেশি দেখাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। রূপালী ব্যাংকের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সরকারপ্রধানের দূরদর্শিতার সুফল পাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।  খেলাপি ঋণ আদায় থেকে মুনাফা- সর্বত্র ‘ম্যাজিক্যাল ফিগার’। এক বছরে সাড়ে ৫শ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের ঘটনা ঈর্ষণীয় ও অনুকরণীয় অবস্থানে নিয়েছে ব্যাংকটিকে। অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ থেকে চলতি বছরে ৪০ কোটি টাকা আদায় এখন ব্যাংক খাতে চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এক বছরে ৮ লাখ নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে রেকর্ড সৃষ্টির মাধ্যমে তাক লাগিয়েছে রূপালী। এসবের ফলে ২০২৩ সালে ৭শ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন সামনে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে ২০২২ সালে রূপালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১শ কোটি টাকা।  বড় আশার বিষয়, দুর্দান্ত গতিশীলতার মাঝেও ভারসাম্য রক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে রূপালী ব্যাংকের নেতৃত্ব। যে কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও গত দুই বছরে বিতরণকৃত কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েনি।  রূপালী ব্যাংকের নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের নিষ্ঠাশীল আনুগত্য ও ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আকাশচুম্বী আস্থার প্রমাণ পাওয়া যায় গত এক বছরে ব্যাংকটির নতুন হিসেব খোলার সংখ্যা বিশ্লেষণে। যেখানে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫১ বছরে ব্যাংকটির সক্রিয় অ্যাকাউন্ট ছিল ২২ লাখ, সেখানে এক বছরেই নতুন অ্যাকাউন্ট যুক্ত হয়েছে ৮ লাখ। বর্তমানে ৩০ লাখ গ্রাহকের রূপালী ব্যাংক জাতীয় সঞ্চয়ের বড় অংশীদারে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে ব্যাংকটির আমানত। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে লোকসানি শাখা নেই বললেই চলে। মাত্র ৭টি লোকসানি শাখা রয়েছে বর্তমানে যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন।  সম্প্রতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকের ইপিএস সমন্বিতভাবে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৬১ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৫ পয়সা হয়েছে এবং এককভাবে তিন গুণের বেশি বেড়ে ৪৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ১৭ পয়সা হয়েছে। পাশাপাশি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ২৭ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা ৩২ পয়সা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৮৯ পয়সায়।  এক সময়ে পিছিয়ে পড়া ব্যাংকটির বর্তমান অগ্রগতির কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মাঠ পর্যায় থেকে প্রধান কার্যালয়- ৩৪ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। ১৯৯০ সালে ব্যাংকটিতে অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
২৭ মে, ২০২৪

শক্তিশালী ব্যালেন্স শিট প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের
চ্যালেঞ্জিং বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিত কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংকটির সমন্বিত আর্থিক হিসাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৮২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৬১৪ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৩০ কোটি টাকায়। বাজার অস্থিরতা সত্ত্বেও আমানতে ৩৪ শতাংশ এবং ঋণে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালেন্স শিটে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংকের সমন্বিত কর-পরবর্তী মুনাফা ৯১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩১৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত ১৩ মে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকটির ২০২৩ আর্থিক বছর এবং ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসের আার্থিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এই ইভেন্টটি ব্যাংকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ব্যাংকটির স্থানীয় ও বিদেশি স্টেকহোল্ডার, বিনিয়োগ-বিশ্লেষক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর এফ হোসেন এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাংকটির আর্থিক ফলাফল, উল্লেখযোগ্য অর্জন, শক্তিশালী অবস্থান এবং ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কৌশল তুলে ধরেন। ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ শেষে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ২০২৩ সালে ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ- • সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০২২ সালের ৩ দশমিক ৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৭৩ টাকায় উন্নীত হয়েছে। • ২০২৩ সালে ব্যাংকের সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) শেয়ারপ্রতি ৪১ দশমিক ৩৬ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৮ দশমিক ০৩ টাকা ছিল। • ২০২৩ সালে ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন দেশের ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজ ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। • ২০২৩ সালে ব্যাংকের আমানত ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে দেশের ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজ ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।  • সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ এ উন্নীত হয়েছে।  • ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি, অধিক ইন্টারেস্ট আয়, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং অধিক নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাংকের মোট সমন্বিত আয় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  • কর্মীদের বেতন, অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এবং প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হিসেবে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ফলে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাংকের সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  • ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা ২০২২ সালের ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়েছে। এটি মূলত ব্যাংকের কার্যকর নন-পারফর্মিং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারি কৌশলকে নির্দেশ করে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ- • সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের ০ দশমিক ৮৯ টাকার তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ১ দশমিক ৭০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। • গত ৩১ মার্চ এ ব্যাংকের সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) শেয়ারপ্রতি ৪২ দশমিক ৯৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪১ দশমিক ৩৬ টাকা। • ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) আমানত ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি-কৌশল এবং গ্রাহক আস্থার প্রতিফলন। • সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ এ উন্নীত হয়েছে।   • বিনিয়োগ, নন-ফান্ডেড আয় এবং ইন্টারেস্ট আয় বাড়ায় ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্যাংকের মোট সমন্বিত আয় ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। • নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) হার হ্রাসে ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে থাকা নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশতে উন্নীত হয়েছে।    ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘মধ্যমেয়াদি কৌশল অনুসরণ করার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমানত ও ঋণে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি দেশের বিদ্যমান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাভারেজের চেয়ে অনেক ভালো। এটি ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা এবং ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতার প্রমাণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বিশেষায়িত প্রোডাক্টের মাধ্যমে গত বছর আমাদের ব্যাংক গ্রাহক সেবা এবং কাস্টমার প্রপোজিশনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের ব্যবসায় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করপোরেট গভর্ন্যান্স, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের রোল মডেল হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক সব স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্বীকৃতি। আমরা আমাদের চেয়ারপারসন এবং পরিচালনা পর্ষদকে তাদের পরামর্শের জন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য এবং আমাদের গ্রাহকদের ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি অবিচল আস্থার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
২০ মে, ২০২৪

অদম্য / বাবা হারানোর শোক পেরিয়ে সাফল্য মেমেসিংয়ের
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে অংশ নেওয়া সেই মেমেসিং মারমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। গতকাল রোববার এসএসসি সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জানা যায়, মেমেসিং মারমা জিপিএ ৩.০৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুকিমারা এলাকার বাসিন্দা। জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তার বাবা উপেচিং মারমার আকস্মিক মৃত্যু হয়। সেদিন মেমেসিং তার বাবার মরদেহ ঘরে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ওই ঘটনার ছবি ও সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সুবিমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, মেমেসিং মারমা যে পরিস্থিতিতে এসএসসিতে অংশ নিয়েছিল আসলেই বিষয়টি ছিল অনেক কষ্টের। বিশেষ করে বাবার মরদেহ ঘরে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এটি ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। তাই সে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, এতে সে অনেক ভালো ফলাফল করেছে। হয়তো এমন একটি দুর্ঘটনা না ঘটলে সে আরও ভালো ফলাফল করতে পারত। এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মেমেসিং মারমার এ ফলাফলে আমরাও অনেক আনন্দিত। সে ভবিষ্যতে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবে এবং আরও ভালো ফলাফল করবে বলে আমরা আশাবাদী। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে কোনো সহযোগিতায় আমরা তার পাশে থাকব।
১৪ মে, ২০২৪

বহুমুখী শিক্ষায় সীমাখালী ইসলামিয়া আইডিয়ালের ঈর্ষণীয় সাফল্য
বহুমুখী শিক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে সীমাখালী ইসলামিয়া আইডিয়াল একাডেমী। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা ও হিফজের ব্যবস্থাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এ বছর দাখিল পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন গোল্ডেনসহ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬ জন। জানা গেছে, এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন হাফেজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ মাসে হেফজ শেষ করেছেন হাফেজ রাকিব বিশ্বাস।  মাদ্রাসার অভিভাবক মাওলানা মফিজুর রহমান জানান, সন্তানরা হেফজ পড়তে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় পিছিয়ে পড়েন। ফলে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক সময় ভর্তি হওয়ার মতো ‍সুযোগ থাকলেও বয়সের কারণে সেটি আর হয়ে ওঠে না। সেই দিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি অনন্য।  আরেক অভিভাবক জানান, সন্তানদের কোরআন পড়া শেখানোর পাশাপাশি জেনারেল ক্লাসগুলোও শেষ করার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বয়সের গ্যাপ ছাড়াই সন্তানরা স্বাভাবিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন।  প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রতি বছর দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এ সময়ের মধ্যে ১০ পারা হিফজ সমাপ্ত করে থাকেন। আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিফজের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মাদ্রাসায় শিক্ষার পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে হুফ্ফাজুল কোরআন প্রতিযোগিতায়ও সাফল্যে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।  প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ২০১৭ সালে যাত্রার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সাফল্য পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের পরিশ্রম আর ছাত্রদের অধ্যাবসায়ের ফলে এটি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আজকের এ সাফল্যে ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকসহ সবাই অত্যন্ত আনন্দিত।  তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর বোর্ড পরীক্ষায় মাগুরা জেলার শীর্ষস্থানীয় অবস্থান ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত কোরআনের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেই চিন্তা থেকে এমন বহুমুখী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।  
১২ মে, ২০২৪

কুবি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকদের অনন্য সাফল্য
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের বরেন্দ্রভূমির প্রবেশদ্বার ও বসতি আবিষ্কার করে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকরা। শনিবার (১১ মে) গবেষণালব্ধ ফলাফল রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন তারা। তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমোস্তাপুর উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র রোহনপুরে এ গবেষণার পরিচালনা করেন তারা। গবেষণা দলের সদস্যরা হলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক  ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খান, সহকারী অধ্যাপক মো. নিয়ামুল হুদা, সহকারী অধ্যাপক শারমিন রেজোয়ানা, সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ এবং সান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা নাজনীন ও রোহনপুর গ্রামের ঐতিহ্য সংগ্রাহক মাহির ইয়াসির। উপস্থাপনের সময় তারা ওই স্থান থেকে প্রাপ্ত হাজার বছরের পুরোনো ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা, ছাঁচে ঢালা তাম্রমুদ্রা, উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, নানা আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন নানা প্রত্ন বস্তু প্রদর্শন করা হয়। এসব প্রত্নসামগ্রীর বেশিরভাগ পাওয়া গেছে মুদ্রা ও প্রত্নবস্তু সংগ্রাহক মাহির ইয়াসিরের সংগ্রহশালা থেকে। গবেষকদলের দাবি, রোহনপুর অঞ্চলে প্রত্ন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু ও এ অঞ্চলের বস্তু বিশ্লেষণ, বসতি বিন্যাস বিশ্লেষণ, স্থাপত্যবিদ্যার ‘টেকসই অঞ্চল পরিকল্পনার’ আলোকে স্থানিক বিশ্লেষণ, অতীত পানি ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ, এর উপরিভাগের ভূতত্ত্ব, মাটির ধরন, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পানির উৎস পর্যবেক্ষণ, ১৯৬০ এর দশকের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। গবেষকরা বলছেন, প্রাচীন সময়ে রোহনপুর ছিল উঁচু বরেন্দ্র এলাকার প্রবেশপথ। রোহনপুর অঞ্চলটি পুনর্ভবা ও মহানন্দা নদীর মাঝখানে এবং গঙ্গা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলা অঞ্চলে প্রথম দিককার বসতি এলাকার মধ্যে এই অঞ্চল ছিল অন্যতম। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এলাকায় একই সময় বসতি গড়ে উঠেছিল। বসতির পাশাপাশি সেখানে পানি সংরক্ষণাগার ও খাল তৈরির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। বরেন্দ্রভূমি হিসেবে চিহ্নিত ওই এলাকার একাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অংশে পড়েছে। পুণ্ড্র রাজ্য ছিল রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ কানিংহামের মতে, ওই এলাকায় প্রাচীন স্থায়ী বসতির নিদর্শন ছিল। বরেন্দ্র এলাকার পূর্ব দিকে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর বা মহাস্থানের অবস্থান। রহনপুরের সঙ্গে মহাস্থানগড়ের জল যোগাযোগ ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, একসময় পদ্মা নদী বর্তমান মহানন্দা ও তিস্তা হয়ে বয়ে যেত। বরেন্দ্র ভূমি আরও উঁচু হয়ে যাওয়ায় পদ্মা সেখান থেকে সরে যায়। পূর্ব ও মধ্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বর্তমান রহনপুর ব্যবহৃত হতো বাণিজ্য ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথ হিসেবে ওই এলাকাটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, রহনপুরের ওই এলাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে আদি ঐতিহাসিক কালপর্বে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের বিভিন্ন স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, নানা আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন নানা প্রত্নবস্তুর ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে আমরা বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি। ভবিষ্যতে রোহনপুরে পরিকল্পিত খনন চালালে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং গবেষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় একজন শিক্ষক সেখানে সম্প্রতি বেলে লাল পাথরের একটি মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন, যা খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। আজ গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় রোহনপুর দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তাই রোহনপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রত্ন নিদর্শনগুলো দ্রুতই সংরক্ষণ করতে হবে।
১২ মে, ২০২৪
X